মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাইজুল–কামিন্সদের টপকে গেলেন বুমরা
মেলবোর্ন টেস্টে আগের দিন ৪ উইকেট পেয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। আজ পঞ্চম ও শেষ দিনের দ্বিতীয় ওভারেই নাথান লায়নকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ২৩৪ রানে অলআউট করার পাশাপাশি ৫ উইকেটও পেয়ে যান ভারতের এই পেসার।
বুমরা এর মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৩তমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন। গত ৬ বছরের মধ্যে ছেলেদের টেস্টে আর কোনো বোলার বুমরার চেয়ে বেশিসংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিতে পারেননি। তবে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার পথে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে বুমরাকে। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করতে হয়েছে তাঁকে।
গত ৬ বছর বলতে আসলে টেস্টে বুমরার অভিষেক থেকেও বলা যায়। ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে বুমরার অভিষেক। তারপর এ সময়ে টেস্টে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার দৌড়ে মেলবোর্ন টেস্ট দিয়ে বেশ কয়েকজন বোলারকে পেছনে ফেললেন বুমরা। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের আগপর্যন্ত এই ৬ বছরে ইনিংসে সমান ১২ বার করে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন নাথান লায়ন, প্যাট কামিন্স ও তাইজুল ইসলাম। এ সময়ে ১১ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন চলতি বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে ব্রিসবেন টেস্টে শেষে অবসর ঘোষণা করা ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অর্থাৎ টেস্টে এই ছয় বছরে বুমরাই সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নিয়েছেন।
বুমরা এই পথে পেছনেও ফেলেছেন টেস্ট ইতিহাসের দারুণ কিছু বোলারকে। পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতার তাঁর ৪৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৮২ ইনিংসে বোলিং করে ১২ বার ৫ উইকেট নেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ৪৪ টেস্টে ৮৫ ইনিংসে বোলিং করে ৫ উইকেট পেয়েছেন ১২ বার। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি পেসার রে লিন্ডওয়াল ৬১ টেস্টে ১১৩ ইনিংসে বোলিং করে ১২ বার ৫ উইকেট পেয়েছেন। সে তুলনায় বুমরা ৪৪ টেস্টে ৮৫ ইনিংসেই তাঁদের টপকে গেলেন।
বুমরা এই ৬ বছরে যাঁদের পেছনে ফেলেছেন, তাঁদের মধ্যে সবার আগে টেস্ট অভিষেক অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার লায়নের। ২০১১ সালের আগস্টে গল টেস্টে। কামিন্সের টেস্ট অভিষেক সে বছরই নভেম্বরে জোহানেসবার্গে। মেলবোর্নে লায়ন ক্যারিয়ারের ১৩৩তম এবং কামিন্স ৬৬তম টেস্ট খেলছেন। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের টেস্ট অভিষেক ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কিংস্টনে। টেস্ট খেলেছেন ৫১টি। বাংলাদেশ দলে সাকিব আল হাসানের মতো বাঁহাতি স্পিন–অলরাউন্ডার থাকায় এ সময়ে টেস্টে সব সময় বিবেচনায় আসতেও পারেননি তাইজুল। নইলে তাঁর টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা যেমন আরও বাড়ত, তেমনি উইকেটও।
ছয় বছরের এই টেস্ট ক্যারিয়ারে মেলবোর্ন টেস্টেই বুমরা সবচেয়ে বেশি ওভার বোলিং করলেন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট ৫৩.২ ওভার বোলিং করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এক টেস্টে এর আগে বুমরা সর্বোচ্চ ওভার বোলিং করেছিলেন তাঁর অভিষেকের বছর—২০১৮ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৫৩ ওভার।
চলতি বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে বুমরা এ পর্যন্ত চার টেস্টে ৩০ উইকেট নিয়েও শীর্ষে। বুমরার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারী দেশের কোনো বোলারের এক টেস্টে অন্তত ৩০ উইকেট নেওয়ার নজির তিন দশকের বেশি সময় আগে। ১৯৯২–৯৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে এক টেস্ট সিরিজে ৩৩ উইকেট নিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান পেস কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোস।
ভারতের বোলারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একটি টেস্ট সিরিজে অন্তত ৩০ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার বুমরা। এর আগে ১৯৬৭–৬৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে এক সিরিজে ৩১ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের প্রয়াত সাবেক স্পিনার বিষেণ সিং বেদি। অর্থাৎ ভারতের প্রথম পেসার হিসেবেও অস্ট্রেলিয়া সফরে এক সিরিজে অন্তত ৩০ উইকেট নিলেন বুমরা। তবে উইকেটসংখ্যা আরও বাড়াই স্বাভাবিক। চলতি সিরিজে এখনো সিডনিতে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট বাকি।
টেস্টে চলতি বছর সর্বোচ্চ উইকেটও নিশ্চিত হয়েছে বুমরার। এ বছর ১৩ টেস্টে সর্বোচ্চ ৭১ উইকেট নিলেন। ১১ টেস্টে ৫২ উইকেট নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ডের পেসার গাস অ্যাটকিনসন। মেলবোর্নেই চলতি বছরের শেষ টেস্ট বুমরার। অস্ট্রেলিয়াকে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানে অলআউট করার পর জয়ের জন্য ৩৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছে ভারত। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১১৯। ৬৮ রানে ব্যাট করছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল, ৩০ রানে পন্ত।