মাহিদুলের টেস্ট দলে ঢোকার গল্প
২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবরের বিকেলটাকে কি কখনো ভুলতে পারবেন মাহিদুল ইসলাম!
সতীর্থদের কাছে অঙ্কন নামেই পরিচিত এ উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান তখন বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায়। জাতীয় ক্রিকেট লিগে রংপুরের বিপক্ষে ব্যাট করছিল তাঁর দল ঢাকা বিভাগ। কিন্তু মাঠে নয়, মাহিদুলকে তড়িঘড়ি করে ছুটতে হলো চট্টগ্রামের বিমান ধরতে। জাতীয় দল থেকে যে ডাক এসেছে!
মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে অভিষেক হওয়া জাকের আলীর দুর্ভাগ্যই খুলে দিল মাহিদুলের জন্য স্বপ্নের দুয়ার। মাথায় বলের আঘাতে কনকাশনে ভোগা জাকেরের বদলি হিসেবেই বাংলাদেশের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন ২৫ বছর বয়সী উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
তবে মাহিদুল একাদশে সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। সেই সংশয়ও দূর হলো আজ লিটন দাসের অসুস্থতায়। উইকেটের পেছনে দাঁড়াবেন কে? মাহিদুল তো আছেনই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ৪৪তম ম্যাচের মাঝপথে জাতীয় দলে ডাক পাওয়া মাহিদুল পরের দিনই পেয়ে গেলেন টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ।
জাকেরের চোটে হুট করে জাতীয় দলে ঢুকে পড়লেও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে মাহিদুলের দলে ঢোকাটা কোনো বিস্ময় হয়ে আসেনি। অন্তত সর্বশেষ দুই মৌসুমের বিচারে ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান ঢাকায় বেড়ে ওঠা মাহিদুল।
জাতীয় লিগে ২০২৩-২৪ মৌসুমে দুটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ, বিসিএলে ৬ ইনিংসের মধ্যে ৫টি ফিফটি করেন। মাঝে বিপিএলে খুব ভালো না করলেও প্রথম শ্রেণির ফর্মটা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফিরে পান এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান।
মোহামেডানের হয়ে টানা পাঁচ ফিফটি করা ব্যাটসম্যানই রানের হিসাবে সবার ওপরে ছিলেন সেই ওয়ানডে লিগে। ১৬ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে ৬৪৭ রান করা মাহিদুল ডিসমিসাল করেন ১৯টি।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সঙ্গে পাকিস্তান সফরে যান মাহিদুল। সফরটা অবশ্য ভালো যায়নি তাঁর, পাঁচ ইনিংসে একবারও ৪০ ছুঁতে পারেননি।
তবে এবারের জাতীয় লিগটা সেঞ্চুরি দিয়েই শুরু করেছেন অনূর্ধ্ব-১৬ পর্যায় থেকেই বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলে খেলা মাহিদুল। খুলনায় সিলেটের বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসে ১১৮ রান করা মাহিদুল পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামার আগেই ডাক পেয়ে যান জাতীয় দলে।
২০০৯ সালে ১০ বছর বয়সে গোপীবাগের বেঙ্গল ক্রিকেট টাইগার্স একাডেমিতে ভর্তি হওয়া মাহিদুল ঢাকা মহানগর অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব–১৬ দলে খেলার পর ২০১৪ সালে সুযোগ পেয়ে যান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলে।
ভারতের বাংলা অনূর্ধ্ব-১৬ দলের বিপক্ষে খেলা প্রথম ম্যাচে মাহিদুল সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন আফিফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। দুই বছর পর বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পেয়ে যান মাহিদুল। প্রথম ম্যাচে মাহিদুলের সতীর্থ ছিলেন সাইফ হাসান, আফিফ, আমিনুল, নাঈম হাসান ও মুকিদুল ইসলামরা। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলেছেন মাহিদুল।
ছয় বছর পর সেই মাহিদুল ‘আসল’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদও পেয়ে গেলেন।