অ্যাশেজে তিনটা টেস্ট খেলতে পারলেই খুশি অ্যান্ডারসন
তিনি এখনো খেলে যাচ্ছেন, এটা যেমন বিস্ময়কর, তিনি যে এখনো দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন, এটা আরও বিস্ময়কর। জেমস অ্যান্ডারসনের বয়স ৪০, তাঁর বয়সে অনেকে খেলা ছেড়ে দিয়ে কোচিং করাচ্ছেন।
পেস বোলিং কোচ, কেউবা বোলিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। আর অ্যান্ডারসন? এখনো শুধু খেলছেনই না, তিনি এখনো ইংল্যান্ডের প্রধান বোলারদের একজন এবং আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ঠিক এই মুহূর্তেও আছেন বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত সেরা সুইং বোলার অ্যান্ডারসনের ঝুলিতে ৬৮৫ উইকেট। ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁর চেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট নেই অন্য কোনো পেসারের। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৭৯ টেস্ট খেলেছেন অ্যান্ডারসন, ইংল্যান্ডের হয়ে তো সবচেয়ে বেশিই, ক্রিকেট ইতিহাসেও তাঁর চেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন মাত্র একজন—শচীন টেন্ডুলকার।
এই যে অ্যান্ডারসনের স্থায়িত্ব, এর রহস্য শুধু তাঁর দারুণ ফিটনেস নয়, তাঁর খেলার ধকল ব্যবস্থাপনাও চমৎকার। দলের সেরা বোলারকে সব সময় সতেজ অবস্থায় পেতে ইংল্যান্ডও তাঁকে যখন বিশ্রাম দরকার, দিয়েছে। অ্যান্ডারসনও খুব সচেতনভাবে বিভিন্ন সময় নিজেকে অন্য সংস্করণে খেলা থেকে বিরত রেখে টেস্টে মনোযোগী থেকেছেন।
এখন অবশ্য শুধু টেস্টই খেলেন ইংলিশ এই কিংবদন্তি পেসার এবং সেটাও বেছে বেছে। নিজের শরীর ও ফিটনেস সম্পর্কে ভালোই জানা অ্যান্ডারসনের। আর জানেন বলেই পরের মাসে শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজেও পাঁচ টেস্টের সব কটিতে খেলার প্রত্যাশা করছেন না প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১ হাজারের বেশি উইকেট পাওয়া এই পেসার।
এজবাস্টনে অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে আগামী ১৬ জুন। এরই মধ্যে কনুইয়ের চোটে পড়ে জফরা আর্চারের অ্যাশেজ শেষ হয়ে গেছে। অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রডদের ওপর তাই দায়িত্ব আরও বেশি। তবে অ্যান্ডারসন নিজেও কুঁচকির চোটে পড়েছেন গত সপ্তাহে। তবে আশা করা হচ্ছে, অ্যাশেজের আগেই তিনি পুরো ফিট হয়ে যাবেন।
তারপরও ঝুঁকি তো থাকেই। সবকিছু মিলেই অ্যান্ডারসনের এই বাস্তববাদী ভাবনা। গতকাল ইংল্যান্ডের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ইংলিশ এই পেসার বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, পাঁচ টেস্টের সব কটিতে খেলার আশা করা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। আমি তিনটার কথা ভাবছি। শুধু আমার জন্য নয়, যেকোনো বোলারের কথাই যদি বলেন, পাঁচের মধ্যে তিনটা খেলার আশা করা হবে আরও বাস্তবসম্মত ও বিচক্ষণ ভাবনা।’
তবে শেষ পর্যন্ত কয়টা টেস্ট খেলতে পারেন, এ নিয়ে এখনই খুব বেশি ভাবতে রাজি নন অ্যান্ডারসন, ‘আসল ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনাকে ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। আমরা যদি পাঁচ দিনে ২৫০ ওভার বোলিং করি, খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার বিশ্রাম দরকার হবে। আবার বৃষ্টি হতে পারে কিংবা আমরা খুব সহজেই ওদের অলআউট করে দিতে পারি, এসবও মাথায় রাখতে হবে। আপনি জানেন না কী হবে, তাই সেভাবেই এগোতে হবে।’
অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া সর্বশেষ অ্যাশেজে ৪-০ ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিকেরা। তবে কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের নেতৃত্বে সর্বশেষ ১২ মাসে ১২ টেস্ট খেলে ১০টি জেতা ইংল্যান্ড এখন দুর্দান্ত ফর্মে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার ধরনটাই পাল্টে দিয়েছেন এই ইংল্যান্ড, আক্রমণাত্মক এই খেলার ধরনের নতুন নামই হয়ে গেছে ‘বাজবল’ ক্রিকেট।
ছন্দে থাকা এই ইংল্যান্ডকে কোনো দলের পক্ষেই হারানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন অ্যান্ডারসন, ‘আপনি যদি আমাদের দলটা দেখেন, আমরা যদি আমাদের সেরা সামর্থ্য ও ওই মানসিকতা নিয়ে খেলি, আমার মনে হয় না কেউ আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে। আমরা যা করে যাচ্ছি, সেটা যদি করতে পারি এবং সেরাটা খেলতে পারি, কেউ আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না।’
এই ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেন স্টোকস, দলটার বদলে যাওয়ার পেছনে যাঁর অনেক বড় ভূমিকা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অ্যান্ডারসন খেলেছেন অনেক অধিনায়কের অধীনে। এর মধ্যে বেন স্টোকসই তাঁর সেরা অধিনায়ক কি না, এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ ভেবে ইংলিশ পেসারের উত্তর, ‘হ্যাঁ, এই অল্প সময়ে যদিও বলা কঠিন। তবে তার শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে। আমার মনে হয়, আমি যাঁদের অধীনে খেলেছি, তাঁদের চেয়ে সে একেবারেই আলাদা। আমি সত্যিই ওর অধীনে খেলাটা উপভোগ করছি।’