২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দাওয়াতে গিয়ে ক্ষোভের আগুন জ্বালালেন সাকিবরা

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ক্রিকেটাররাছবি : সংগৃহীত

বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের ডাল-ভাত খাওয়ানোর আবদার প্রবাসীদের নতুন নয়। তবে এ নিয়ে অতীতে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

এরপর অনেক বছর এই রীতিটা নিয়ম করেই বন্ধ রেখেছিল বিসিবি। আজ যখন ব্রিসবেনে আবার নিয়মের বাঁধন আলগা হলো, আবারও লাগল গোলমাল। তাতে আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন ব্রিসবেন (ব্যাব) এবং বাংলাদেশ দল, সবার জন্যই পরিস্থিতিটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিব্রতকর।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ দল ব্রিসবেনে থাকার সময় তাদের সংবর্ধনা দিতে এ রকম একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অনুমোদন নেওয়া ছিল বলে দাবি ব্যাব কর্মকর্তাদের। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, ব্রিসবেনের ভিক্টোরি চার্চ বেলবার্ড পার্কের সংবর্ধনা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে এসে ক্রিকেটারদের কেউ কেউ রীতিমতো অপমান করে গেছেন তাঁদের।

অভিযোগটা সাকিবের প্রতিই বেশি। দলীয় এবং আলাদাভাবে ক্রিকেটারদের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অটোগ্রাফ ব্যাট রাখা হয়েছিল। কিন্তু দলের অন্য সবাই ব্যাটে সই করলেও সাকিব কোনো ব্যাটেই সই করেননি। আলোচনা অনুষ্ঠানেও একবাক্যে নিজের বক্তব্য শেষ করেছেন। সব মিলিয়ে তাঁর আচরণে ভীষণ অপমানিত বোধ করছেন অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ব্রিসবেনপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।

অটোগ্রাফের জন্য ব্যাট দিলেও সাকিব সেটি ফেরত দিয়েছেন স্বাক্ষর না করেই
ছবি : সংগৃহীত

ব্যাবের সভাপতি শেখ বাশার উদ্দিন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেছেন, ‘কমিউনিটি মেম্বারদের সামনে আমাদের জাতীয় দলের অধিনায়কের আচরণ ছিল হতাশাজনক।’

ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটি প্রতিনিধি যিশু দাস গুপ্তও, ‘আমরা দূরে থাকায় ক্রিকেটারদের প্রতি আমাদের একটা আবেগ কাজ করে। ওনাদের উচিত ছিল সেটাকে মূল্যায়ন করা। আমাদের তরুণ প্রজন্মও সেখানে ছিল। তারা কিন্তু দেখেছে একটা লিডারশিপ কেমন হয়।’

আরেক সংগঠক ফারুক রেজার কথা, ‘ক্রিকেট দলের কাছ থেকে যে আচরণ পেয়েছি সেটা দুঃখজনক। আমরা ক্রিকেট দলের কাছে আরও স্বতঃস্ফূর্ততা আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা পাইনি।’ তিনি অবশ্য যোগ করেছেন, ‘তারপরও জিতলে বা হারলেও আমরা ক্রিকেট দলের পক্ষে আছি।’

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ দলের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক কর্মকর্তার দাবি, ব্যাটে সই করা বা অনুষ্ঠানে আসা সবার সঙ্গে ক্রিকেটারদের আলাদা আলাদা ছবি তোলা—আগে থেকে দলকে এর কিছুই জানানো হয়নি। হুট করে এসব করতে বলায় ক্রিকেটাররা বিব্রত বোধ করেন। তা ছাড়া কাল মেলবোর্ন হয়ে হোবার্টে আসবেন ক্রিকেটাররা। তার আগের দিন এত কিছু করার মানসিক অবস্থা ছিল না তাঁদের।

তিনি জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার বিষয়টিও দলের জানা ছিল না। ক্রিকেটাররা এটিও ভালোভাবে নেননি।

জানা গেছে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া এবং বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নৈশভোজে অংশগ্রহণের জন্য ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের চাঁদা ছিল ২০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার করে ও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় ৪০ ডলার করে। যদিও আয়োজকেরা বলছেন, চাঁদা তোলা হয়েছিল অনুষ্ঠানের আপ্যায়ন ও হলরুমের ভাড়া মেটাতে। অনুষ্ঠানে প্রায় শ দেড়েক ব্রিসবেনপ্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে ক্রিকেটাররা
ছবি : সংগৃহীত

আয়োজকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিসিবির শীর্ষ পর্যায় থেকে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি নিয়েছেন তাঁরা। দলের কারও কারও অনুষ্ঠানে যেতে আপত্তি থাকলেও পরে তাই সাকিবসহ সবাইকে যেতে হয়েছে।

বিশ্বকাপের মধ্যে কেন এ ধরনের অনুষ্ঠানে যেতে বারবার দলকে বোর্ড থেকে বলা হবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। আর যদি বলাই হবে, অনুষ্ঠানটা যাতে ক্রিকেটারদের বিব্রতকর অবস্থায় না ফেলে, সেটাও বোর্ডেরই নিশ্চিত করা উচিত ছিল।

তা না করায় ব্রিসবেনে সংবর্ধনার নামে যেটা হয়েছে, সেটা আসলে খেলোয়াড়-সমর্থকদের মধ্যে তিক্ততা বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই নয়।