পাকিস্তান দলে কে এই ‘বাবরের মতো আরেকজন’
শ্রীলঙ্কা ৩৪৪ রান করার পর অনেকে হয়তো পাকিস্তানের জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিল। এরপর দলীয় ৩৭ রানে ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম ফিরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে যায় পাকিস্তানের জন্য। কিন্তু সে অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলেন আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।
শেষ পর্যন্ত দলীয় ২১৩ রানে আবদুল্লাহ শফিকের বিদায়ে ভাঙে এ জুটি। ততক্ষণে অবশ্য শফিক করে ফেলেছেন ১০৩ বলে ১১৩ রান। বিশ্বকাপ অভিষেকে সেঞ্চুরি করে শফিক ফিরলেও অন্য প্রান্তে অবিচল ছিলেন রিজওয়ান। এমনকি মাংসপেশিতে মারাত্মক টানও তাঁকে দমাতে পারেনি। সৌদ শাকিল এবং ইফতেখার আহমেদের সঙ্গে জুটি গড়ে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। ম্যাচের পর রিজওয়ান-শফিককে দুজনকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক গতি তারকা শোয়েব আখতার। শফিকের মধ্যে আরেকজন বাবরের ছায়া দেখার কথাও জানিয়েছেন শোয়েব।
শফিক আর রিজওয়ানের প্রশংসা করার আগে এদিন নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব কথা বলেছেন বাবর আজম নিয়ে। টানা দুই ম্যাচে ব্যর্থ হলেও বাবর দ্রুতই রানে ফিরবেন বলে বিশ্বাস শোয়েবের, ‘পাকিস্তান ম্যাচটি বেশ আরামেই জিতেছে। দারুণ শুরু বলা যায়। আবারও বাবর আজম ভালো করতে পারেনি। কিন্তু বাবর আজমের মতো আরেকজন খেলোয়াড় আমরা পেয়ে গেছি, যার নাম আবদুল্লাহ শফিক। শাবাশ আবদুল্লাহ! তাকে নিয়ে বলার আগে বাবরকে নিয়ে বলি। বাবর অবশ্যই অসাধারণ খেলোয়াড়। এই ধরনের বড় ম্যাচে মাঠে গিয়ে তার দলকে জেতানো উচিত। আমি নিশ্চিত সে সেটা সামনের দিনে করতে পারবে। বড় ম্যাচে বাবর বড় ইনিংস খেলবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
এরপর আবদুল্লাহ শফিককে প্রশংসায় ভাসিয়ে শোয়েব বলেছেন, ‘পাকিস্তান ৩৪৫ রান তাড়া করে জিতেছে। উইকেট অনেক ভালো সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু আবদুল্লাহ শফিক টিকে থাকলে ম্যাচ আরও অনেক ওভার বাকি রেখে ম্যাচটা পাকিস্তান জিততে পারত। সে অসাধারণ এক সুপারস্টার। সে দারুণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে খেলে এবং নিজেদের দাপট দেখিয়েই খেলে। তার খেলা আমার খুব ভালো লেগেছে। একেবারে কোনো সুযোগ না দিয়েই খেলেছে। বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেঞ্চুরি। আপনি এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করতে পারেন না।’
এরপর রিজওয়ানকে নিয়ে কথা বলেছেন শোয়েব। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসটি নিয়ে প্রশংসা করলেও বড় ইনিংস খেলার সময় বারবার মাংসপেশির সমস্যায় ভোগার বিষয়টি নিয়েও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সাবেক এ ফাস্ট বোলার, ‘রিজওয়ান মাঠে বারবার পড়ে যায় এবং তার ক্র্যাম্পও অনেক হয়। কিন্তু তাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সে সেঞ্চুরিও করেছে এবং পাকিস্তানের জন্য শেষ ৫০ রানও করেছে। তা–ও আবার দৌড়ে। তার নিজের খেয়াল রাখা উচিত, কারণ বারবার ক্র্যাম্প হয়।’
কিপিং করার পর লম্বা সময় ব্যাটিং করার চাপটা মনে করিয়ে দিয়ে শোয়েব আরও বলেছেন, ‘আমি জানি তার ওপর অনেক চাপ যায়। ৫০ ওভার কিপিং করা এবং তারপর সেঞ্চুরি করা সহজ নয়। এতে শরীরের ওপর অনেক ধকল যায়। কিন্তু কে এল রাহুলও ৫০ ওভার কিপিং করে সেঞ্চুরি প্রায় করেই ফেলেছিল। তা–ও আবার চেন্নাইয়ের গরমে। তারপরও রিজওয়ানকে অনেক অভিনন্দন। সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানকে জয় এনে দিয়েছে। প্রথমে নিজের সেঞ্চুরি করেছে, কিন্তু তার পরের ৫০ রান পাকিস্তানের জন্য কাজ সহজ করেছে। দেশের জন্য এভাবে খেলতে দেখা আনন্দের ব্যাপার।’
এ সময় হায়দরাবাদের দর্শক এবং ভারতকেও ধন্যবাদ দেন শোয়েব, ‘অনেক ধন্যবাদ হায়দরাবাদের দর্শকদের। হায়দরাবাদের দর্শকদের দেখে মনে হয়েছে আমরা নিজেদের মাঠে খেলছি। হায়দরাবাদ তোমাদের ভালোবাসি। আর কী অসাধারণ দেশ তোমরা। অসাধারণ এক শহর। আমার পক্ষ থেকে হায়দরাবাদকে ভালোবাসা। ভারতকেও ধন্যবাদ। পাকিস্তানকে সমর্থন করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
পাকিস্তান আগামী ১৪ অক্টোবর নিজেদের পরের ম্যাচ খেলবে ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে দারুণ কিছু দেখার প্রত্যাশা শোয়েবের, ‘আমি এখন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের অপেক্ষায় আছি। আমি চাই পাকিস্তান এ ম্যাচে ভালো করুক। এ ম্যাচটা তারা জিতে আসুক।’
প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি পাকিস্তানের বোলিং। কিন্তু শোয়েব বোলারদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। সামনের ম্যাচগুলোয় বোলাররা ছন্দে ফিরবেন বলেই মন্তব্য করেছেন ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’খ্যাত সাবেক এই ফাস্ট বোলার, ‘আমি বোলারদের সমর্থনই করব। তারা ১০ ওভারের বোলার হয়ে ওঠেনি। কিন্তু কীভাবে হবে? গত বছর মাত্র ১২টি ওয়ানডে খেলেছে। এখন এসে ১০ ওভার করে বল করতে হচ্ছে। আশা করি, তারা দ্রুত মানিয়ে নেবে। তবে আশা করব তারা কেউ আনফিট হবে না। এই বোলিং ইউনিটই ইনশাল্লাহ আগামী ৩-৪ ম্যাচে পারফর্ম করা শুরু করে দেবে। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আমি হতাশাটা বুঝতে পারি। কিন্তু শাহিন-হারিসরা যেন হাল ছেড়ে না দেয়। তারা বেশ ভালোভাবে ফিরে আসবে।’