‘দেখিয়ে দিতে’ চাওয়া মুকিদুল কথা রেখেছেন
চোট থেকে তখন মাত্র সেরে উঠেছিলেন মুকিদুল ইসলাম। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একাডেমি মাঠের ফাঁকা নেটে প্রায় দুই মাস পর বোলিং করছিলেন। তার কিছুদিন আগেই ড্রাফট থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস তাঁকে দলে নিয়েছিল। তখন থেকেই মুকিদুলের চোখ বিপিএলে। ছোট্ট রান আপে দুটি বল করার পর মুকিদুল বলছিলেন, ‘৫টা ম্যাচ পেলেই হলো। দেখিয়ে দেব।’
২২ বছর বয়সী মুকিদুলের নিজের বোলিং নিয়ে এমন আত্মবিশ্বাস এসেছে লাল বলের ক্রিকেট থেকে। প্রথম শ্রেণি ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ভালো করছিলেন গত দুই মৌসুম ধরে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচটি ছিল মুকিদুলের সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। সে ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন।
কাল সেই মাঠেই সাদা বলের ক্রিকেটে প্রথম ৫ উইকেটের দেখা পেলেন রংপুরের এই তরুণ পেসার। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে তাঁর ২৩ রান ৫ উইকেটে ছিল দুর্দান্ত বোলিংয়ের প্রদর্শনী। তাতে ধরা দিয়েছে দারুণ কিছু অর্জনও। এবারের বিপিএলে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট পেলেন মুকিদুল। শুধু কী তাই! বিপিএলের সব আসর মিলিয়ে দেশের পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এখন মুকিদুলের।
মুকিদুল নিজেকে চেনাতে ৫টি ম্যাচ চেয়েছিলেন। একটি ম্যাচ বেশি লেগেছে। কাল বিপিএলে নিজের ষষ্ঠ ম্যাচেই নাম লিখিয়েছেন রেকর্ড বইয়ে। ৯ উইকেট নেওয়া মুকিদুল এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত কুমিল্লার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। মাঠের পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল মুকিদুল অবশ্য মাঠের বাইরে একটু লাজুক।
মুকিদুল কাল ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতলেও সংবাদ সম্মেলনে আসতে চাননি। সংবাদ সম্মেলনকক্ষের চেয়ার বসতে বসতে ভিক্টোরিয়ানসের মিডিয়া ম্যানেজার বললেন, ‘তাঁকে এখানে আনতে জান বেরিয়ে গেছে…আসতেই চায়নি। এই দরজা থেকেও ফিরে যেতে চেয়েছিল…।’ মুকিদুলের মুখে তখন লাজুক হাসি।
সংবাদ সম্মেলন শুরু হলো ওই প্রসঙ্গ ধরেই। সংবাদ সম্মেলনে কেন আসতে চাননি, এ প্রশ্নের উত্তরে মুকিদুলের উত্তর, ‘এই জিনিসটা খুব ভয় পাই।’ অথচ এই মুকিদুলের গতি ও বৈচিত্র্য ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল বরিশাল শিবিরে। সংবাদ সম্মেলনের আগেই বরিশালের কোচ নাজমুল আবেদীন তাঁর পিঠ চাপড়ে বলেছেন, ‘ভেরি গুড বোলিং, ভেরি কারেজিয়াস।’
তবে মুকিদুলের কাছে তাঁর বোলিংয়ের ব্যাখ্যা একদমই সোজাসাপটা, ‘আমি আমার পরিকল্পনায় বল করেছি। এর বেশি কিছু নয়। খেলাটাই এ রকম। আপনি কোনো দিন ভালো বল করবেন, কোনো দিন করবেন না। কোনো দিন উইকেট পাবেন, কোনো দিন পাবেন না। যেকোনো বোলারের জন্যই এটা বলা কঠিন যে আমি আজ ভালো করবই বা আমি নিয়মিত ভালো করব। এটা কখনোই হয় না। ভালো জায়গায় বল করে যেতে হয়। আর ভাগ্যের সহায়তা লাগে, এটাই।’
বিপিএল নিয়ে তাঁর প্রস্তুতির প্রসঙ্গও এসেছে সংবাদ সম্মেলনে। মুকিদুলের ভাষায়, ‘মিরপুরেই জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলেছিলাম সর্বশেষ। সেখানে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলাম। এরপর ‘এ’ দলে যাই। ভারতে লাল বলেই খেলা ছিল। এরপর চোটে পড়ায় অনেক বড় একটা বিরতি গিয়েছে, প্রায় দুই মাসের। এরপর আমি আর লাল বল নিয়ে ভাবিনি। ভেবেছি সাদা বল নিয়ে। চোট থেকে ফেরার পর প্রস্তুতিটা নিয়েছি বিপিএলের। আমার লক্ষ্যই ছিল সাদা বলে ভালো করার।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটে পেস বোলিংয়ে বিপ্লবটা যে শুধু জাতীয় দলে থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে মুকিদুলের উত্থানে। রেজাউর রহমান, রবিউল ইসলাম, তানজিম হাসানের পর মুকিদুলও জাতীয় দলের বাইরের পেসারের দলটাকে ভারী করলেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স দিয়ে। প্রতিযোগিতাটা যে পেসারের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছে, সেটা বোঝা গেল মুকিদুলের কথায়, ‘নিজেরও ভালো লাগে যখন দেখি যে অনেক পেসার উঠে আসছে। তখন আমার জায়গা থেকে আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা জাগে। তখন আরও চিন্তাভাবনার জায়গা বাড়ে। সব কিছুই বাড়ে।’
তবে পরের ধাপে যেতে যে মুকিদুলকে আরও উন্নতি করতে হবে, সে উপলব্ধিও আছে তাঁর, ‘আমার চেয়ে আরও ভালো ভালো বোলার জাতীয় দলে আছে। মোস্তাফিজ ভাই আছে, তাসকিন ভাই আছে। তাঁরা নিজেদের প্রমাণ করে এ পর্যায়ে এসেছে। আমার আরও প্রমাণ করা প্রয়োজন, ওই জায়গায় যেতে হলে। আমি সে চেষ্টাই করছি।’