তিন বছর আগে যখন ওয়ানডে সুপার লিগ শুরু হয়, বাংলাদেশকে নিয়ে কতটা আশা করেছিলেন আপনি? অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড—পরাশক্তি এ দলগুলোর ভিড়ে বাংলাদেশ কত নম্বরে জায়গা করে নিতে পারবে বলে ভেবেছিলেন?
বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড তৃতীয় ওয়ানডে দিয়ে শেষ হয়েছে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের প্রথম আসর। নাটকীয় কিছু না ঘটলে শেষ আসরও এটিই। তিন বছর ধরে চলা ওয়ানডে সুপার লিগে ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে টপকে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওপরে আছে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড।
প্রতিটি ওয়ানডেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘প্রাসঙ্গিক’ করে তোলার ভাবনা থেকে ২০২০ সালে চালু হয় আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ, যা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্ব হিসেবেও স্বীকৃত হয়। লিগের ফরম্যাট অনুযায়ী একটি সহযোগী দেশসহ (এ ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডস) আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যদেশগুলো ৩ বছরের চক্রে ২৪টি করে ম্যাচ খেলার কথা ছিল। নানা কারণে পাঁচটি দেশই সব ম্যাচ খেলতে পারেনি। বাকি যে ৮টি দল সব ম্যাচ খেলেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি।
২৪ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি ১৬ জয় ও ৩টি পরিত্যক্ত ম্যাচ মিলিয়ে মোট ১৭৫ পয়েন্ট জোগাড় করেছে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ জয় ও ১ ফলহীন ম্যাচ মিলিয়ে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ১৫৫। বাংলাদেশর মোট পয়েন্টও ইংল্যান্ডের সমান ১৫৫। তবে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের নেট রান রেট ০.৯৭৬ আর বাংলাদেশের ০.২২০। রান রেটে পিছিয়ে থাকায় তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ।
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলেছে ১৮টি। এর মধ্যে ১২টিতে জিতে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ৬ নম্বরে আছে তারা। ২১ ম্যাচে ১৩ জয়ে ১৩০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে পাকিস্তান। দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতও খেলেছে ২১টি ম্যাচ। ২০২৩ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হিসেবে ভারতের অবশ্য সুপার লিগের পয়েন্ট জরুরিও ছিল না। এমনিতেই সরাসরি বিশ্বকাপ খেলত তারা।
অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ভারত—এই তিন দলই সূচিতে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলেনি। ভারত সময় বের করতে পারেনি (খেলা জরুরিও ছিল না), অস্ট্রেলিয়া তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আর পাকিস্তান সূচি আসার আগেই বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায়।
ওয়ানডে সুপার লিগে শুধু দলগত অর্জনেই নয়, ব্যক্তিগত অর্জনেও বাংলাদেশের কয়েকজন ক্রিকেটার সামনের দিকে জায়গা করে নিয়েছেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সেরা ১০–এ আছেন বাংলাদেশের দুজন করে। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবাল ৩৪.০৪ গড়ে তুলেছেন ৭৮৩ রান, আছেন সপ্তম স্থানে। আর ৪৪.৪১ গড়ে ৭৫৫ রান তুলে দশম স্থানে আছেন মুশফিকুর রহিম।
বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান আছেন ৬ নম্বরে। ২০ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ২৩ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়ে ৯ নম্বরে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। উইকেটকিপিং আর ক্যাচিং সাফল্যে অবশ্য সবার ওপরেই আছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারের নাম। উইকেটের পেছনে ২১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩১টি ডিসমিসাল করেছেন মুশফিক। এই তালিকায় নিউজিল্যান্ডের টম ল্যাথাম ২৩ ম্যাচে ২৯ ডিসমিসাল নিয়ে দ্বিতীয় এবং ইংল্যান্ডের জস বাটলার ১৫ ম্যাচে ২৭ ডিসমিসাল নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।
ফিল্ড ক্যাচিংয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪টি করে ক্যাচ নিয়েছেন বাংলাদেশের লিটন দাস ও মিরাজ। ১৩টি ক্যাচ নিয়ে পরের স্থানে ভারতের শিখর ধাওয়ান।
তবে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলগত অর্জনই আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ থেকে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি। র্যাঙ্কিংয়ে কখনো সেরা পাঁচে উঠতে না পারলেও তিন বছরের চক্রের সুপার লিগে অর্জন করে নিয়েছে তৃতীয় স্থান। আইসিসি গত নভেম্বরে জানিয়েছে, ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দল চূড়ান্ত করা হবে পুরোনো ধারায়, র্যাঙ্কিং পদ্ধতিতে।