আফগানিস্তানকে অসম্ভব সমীকরণের মুখে ফেলে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া
রশিদ খান হাসছেন! আনন্দে নয়, সেটি ছিল অবিশ্বাসের হাসি। এই সহজ ক্যাচও তিনি ছাড়তে পারলেন! যেন নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না। তা–ও যেনতেন কারও নয়, মিড অনে রশিদের হাত থেকে পড়েছে ট্রাভিস হেডের ক্যাচ। মানে, পরিণাম ভয়ংকর।
হয়েছেও সেটাই। পেসার ফজলহক ফারুকির করা পরের বলটিতেই হেড মেরেছেন ছক্কা। ৬ রানে জীবন পাওয়া হেড ৩৪ বলে করেছেন ফিফটি। তাঁর ঝড়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতেই অস্ট্রেলিয়া করেছে ৯০ রান, যা টুর্নামেন্টের ইতিহাসেই সর্বোচ্চ।
২৭৪ রানের লক্ষ্য এমন শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ১২.৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১ উইকেটে ১০৯ রান তুলে সেই পথেই ছিল। তবে সেই সময়ই নামা বৃষ্টি পরে আর ম্যাচের বাকিটা হতেই দেয়নি।
দুই দলকে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়। তাতে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার কোনো ক্ষতি হয়নি। ৪ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সবার আগে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে স্মিথের দলই।
কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা হেরে গেলে তখন আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্ট হবে সমান ৩। তবে রান রেটে দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে বেশ পিছিয়ে থাকায় রশিদরাই হয়তো বাদ পড়ে যাবেন।আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে যেতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাল কমপক্ষে ২০৭ রানে হারতে হবে, যা প্রায় অসম্ভবই বলা যায়।
অথচ লাহোরে আজকের ম্যাচটা ছিল আফগানদের জন্য প্রতিশোধের মঞ্চ। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতার বড় সম্ভাবনা জাগিয়েও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক ইনিংসের কাছে হেরে গিয়েছিল আফগানিস্তান।
ধূলিসাৎ হয়েছিল সেমিফাইনালের স্বপ্ন। এবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যেতে পারলে সেই আক্ষেপ কমত আফগানিস্তানের। তবে সেটি যদি শেষ পর্যন্ত না হয়, তাহলে ফিল্ডারদের সঙ্গে আফগান ব্যাটসম্যানদেরও দায় নিতে হবে। দারুণ শুরুর পরও যে বড় স্কোর গড়তে পারেননি আফগান ব্যাটসম্যানরা।
দলীয় ৩ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ফিরলেও সেদিকউল্লাহ আতালের ব্যাটিংয়ে প্রথম ৩০ ওভারে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল আফগানদের হাতেই। ৯৫ বলে ৮৫ রান করে বাঁহাতি আতাল যখন ফেরেন, আফগানিস্তানের রান ৩১.২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৯।
মানে হাশমতউল্লাহ, মোহাম্মদ নবীদের জন্য মঞ্চটা তিনি প্রস্তুত করেই গিয়েছিলেন। তবে সেই মঞ্চে পারফর্ম করতে পারেননি বাকিরা। আতাল ফেরার ১৭ রান পরেই ফেরেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ। আফগান অধিনায়ক ৪৯ বলে করেন মাত্র ২০ রান।
এরপর নবী ও গুলবদিন নাইব দ্রুত ফিরলে ১৯৯ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানিস্তান। মানে ৩০০ রান তোলার সম্ভাবনা অনেকটা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এরপরও আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও রশিদের ৩৬ রানের জুটি ও নূর আহমেদের সঙ্গে ওমরজাইয়ের ৩৭ রানের জুটিতে ২৭৩ রান তোলে আফগানরা। শেষ ওভারে আউটের আগে করেন ওমরজাই করেন ৬৩ বলে ৬৭ রান।
আফগানদের এই স্কোরে ‘অবদান’ আছে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদেরও। ১৭টি ওয়াইডসহ তাঁরা দিয়েছেন অতিরিক্ত ৩৭ রান, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এক ম্যাচে যা তাঁদের সর্বোচ্চ। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এক ইনিংসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ অতিরিক্ত রান দেওয়ার রেকর্ড।