‘রাজা’র ছেলে কোটিয়ান ভারত দলে ঢুকলেন যেভাবে
তানুশ কোটিয়ান—নামটা চেনা চেনা লাগছে? লাগতেই পারে; কারণ, চলতি বছরই বিরল এক কীর্তির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল এই ক্রিকেটারের নাম। সর্বশেষ রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে দশম উইকেটে ২৩২ রানের জুটি গড়েছিলেন যে দুজন, তাঁদের একজনই এই কোটিয়ান।
সেই জুটি গড়ার পথে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান কোটিয়ান। যদিও ব্যাটিং করাটা তাঁর প্রধান কাজ নয়। মূল কাজটা তাঁর ডানহাতি অফ স্পিন। ব্যস! তাহলে তো হয়েই গেল। অফ স্পিনার, সঙ্গে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটিংটাও পারেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অবসরে ভারত যাঁকে দলে নিল, তিনি তো আরেক ‘অশ্বিনই’!
অশ্বিন কিংবদন্তি। গত এক যুগে অনেক রেকর্ডই নিজের নামের পাশে লিখে রেখেছেন। তাই দলে ডাক পাওয়ামাত্রই অশ্বিনের বোঝা ঘাড়ে তুলে দিলে কোটিয়ানের সঙ্গে অবিচারই হবে। তবে অশ্বিন যেমন ধারাবাহিক পারফর্ম করে গেছেন, স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার কোটিয়ানও দিনের পর দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছেন। সর্বশেষ রঞ্জি ট্রফির একটি কীর্তির কথা তো আগে বলাই হলো। পুরো টুর্নামেন্টের গল্প শুনুন।
রঞ্জি ট্রফির সেই মৌসুমে কোটিয়ান করেছেন ৫০২ রান, ব্যাটিং গড় ছিল ৪১.৮৩। উইকেট নিয়েছেন ২৯টি, সেটা মাত্র ১৬.৯৬ গড়ে। টুর্নামেন্টে আর কোনো ক্রিকেটার ৫০০ রান আর ২৫ উইকেটের ‘ডাবল’ পাননি। তাতে টুর্নামেন্ট–সেরা পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতেই।
কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম সেঞ্চুরির পর সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে খেলেন অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংস। আর ফাইনালে ম্যাচে নেন ৭ উইকেট। সিরিজসেরা হতে আর কী লাগে!
মুম্বাইকে ২৭ বছর পর ইরানি কাপ জেতাতেও বড় ভূমিকা রাখেন কোটিয়ান। রেস্ট অব ইন্ডিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৬৪ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১১৪। কোটিয়ানের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি এসেছে যখন ১২৫ রান তুলতে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল মুম্বাই। বল হাতেও ৩ উইকেট নেন কোটিয়ান।
রঞ্জি ট্রফির চলতি মৌসুমে অবশ্য কোটিয়ানের সেরাটা এখনো দেখা যায়নি। ভারত ‘এ’ দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থাকায় মুম্বাইয়ের ৫ ম্যাচের মাত্র ২টিতে খেলেছেন। ২ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ১২টি। ৩ ইনিংস ব্যাটিং করে রান করেছেন ৩০।
সব মিলিয়ে কোটিয়ান প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৩৩টি। ১০১ উইকেট নিয়েছেন, সঙ্গে ৪১.২১ গড়ে ১৫২৫ রানও আছে।
বলা হচ্ছে স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার। নিয়মিত ব্যাটিং করেন লোয়ার অর্ডারে। আবার ব্যাটিং গড় ৪০–এর বেশি। কিছুটা গোলমেলে লাগাই তো স্বাভাবিক। আসলে অশ্বিন যেমন শুরুতে ব্যাটসম্যান ছিলেন, কোটিয়ানও একজন ব্যাটসম্যানই ছিলেন। তবে ধীরে ধীরে গুরুত্ব দেন ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই। আর পরিচিতি মেলে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবেই।
আমি আসলে ব্যাটসম্যান নাকি বোলার সেটা নিয়ে ভাবি না। যখন ব্যাটিং করি, বোলিং করি ও ফিল্ডিং করি, যেটাই করি, সেখানে প্রভাব রাখতে চাই
২০১৮-১৯ রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেকের ম্যাচেও ব্যাটিং করেন ৯ নম্বরে। বর্তমানে তিনি যে ৫০ ওভারের বিজয় হাজারে ট্রফি খেলছেন, সেখানে তিনি ব্যাটিং করছেন ৭ নম্বরে। অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটিং করেছেন ৮ নম্বরে।যদিও কোটিয়ান এখনো নিজেকে সত্যিকারের অলরাউন্ডারই ভাবেন।
ইএসপিএনক্রিকইনফোকে চলতি বছরের মার্চে তিনি বলেছিলেন এভাবে, ‘আমি আসলে ব্যাটসম্যান নাকি বোলার, সেটা নিয়ে ভাবি না। যখন ব্যাটিং করি, বোলিং করি ও ফিল্ডিং করি, যেটাই করি, সেখানে প্রভাব রাখতে চাই।’
অলরাউন্ডার সত্তা কিন্তু কোটিয়ানের পরিবারেই আছে। কোটিয়ানের বাবা কারুনাকারকে মুম্বাই শহরের টেপ টেনিস ক্রিকেটের রাজা বলা হতো, ‘বেড়ে ওঠার সময় আমি আমার বাবাকেই দেখেছি। তিনি ফাস্ট বোলার ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ছিলেন। তিনি যে খ্যাতি পেয়েছিলেন, সেটা আমাকে এই খেলা বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করেছে।’
আজই অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার কথা কোটিয়ানের। দেখা যাক, টেপ টেনিসের রাজার ছেলে আসল খেলার রাজা হতে পারেন কি না!