একা নিগারের লড়াই, বড় হারে ভারত সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
প্রতিপক্ষ বদলাল, বদলাল ভেন্যু। শুধু বদলাল না বাংলাদেশের ব্যাটিংটাই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তিন ম্যাচের মতো সিলেটে ভারতের বিপক্ষে ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতেও সামনে এসেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং-ব্যর্থতা।
ভারতের দেওয়া ১৪৬ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেমেছে ১০১ রানেই। অধিনায়ক নিগার সুলতানা করেছেন ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে একমাত্র ফিফটি, কিন্তু তাঁর লড়াই হয়ে থেকেছে শুধু সান্ত্বনা হয়েই। ভারত বোলাররা আঁটসাঁট ছিলেন, তবে খেলা যাবে না--এমন কঠিন কিছু করেননি। অবশ্য লক্ষ্যটা সহজ ছিল না, এর আগে মাত্র একবারই এত রান তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেটের ধরন, ইনিংসের শেষ দিকের বোলিং পারফরম্যান্সেও ঠিক উজ্জীবিত হতে পারেননি ব্যাটাররা।
টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং-সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত কার্যকর টপ অর্ডার। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতের বিপক্ষেও ব্যর্থ সেটি। দিলারা আক্তার, মুর্শিদা খাতুনের সঙ্গে এ ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা সোবহানা মোস্তারি—শুরুর তিন ব্যাটার মিলে ২৯ বল খেলে করেছেন মাত্র ২৩ রান। তৃতীয় বলে রেনুকা সিংয়ের বলে এলবিডব্লু হন দিলারা, বাংলাদেশের ধসের শুরু তাতেই।
৬.১ ওভারের মধ্যে ৩০ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকেরা। ফ্লাডলাইটের ওপারে লাক্কাতুরার নিকষ আঁধারে যেন পথ হারিয়েছে তারা। ১৯তম ওভারে ৪৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার, কিন্তু তখনো বাংলাদেশের দলীয় স্কোর ১০০-ই ছোঁয়নি। পূজা বস্ত্রকরকে আড়াআড়ি খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ তিনি বোল্ড হন ৪৮ বলে ৫১ রান করে। স্বর্ণা, রাবেয়া, নাহিদারা অধিনায়ককে একটু সঙ্গ দিয়েছেন, তবে দেশের তাপমাত্রার মতো প্রয়োজনীয় রানরেট বেড়েছে শুধু। সেটি আর ছোঁয়া হয়নি তাদের।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ভারত মাঝের ওভারগুলোতে দাপট দেখালেও এর আগে-পরে বাংলাদেশ বোলাররা তাদের আটকে রাখেন ভালোই। পাওয়ার প্লেতে ভারত তোলে ১ উইকেটে ৩৯ রান, তবে উইকেটের সংখ্যা বদলাতে পারত সহজেই। দ্বিতীয় ওভারে সুলতানা খাতুনের বলে কাভারে স্মৃতি মান্ধানার সহজ ক্যাচ ফেলেন ফারিহা ইসলাম, ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে সুলতানা লং অনে ফেলেন মারুফা আক্তারের বলে শেফালি বর্মার ক্যাচ।
জীবন পেয়ে স্মৃতি যোগ করেন ৮ রান—ক্যাচ মিসের পরই ইনসাইড আউটে চারের পর স্কয়ার লেগ দিয়ে মারেন আরেকটি। অবশ্য স্মৃতি আউট হন ফারিহার বলেই, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে। শেফালি থামেন নবম ওভারে, রাবেয়ার বলে লিডিং এজে ক্যাচ দিয়ে।
শেফালি আউট হওয়ার আগে যস্তিকা ভাটিয়ার সঙ্গে ৩১ বলে যোগ করেন ৪৩ রান। মাঝের ওভারগুলোতে ভারতকে টানা ওই জুটির পর যস্তিকার সঙ্গে অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের ৩৩ বলে ৪৫ রানের আরেকটি জুটি হয়। দুজন ফেরেন ২ রানের মধ্যে—ফাহিমার বলে এলবিডব্লু হন ২২ বলে ৩০ রান করা হারমানপ্রীত, পরের ওভারে আরেক লেগ স্পিনার রাবেয়ার বলে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ২৯ বলে ৩৬ রান করা যস্তিকা।
রিচা ঘোষ ও অভিষিক্ত সাজানা সজীবনের জুটিতে অবশ্য সে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা ছিল। রাবেয়ার বলে ফারিহার দুর্দান্ত ক্যাচে সেটি থামে আগেভাগেই। কাভারের সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন ফারিহা, শুরুতে ক্যাচ ফেলার দায়মোচনও করেন তাতে একটু হলেও।
হারমানপ্রীত ও যস্তিকার জুটির সময় ভারতের নাগালে ছিল ১৬০-১৭০ রানও। শেষ পর্যন্ত সেটি না হলেও অন্তত ১৫০ রানের দিকে ভারত ছুটছিল রিচা ঘোষের ইনিংসে। কিন্তু শেষ ৩ বলের মধ্যে রিচা ও পূজা বস্ত্রকরের উইকেট নিয়ে ভারতকে ১৪৫ রানে আটকে ফেলতে সহায়তা করেন মারুফা। ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন এ পেসার। দিনে বাংলাদেশের সেরা বোলার অবশ্য রাবেয়া, ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন এই লেগ স্পিনার। বোলাররা অতিরিক্ত কোনো রান দেননি। এ নিয়ে চতুর্থবার ২০ ওভার বোলিং করেও কোনো অতিরিক্ত রান দেয়নি বাংলাদেশ।
কিন্তু অমন ‘ডিসিপ্লিনড’ বোলিংয়েও শেষ পর্যন্ত কিছু যায় আসেনি ম্যাচের ফলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৪৫/৭ (যস্তিকা ৩৬, শেফালি ৩১, হারমানপ্রীত ৩০, রিচা ২৩; রাবেয়া ৩/২৩, মারুফা ২/১৩, ফারিহা ১/২৩)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০১/৮ (নিগার ৫১, মুর্শিদা ১৩, স্বর্ণা ১১; রেনুকা ৩/১৮, দীপ্তি ১/১৫, রাধা ১/১৯)
ফল: ভারত ৪৪ রানে জয়ী