পেস বোলিং নিয়ে যে স্বস্তি বাংলাদেশ দলে
পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর নীতি এখন বাংলাদেশ দলে। সেটা করা যাচ্ছে নিশ্চিন্ত মনেই।
বাংলাদেশের ক্রিকেট যদি হয় কোনো রূপকথার উপজীব্য, সেখানে পঙ্খিরাজে চড়ে উড়ে আসা নায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচার নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ৩৬ বছর বয়স পর্যন্ত। তিন-চার কদম দৌড়ে করা অফ স্পিন দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট তো এখনো দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর খেলছেন না বলে মাশরাফির বারবার ফিরে আসার রূপকথায় আর কোনো নতুন অধ্যায় হয়তো যোগ হবে না। তবে মাশরাফির মতো না হলেও গত কয়েক বছরে কাছাকাছি আরেকজনকে কি দেখতে পাচ্ছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটে? তাসকিন আহমেদ। মাশরাফির মতো অতবার অস্ত্রোপচারের টেবিলে হয়তো ওঠেননি, অত বেশি গুরুতর চোটে হয়তো পড়েননি, তবু ফিরে আসার গল্পের লেখক বলা যায় তাঁকেও।
কোভিডকালে নিজেকে উদ্দীপ্ত করে তাসকিন দুর্দান্ত লড়াই জিতেছেন মনের সঙ্গে। ছোটখাটো চোটের সঙ্গে লড়াইটা তো নিত্যই। কখনো পিঠের চোট, কখনো পায়ের চোটে এক-দুই সিরিজ পরপরই দর্শকের আসনে না বসে উপায় থাকছে না। এই পেসারের ক্যারিয়ারটাই যেন নৈপুণ্য আর বিশ্রামের সমান্তরাল এক রেলপথ।
তাতে অবশ্য একটা মন্দের ভালো হয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। দলে পেস বোলারের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় বছর দুই ধরে দলে পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর যে নীতি, সেটি বাস্তবায়নে খুব বেশি মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। কখনো তাসকিন বা শরীফুল ইসলামের চোট, কখনো মোস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলজনিত ছুটি—এসব কারণে অনেক সময় না চাইলেও বদলে যাচ্ছে পেস আক্রমণের মুখ। পেসাররা সবাই-ই ভালো করায় এই অদলবদলও করা যাচ্ছে কোনো রকম অস্বস্তি ছাড়াই।
নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কথাতেও খুঁজে পাবেন স্বস্তিটা, ‘আমাদের সব সময়ই চিন্তা থাকে পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে খেলানোর। তবে নানা কারণে সেটা অনেক সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই হয়ে যাচ্ছে। স্বস্তির জায়গা হলো, কেউ চোটে পড়লে বা কারও বিশ্রাম প্রয়োজন হলে এ নিয়ে আমাদের এখন আর দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। সবাই মোটামুটি উনিশ-বিশ হওয়ায় সহজেই বিকল্প নিতে পারছি এবং তারাও সুযোগ পেয়ে ভালো করছে।’
এ বছর বাংলাদেশের সাতটি ওয়ানডের কথাই ধরুন। গত মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে খেলেছেন তাসকিন ও মোস্তাফিজ। তৃতীয় ম্যাচে তাসকিনকে বিশ্রাম দেওয়ায় মোস্তাফিজের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন ইবাদত। এরপর হোম সিরিজ ও চলতি সিরিজ মিলিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টানা চারটি ওয়ানডেতেই তিনি খেলেছেন। মার্চেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ইবাদত বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই সুযোগ তাঁর প্রাপ্য। মোস্তাফিজ ওই সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন। তবে পরের দুই ম্যাচে পেস আক্রমণ অবশ্য ছিল একই চেহারায়—ইবাদত, তাসকিন ও হাসান মাহমুদ।
চোটে পড়ে তাসকিন এখন আবার মাঠের বাইরে। চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাইরে রাখা হয় মোস্তাফিজকেও। কিন্তু কারও অভাবই কি তেমন বোঝা গেল! বৃষ্টি আসার আগে বাংলাদেশ ১৬.৩ ওভার বোলিং করে আইরিশদের যে ৩ উইকেট ফেলল, ইবাদতের সঙ্গে দলে আসা শরীফুল আর হাসানই নিলেন তার ২টি। দুজনের মধ্যে শরীফুল আবার ওয়ানডেতে ফিরেছেন ৯ মাস পর।
এই যে বিরতি দিয়ে দিয়ে খেলা, তাতেও ধার খুব কমছে না পেসারদের। হাসান তো খুবই খুশি যে ইংল্যান্ডের মাটিতে জীবনে প্রথমবার খেলতে নেমেই সঠিক লেংথ খুঁজে নিতে পেরেছেন। শরীফুলও অনেক দিন পর ওয়ানডেতে ফিরে হতাশ করেননি। গতকাল অনুশীলনের পর বললেন সেটাই, ‘আসলে সব ফাস্ট বোলারই চায় এ রকম কন্ডিশনে বোলিং করতে।
আমাদের কাছে ভালোই লেগেছে বোলিং করে।’ সুযোগ পেয়ে যে তা কাজে লাগাতে পেরেছেন, সেটি বাড়তি তৃপ্তি দিচ্ছে এই বাঁহাতি পেসারকে, ‘অনেক দিন পর একাদশে এসেছি। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। মোস্তাফিজ ভাইকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে, সব ফাস্ট বোলারকে ঘুরিয়ে খেলার জন্য চেষ্টা করছে। সেদিক দিয়ে এটা আমার জন্য ভালো একটা সুযোগ।’
তাসকিন দলে নেই, তবে শরীফুলের কথায় চলে এলেন তিনিও। সেটি অবশ্য বোলিং প্রসঙ্গে নয়, ‘সব দেশের টেল-এন্ডাররাই এখন ভালো ব্যাটিং করছে। তাসকিন ভাইকে দেখে আমরাও প্রতিদিন নেটে অনুশীলন করছি। আমরা যদি ১০-১৫ রানও করি, সেটাই দলের জন্য সহায়ক হবে।’
এই তাসকিনই যখন আবার চোট কাটিয়ে ফিরবেন, হতে পারে তাঁকে জায়গা দিতে শরীফুলই গিয়ে বসলেন ডাগআউটে। তবে তাতে তাঁর খুব একটা মন খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে না, ‘প্রতিযোগিতা যত হবে, আমাদের জন্য তত ভালো। কেউ ভালো করলে শেষ পর্যন্ত দেশের জন্যই ভালো হবে। আর উপভোগও করছি এটা। যেখানে প্রতিযোগিতা বেশি, সেখানে উপভোগও বেশি।’
স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার এটাই তো মজা!