বাংলাদেশসহ তিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে পাকিস্তানিদের আনন্দ দিতে চান বাবররা
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপটা দারুণভাবে শুরু করেছিল পাকিস্তান। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রেকর্ড ৩৪৫ রান তাড়া করেও জিতেছিল তারা। কিন্তু এরপরই ঘটে আশ্চর্য ছন্দপতন। টানা চার ম্যাচ হেরে এখন প্রায় বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। অথচ পাকিস্তান বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর দল হিসেবে। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকও সেমিফাইনালের চার দলের একটি হিসেবে পাকিস্তানকে নিজেদের তালিকায় রেখেছিল।
বাংলাদেশ ম্যাচ সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলনে ফেবারিট পাকিস্তানের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন পাকিস্তানের প্রধান কোচ গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন। ফেবারিট–তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে দল হিসেবে খেলতে না পারাকেই ব্যর্থতার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ম্যাচসহ পরের খেলাগুলোয় নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কথাও বলেছেন ব্যাডবার্ন।
সংবাদ সম্মেলনে ফেবারিট পাকিস্তানের ব্যর্থতার কারণ জানতে চাইলে ব্র্যাডবার্ন বলেছেন, ‘আমি জানি না এই ফেবারিটের হিসাব–নিকাশ আপনারা কোথা থেকে আনেন! কারণ, এখানে ১০টি দল খেলতে এসেছে, যেখানে খেলছে আইসিরির র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের ১৫০ জন সেরা ক্রিকেটার। আমরা জানি অন্য দলগুলোও ভয়ংকর হতে পারে; কারণ, আমরা ভারতে খেলার সুযোগ পাই না। আর সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ দলগুলো পাকিস্তান না আসায় আমরা তাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাইনি।’
ব্র্যাডবার্ন জানান, র্যাঙ্কিং–সেরা দল হলেই যে কাউকে হারানো সম্ভব, এটাও তিনি মনে করেন না, ‘এপ্রিলে আমরা ৫ নম্বর দল ছিলাম। সম্প্রতি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা শীর্ষ দল হয়েছি। এখান থেকেই হয়তো আপনি ফেবারিট হওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু আমরা বাস্তববাদী। আমরা এখনো বিশ্বের সেরা দল নই, যা দেখায় যে আমরা এখন টুর্নামেন্টে কোন পর্যায়ে আছি। এমন কোনো ঐশ্বরিক অধিকার নেই যে আমরা যে কাউকেই হারাতে পারব।’
টানা চার ম্যাচ হেরে পাকিস্তান ক্রিকেটের ভক্ত–সমর্থকদের নিরাশ করলেও পরের ম্যাচগুলোতে জ্বলে উঠতে চান বলেও মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের এই প্রধান কোচ, ‘আমাদের মানসম্পন্ন ক্রিকেট খেলতে হবে এবং আমাদের তিনটি বিভাগকে একসঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে। দেশের মানুষকে আনন্দ দিতে আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা এই ক্রিকেট দলের মাধ্যমে দেশকে গর্বিত করতে চাই। পাশাপাশি আমরা এটাও জানি যে শেষ চার ম্যাচে আমাদের সব কটি বিভাগ একসঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেনি। আবার এমনও নয় যে এই চারটি হার খেলোয়াড়, কোচ বা দল হিসেবে আপনি কেমন সেটা নির্ধারণ করে দেবে। তাই আমরা এখন সেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং পরবর্তী তিন ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। এরপর টুর্নামেন্টের বাকি অংশে কি হবে তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে চাই।’
পাকিস্তানের দলের পরিবেশ নিয়েও বেশ কিছু খবর সামনে এলেও ব্র্যাডবার্ন ইতিবাচক খবরই জানিয়েছেন, ‘দলের পরিবেশ দারুণ। দলের পরিবেশে কখনোই কোনো সমস্যা ছিল না। আমাদের দারুণ একটি দল আছে, যারা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে জানে। আমি আগেও বলেছি, তারা দেশকে আনন্দ দিতে চায়। সমর্থকদের জন্য মানসম্পন্ন এবং রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলতে চায়। পারফরম্যান্স এর মধ্যে দিয়ে তারা দেশকে এবং পরিবারকে গর্বিত করতে চায়।’
নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে খুশি কি না জানতে চাইলে ব্র্যাডবার্ন বলেছেন, ‘আমরা তৃপ্ত যে প্রতিটি ম্যাচ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। কিন্তু এটাও আমরা জানি যে আমাদের সব বিভাগ একসঙ্গে পারফর্ম করতে পারেনি। এটা আমাদের জন্য কষ্টের কারণ আমরা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। যে কারণে ভক্তদেরও আমরা হতাশ করেছি। আমাদের সমর্থকদের আনন্দ দেওয়ার ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেভাবে লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছি তা আমরা গর্বিত।’
এ সময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৪৪ রান তাড়া জেতার ম্যাচটিকে উদাহরণ হিসেবে টেনে ব্র্যাডবার্ন বলেছেন, ‘এই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে রেকর্ড রান তাড়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সে সময় আমরা আপনাদের আনন্দ দিয়েছি। এমন আশাবাদী এবং গর্বিত দলকেই ভক্তরা খেলতে দেখতে চায়। এটি এমন ব্র্যান্ড যা তাদের গর্বিত করে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে সেটা আমরা করতে পারি। যা আমরা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’