বিশ্বকাপে হারের কারণ হিসেবে যে নিয়মের প্রভাব দেখেন না রাবাদা
একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য একটি নিয়ম মানতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকদের। গত জুনে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেই নিয়ম মানা হয়নি। তাই প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল থেকে ক্রিকেট দলের অনেক সমালোচনা হয়েছে।
তবে সফলতা পাওয়ায় অনেকে এই নিয়ম নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। এমন পরিস্থিতিতে এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান পেসার কাগিসো রাবাদা নিয়মটির পক্ষেই কথা বলেছেন।
এই নিয়ম অনুসারে প্রোটিয়া দলে থাকতে হবে ছয়জন মিশ্র বর্ণের ক্রিকেটার, যার মধ্যে দুজনকে হতে হবে কৃষ্ণাঙ্গ। বাকি পাঁচ ক্রিকেটার হবেন শ্বেতাঙ্গ। নিয়মটি প্রতি ম্যাচে নির্বাচকেরা মানতে বাধ্য থাকবেন না। হিসাবটি হবে প্রতি মৌসুম শেষে। অর্থাৎ কোনো ম্যাচে যদি লক্ষ্য পূরণ করা না যায়, তাহলে অন্য ম্যাচে সেটা পুষিয়ে দেওয়া যাবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে মিশ্র বর্ণের ক্রিকেটার ছিলেন ছয়জন—কাগিসো রাবাদা, রিজা হেনড্রিকস, বিয়র্ন ফোরটুইন, কেশব মহারাজ, তাব্রেইজ শামসি, ওটনিল বার্টম্যান। তাদের মধ্যে রাবাদাই শুধু কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান। রিজার্ভ হিসেবে ছিলেন আরেক কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান লুঙ্গি এনগিডি। অর্থাৎ একাদশে দুই কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান খেলার সুযোগ ছিল না। আবার রাবাদা একাদশ থেকে বাদ পড়লে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান ছাড়াই খেলতে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
সে কারণেই ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা (সিএসএ) গত সপ্তাহে তিন দিনব্যাপী বৈচিত্র্যতা, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) বিষয়ক কনফারেন্সের আয়োজন করে। এর মূল্য উদ্দেশ্য ছিল ঘরের মাঠে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে কীভাবে নিয়ম অনুযায়ী কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্র বর্ণের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়, তার রোডম্যাপ ঠিক করা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মাঠে নামার আগে ত্রিনিদাদে রাবাদা এ নিয়ে নিজের মতামত বিস্তারিতভাবে জানিয়ে বলেছেন, ‘এটা একটা স্বতন্ত্র নিয়ম। আমাদের দেশটা যেখানে অবস্থিত, সেখান অনেক মানুষের এটা নিয়ে ভিন্ন মতামত আছে। এই প্রক্রিয়া বোঝাও খুব সহজ নয়, এটা থেকে সামনে এগোনোও সহজ নয়। প্রসঙ্গ বিবেচনায় রেখে বিষয়টি বুঝতে হবে।’
নিয়মটি মানতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা কি বিশ্বকাপ জিততে পারেনি—এমন প্রশ্ন ছুড়েছেন রাবাদা, ‘নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন তো, কী এমন কারণ থাকতে পারে যাতে একজন খেলোয়াড় ভাবতে পারেন, বর্ণের কারণে সে দলের সঙ্গে আছেন। এটা একটা কারণ হতো, যদি আমরা রূপান্তর প্রক্রিয়ার কারণে হারতাম কিংবা মিশ্র বর্ণের বা কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াতেই কাউকে দলে নেওয়া হতো। এই আলোচনাটা সব সময় বিশ্বকাপেই হয়। যখন আমরা কোনো সিরিজ জিতি বা হারি, তখন এটা কোনো ইস্যু না। সুতরাং এটা কিছুটা অধারাবাহিক আলোচনা। যদি পেছনে তাকিয়ে নিজেকে সত্যি সত্যিই প্রশ্ন করেন, এমন কী কখনো হয়েছে যে এই রূপান্তর প্রক্রিয়ার কারণে আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারিনি? আসলে মাঝেমধ্যে এটাকে খুব বড় করে দেখানো হয়।’
এবারের বিশ্বকাপে রাবাদা একাই দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিনিধি হওয়ায় এ নিয়ে বাড়তি চাপ কাজ করেছে কি না—সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমি কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়। আমার মেধার ভিত্তিতেই দলে থাকা উচিত, এটা যদি আমি মনে না করি এবং মানুষ যদি এভাবে না ভাবে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু আমিও তো অপরাজেয় নই। আমিও দল থেকে বাদ পড়তে পারি, কিন্তু আমার নিজের প্রতি বিশ্বাস আছে। আমার ওপর এটা কোনো চাপই তৈরি করেনি। বিশ্বকাপ দলে আপনি একাই কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় এটা নিয়ে বিশ্বকাপের সময় ভাবলে, সেটা ভারী চিন্তাভাবনাই হতো। এটা আমার জন্য নির্যাতনের মতো মনে হতো। মনোযোগ সরিয়ে দিত।’
রাবাদার চিন্তায় ছিল শুধু বিশ্বকাপ জয়, ‘আমার কাছে ভাবনাটা শুধু বিশ্বকাপ জেতার। অন্য খেলোয়াড়েরা কী ভাবে জানি না। মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে কী বলছে, সেটাও খেলোয়াড়দের মানসিকতা নষ্ট করতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে এটার সমাধান করতে হবে। কারণ, আমাদের এখানে স্বতন্ত্র পরিস্থিতি আছে। আর পুরো রূপান্তর প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিশ্বকাপ এলেই কেন যেন আলোচনা হয়।’ গত ২৯ জুন অনুষ্ঠিত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের কাছে ৭ রানে হারে দক্ষিণ আফ্রিকা।