পরপর দুই ম্যাচে সূর্যকুমারের গোল্ডেন ডাক, গাভাস্কার যা বললেন
মিচেল স্টার্কের গুড লেন্থে পড়া ডেলিভারিটি ইন-সুইং করে ঢুকল ভেতরে। সূর্যকুমার যাদব অন-সাইডে খেলতে চাইলেও বল-ব্যাটে নিতে পারলেন না। প্যাডে আঘাত হানার পর এলবিডব্লিউর আবেদন পেতেই আঙুল তুললেন আম্পায়ার।
দৃশ্যটা ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে সিরিজের। কোন ম্যাচ-সেটি আলাদা করে না বললেও চলে। প্রথম আর দ্বিতীয়-দুটি ওয়ানডেতে একই বোলারের বলে একইভাবে আউট হয়েছেন সূর্যকুমার। দুটিই আবার ম্যাচে নিজের প্রথম বলে—গোল্ডেন ডাক!
সূর্যকুমারের জোড়া গোল্ডেন ডাকে প্রশ্ন উঠে গেছে ভারতীয় ক্রিকেট মহলে, সূর্যের তাপ কি তবে কমে গেল?
এখনো টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান তিনি। বিশ ওভার ক্রিকেটের সাফল্যে চড়ে জায়গা পেয়েছেন ওয়ানডেতে। এমনকি গত মাসে অভিষেক হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটেও। কিন্তু টি-টোয়েন্টির সেই দুরন্ত ছন্দ কি পঞ্চাশ ওভার ক্রিকেটে টেনে আনতে পেরেছেন?
সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর ১৬ ম্যাচ পার হয়ে গেছে, সূর্যকুমারের ব্যাটে ফিফটি নেই। এ সময়ে ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস মাত্র দুটি, সর্বোচ্চ ৩৪*।
৩২ বছর বয়সী সূর্যকুমার একাদশে জায়গা পাচ্ছেন মূলত শ্রেয়াস আয়ারের চোটের কারণে। পিঠের চোটে ভোগা আয়ার কবে ফিরবেন, তা-ও নিশ্চিত নয়।
আজ বিশাখাপট্টমে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মাও নিশ্চিত করলেন সূর্যকুমারের সুযোগের কারণ, ‘আমরা জানি না আয়ার কবে ফিরবে। সে না থাকায় সূর্যকুমারের খেলার জায়গা আছে। সাদা বল ক্রিকেটে সে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখিয়েছে। সে নিজেও জানে কিছুটা লম্বা দৈর্ঘ্যের ম্যাচে তাঁকে ভালো করতে হবে।’
সূর্যকুমারের টি-টোয়েন্টি অভিষেক ২০২১ সালের মার্চে, একই বছরের জুলাইয়ে ওয়ানডেতে। দুই সংস্করণেরই শুরুটা ছিল সম্ভাবনাময়। তবে ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। যেকোনো মাঠে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সাবলীল টি-টোয়েন্টিসুলভ ব্যাটিংয়ে রান পেয়েছেন নিয়মিত।
উদ্ভাবনীমূলক শট আর অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেট ধরে রাখার সুবাদে পেয়েছেন নতুন ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান’ তকমাও। ধারণা করা হয়েছিল ওয়ানডেতেও নতুন ধারা যোগ করবেন সূর্য। ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর বলে তাঁর ছন্দে থাকা দলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু টি-টোয়েন্টির সূর্যের তাপ ওয়ানডেতে পাওয়া যাচ্ছে না একদমই। ২০২৩ সালে মোট ১২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে ৫ টি-টোয়েন্টিতে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিসহ রান তুলেছেন ২৬০। বিপরীতে এক টেস্ট ইনিংসে ৮, আর ৫ ওয়ানডে ইনিংসে রান মোটে ৪৯। যার শেষ দুটি আবার গোল্ডেন ডাক।
দেখা যাচ্ছে সংস্করণ যত দীর্ঘ, সূর্যকুমারের ব্যাটের তাপও তত কম। ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের মতে, সূর্যের স্টান্সই এ ক্ষেত্রে মূল কারণ।
আজ ভারতের ইনিংসের পর সূর্যকুমারের ভিন্ন সংস্করণের ব্যাটিং বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘ওর টেকনিকে সমস্যা। সূর্যের স্টান্স খোলামেলা। এটা টি-টোয়েন্টির জন্য ভালো। কারণ, যেকোনো ওভারপিচড ডেলিভারিতে সে ফ্লিক করে ছয় মারতে পারে। কিন্তু ওয়ানডেতে বল আসে পায়ের কাছে। ওর যে স্টান্স, তাতে ব্যাট আড়াআড়ি হয়ে যায়, সোজা খেলতে পারে না। আর বল যখন ভেতরে ঢোকে, তখন আরও সমস্যায় পড়ে। এখান থেকে বের হতে ব্যাটিং কোচের সঙ্গে সময় কাটানো দরকার।’