২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আকরাম-ওয়াকারের উত্তরসূরি হয়ে এগোচ্ছেন ওয়াসিম

ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলছেন মোহাম্মদ ওয়াসিমছবি: শামসুল হক

‘ওয়াসিম’
পাকিস্তান ক্রিকেটে তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখেন, এমন যে কারোর এ নাম শুনলে ‘সুলতান অব সুইং’ ওয়াসিম আকরামের কথা সবার আগে মনে পড়বে। তবে নামের কোনো না কোনো অংশে ‘ওয়াসিম’ আছে, এমন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের সংখ্যাও কম নয়।

নব্বই দশকের শেষ দিকে মোহাম্মদ ওয়াসিম নামের এক পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ছিলেন, যিনি পরে জাতীয় দলের নির্বাচকও হয়েছিলেন। পরে একই নামে যখন আরেকজন ক্রিকেটার এলেন জাতীয় দলে, খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে ‘মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র’ নামে ডাকা শুরু হলো। একটা অংশ ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে মিলে গেলেও বোলিং অ্যাকশন আবার আরেক কিংবদন্তি পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিসের মতো।

আরও পড়ুন

একজনের নাম, আরেকজনের বোলিং অ্যাকশন—এ দুইয়ের মিশেলের কথাটা শুনতেই হেসে দিলেন ওয়াসিম। ফরচুন বরিশালের হয়ে বিপিএল খেলতে আসা এই পাকিস্তানি পেসার হাসতে হাসতেই বললেন, ‘হ্যাঁ, আমাকে দুজনের মিশেল বলা যায়। আলহামদুলিল্লাহ, এখন পর্যন্ত যা করছি, ভালো করছি। আশা করি, সামনেও নিজের ও দলের জন্য ভালো করার চেষ্টা করব। আমার সেই চেষ্টা থাকবে।’ নামের কারণে পাড়ার ক্রিকেটে ওয়াসিম আকরামের সঙ্গেও যে তুলনা হতো, বললেন সেই গল্পও, ‘আমার সঙ্গে ওয়াসিম আকরামের তুলনা হতো। আমার মধ্যে অনেক প্রতিভা ছিল। এটা একটা কারণ হতে পারে।’

ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিস
ফাইল ছবি

দুই কিংবদন্তি পেসারের আরও একটি গুণ ওয়াসিম এর মধ্যেই রপ্ত করেছেন। ওয়াসিম-ওয়াকার ছিলেন রিভার্স সুইংয়ে দক্ষ। ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ওয়াসিম জুনিয়রও নিজের রিভার্স সুইং–দক্ষতার কারণে পরিচিতি পেয়েছেন। ওয়ানডে, টেস্টে তো বটেই, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তাঁকে রিভার্স সুইং করতে দেখা যায়! ওয়াকারের মতো কিছুটা ‘স্লিঙ্গি’ অ্যাকশন এ ক্ষেত্রে তাঁর বড় হাতিয়ার, ‘আমার যে অ্যাকশন, সেটা রিভার্স সুইংয়ের জন্য কার্যকরী।’ সঙ্গে যে আত্মবিশ্বাসও ভালোই আছে, ওয়াসিমের পরের কথাটায় সেটা বোঝা গেল, ‘আমাকে কিছুটা পুরোনো বল দিয়ে দেখুন, আমি রিভার্স করে দেখাব। বল যদি একটু বানানো যায়, তাহলে রিভার্স হবে।’

ওয়াসিমের এই দক্ষতার চর্চা হয় অন্য পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যেও, ‘আমার রিলিজ বল রিভার্সের ক্ষেত্রে কার্যকরী। কিছুদিন আগে ওয়াহাব ভাই আমাকে বলছিল, “তোমার রিলিজ ও বোলিং অ্যাকশন খুবই ভালো। এটাকে কখনোই পরিবর্তন কোরো না।” রিভার্স সুইং আমার জন্য খুবই কার্যকরী ডেলিভারি। ডেথ ওভারে রিভার্স ও ইয়র্কারে আমি সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে থাকি।’

চলতি বিপিএলে ৪ ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়েছেন ওয়াসিম
ছবি: শামসুল হক
আরও পড়ুন

ওয়াসিমের ক্যারিয়ারের গল্পটা অন্য রকম। পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ২০১৭ সালে। এর আগে টেপ টেনিসের ক্রিকেট খেলতেন। সেখানে তাঁর প্রতিভা দেখে এক বন্ধু ক্রিকেট বলে খেলার পরামর্শ দেন।

দেরিতে ক্রিকেট বলে খেলা শুরু করলেও প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২০ সালে তিনি পাকিস্তানের হয়ে খেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। এর পরের বছরই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, পাকিস্তান সুপার লিগে অভিষেক হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকও ওই একই বছর। তখন থেকেই পাকিস্তান দলে নিয়মিত মুখ ওয়াসিম।

পাকিস্তান ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে তরতরিয়ে উঠে আসা এই তরুণের কাছে এখনো যাত্রাটা স্বপ্নের মতো, ‘খুব দ্রুত খেলার সুযোগ পেয়েছি, এটা ঠিক। আমি চিন্তাও করিনি যে এত দ্রুত জাতীয় দলে খেলা হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ খেলার সময় মনে হতো, জাতীয় দলে অনেক প্রতিযোগিতা। এখানে আমি এত দ্রুত সুযোগ পাব না। কিন্তু ভাগ্য ভালো দ্রুত সুযোগ পেয়েছি। সেটি কাজে লাগাতে পেরেছি।’

স্বপ্নময় এ যাত্রা অবশ্য সহজ ছিল না ওয়াসিমের, ‘আমি ওয়াজিরিস্তানের ছেলে। সেখানে খেলার কোনো অবকাঠামো নেই। সেখান থেকে আমি পেশোয়ারে আসি। একা থাকা, ক্রিকেট খেলা, এটা আমার জন্য সহজ ছিল না। আমি বলে বোঝাতে পারব না, সফরটা কতটা কঠিন ছিল।’

পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে ওয়াসিমের পরিচয় ২০১৭ সালে
ছবি: শামসুল হক
আরও পড়ুন

ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে গেছেন। নিজেকে একজন উচ্চশিক্ষিত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন ২১ বছর বয়সী এই তরুণ, ‘আমি এপিসি করেছি ক্রিকেটে। এরপর এফইসি করেছি মেডিকেলে। এখন বিএস-এ ভর্তি হয়েছি। সামনেও পড়াশোনা চালিয়ে যাব। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত আমার নিজেরই।’
এবারের বিপিএলে ওয়াসিম খারাপ করেননি। ৪ ম্যাচ খেলে ৭ উইকেট নিয়েছেন। বরিশালের বোলিং আক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন খুব দ্রুতই। পুরোনো বলে তো বটেই, নতুন বলেও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ভরসার নাম ওয়াসিম, ‘বিপিএল আমার জন্য খুব ভালো অভিজ্ঞতা। দলের আবহটাও ভালো। আমরা খেলছিও ভালো। সব মিলিয়ে সময়টা ভালোই কাটছে। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট। দলও আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমার কাছে একটা প্রত্যাশা ছিল দলের। সেটাও মেটাতে পারছি। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা তৃপ্তির।’

আরও পড়ুন