‘আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ করা যায়’

অর্শদীপের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড পারভেজ ইমন। গোয়ালিয়রে গতকাল ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং যেন ইমনের এই আউটের মতোই হতাশার প্রতিচ্ছবিএএফপি

যে সংস্করণের ম্যাচই হোক, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং মানেই যেন শুরুতে ২ উইকেট নেই। চেন্নাই, কানপুর, গোয়ালিয়র—ভেন্যু বদলেছে, সংস্করণও। কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটিং বদলায়নি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর রোববার প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে নতুন ওপেনিং জুটিকে সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ফল একই, টপ অর্ডারের সেই হতশ্রী দশা!  

বারবার একই ব্যর্থতার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে ক্রিকেটাররা দেশের মাটিতে উইকেটের দোষ দেন। কাল গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৭ উইকেটে হারের পরও বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হাসান সেই পুরোনো কথাই বললেন নতুন করে।

আমি যদি গত ১০ বছর দেখি, আমরা এ রকমই ব্যাটিং করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে হয়তো ভালো ব্যাটিং করি।
নাজমুল হোসেন, অধিনায়ক, বাংলাদেশ
ভালো করেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন নিজেও, ২৫ বলে করেছেন ২৭ রান
এএফপি

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো করার সামর্থ্য থাকলেও দক্ষতায় বিরাট ঘাটতি আছে বলে মনে করেন নাজমুল। সেই উন্নতির জন্য যে সুযোগ–সুবিধা দরকার, তা বাংলাদেশ ক্রিকেটে নেই বলেই এই অধারাবাহিকতা, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে। সামর্থ্য অবশ্যই আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে দক্ষতা উন্নতির অনেক জায়গা আছে। কিন্তু এই উন্নতি কীভাবে হবে?’ নিজের করা প্রশ্নটার উত্তর দিতে গিয়ে নাজমুলকে হতাশ মনে হয়, ‘আমি যদি গত ১০ বছর দেখি, আমরা এ রকমই ব্যাটিং করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে হয়তো ভালো ব্যাটিং করি।’

কীভাবে ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনা যায়, সেটা জানাতে গিয়ে নাজমুল পরে বলেছেন, ‘এটার জন্য আমরা ঘরের মাঠে যখন অনুশীলন করি, তখন উইকেটের পরিবর্তন…কিছু না কিছু একটা পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা যখন ঘরের মাঠে খেলি, তখন ১৪০-১৫০ রানের উইকেটই হয়। ব্যাটসম্যানরা ওই রানটা কীভাবে করতে হয়, সেটা জানে। কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ করা যায়। ওই ধরনের উইকেট অনুশীলন করলে হয়তো আমাদের আরেকটু উন্নতি হবে। তবে আমি শুধু উইকেটের দোষ দেব না। এখানে মানসিক অনেক ব্যাপার থাকে।’

আজ যেমন বাংলাদেশ দল ১৪ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে। রানের গতিও ছিল শ্লথ, প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৩৯। শুধু এই ম্যাচেই নয়, সর্বশেষ ৭ টি-টোয়েন্টি ইনিংসের পাওয়ারপ্লেও অনেকটা এমনই ছিল বাংলাদেশের। গড় রানরেট মাত্র ৬.৬৭। আগের ম্যাচগুলোর সঙ্গে আজকের পার্থক্য বাংলাদেশের ব্যাটিং ধরন। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বেশির ভাগই আউট হয়েছেন আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে। নাজমুল দলের কাছে এ মানসিকতাই দেখতে চান। তবে শট নির্বাচনে আরও পরিপক্বতা দেখতে চান।

বাংলাদেশের হয়ে ৩২ বলে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ
এএফপি
আমরা এর চেয়ে ভালো দল। আমরা অনেক দিন ধরেই এই সংস্করণে ভালো করছি না। তবে আমি মনে করি, আমরা এর চেয়ে আরও ভালো দল।
নাজমুল হোসেন, অধিনায়ক, বাংলাদেশ

তাঁর কথা, ‘শুরুতেই অনেক উইকেট পড়ে গেছে। শুরুতে বেশি উইকেট পড়ে গেলে কঠিন হয়ে যায়। আমার মনে হয় (বেশি রান না হওয়ার) প্রধান কারণ শুরুতে বেশি উইকেট পড়ে যাওয়া।’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল বলেছেন, ‘আমি যে অ্যাপ্রোচের কথা বলেছিলাম, সে জন্য ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ। শুরুটা ভালো হবে বাকিদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। যারা ওখানে ভালো খেলছে, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’ পরে এ কথাও বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে নিয়ে বলতে চাই না। আমরা সবাই মিলেই ব্যর্থ হয়েছি। আক্রমণাত্মক মানসিকতা থাকবেই, তবে কখন কোন শট খেলব, এটা বুঝতে হবে। এখনই এই অ্যাপ্রোচ বদলাতে চাই না। আমাদের এভাবে খেলে যেতে হবে, তবে ভালো শট নির্বাচন করতে হবে।’

আরও পড়ুন

ব্যাটিংটা ভালো হলে ভাগ্যও বদলাবে, এমন আশা নাজমুলের। চেহারায় হারের বিষণ্নতা লুকিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে বললেন, ‘আমরা এর চেয়ে ভালো দল। আমরা অনেক দিন ধরেই এই সংস্করণে ভালো করছি না। তবে আমি মনে করি, আমরা এর চেয়ে আরও ভালো দল।’

ম্যাচ শেষে দুই অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ও নাজমুল হোসেন
এএফপি

দিল্লিতে ৯ অক্টোবরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর কথাও বললেন, ‘ঘুরে তো দাঁড়াতেই হবে। কীভাবে আমরা কামব্যাক করতে পারি, সেটা দেখতে হবে। আমার মনে হয়, আমাদের সবারই দায়িত্ব নিতে হবে।’