ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। ১৩৭ রানের বড় হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে সাকিব আল হাসানের দলকে। এ ম্যাচে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কোনো সুযোগই দেননি বাংলাদেশকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে কোনো চাপই তৈরি করতে পারেননি ডেভিল মালান-জনি বেয়ারস্টোদের ওপর, যা প্রথম ইনিংসের মাঝামাঝি সময়েই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের এমন অসহায় আত্মসমর্পণ নিয়ে এক টেলিভিশন টক শোতে কথা বলেছেন পাকিস্তানের সাবেক চার ক্রিকেটার—ওয়াসিম আকরাম, মঈন খান, শোয়েব মালিক ও মিসবাহ-উল-হক। যেখানে মিসবাহ বলেছেন, শুরুতে তাসকিন আহমেদের উইকেট না পাওয়া সাম্প্রতিক সময়ে ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। গতকাল ৬ ওভার বোলিং করে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। সেটিও আবার শেষ দিকে ক্রিস ওকসের উইকেট।এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও নতুন বলে উইকেট পাননি তাসকিন। সেদিন ৬ ওভার বল করে ৩২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।
তাসকিনের নতুন বলে উইকেট না পাওয়া বাংলাদেশকে চাপে ফেলছে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ, ‘বাংলাদেশ এ মুহূর্তে যা মিস করছে, তা হলো তাসকিন আহমেদের ফর্ম। সে উইকেট নেওয়ার মধ্যে ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে খুব ভালো করছিল। কিন্তু নতুন বলে এখন উইকেট পাচ্ছে না, যা বাংলাদেশকে অনেক চাপে ফেলে দিচ্ছে। আর ইংল্যান্ড যদি শুরুতে দাঁড়িয়ে যায় এবং ১০ ওভারে যদি উইকেট না পড়ে, তবে আর কিছু করার থাকে না। এরপর তারা বাংলাদেশকে ম্যাচে থিতু হতে দেয়নি।’
বাংলাদেশের বোলিংয়ের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মঈন খানও, ‘ইংল্যান্ড অনেক বড় দল। আর এখানে শুরুতে উইকেটে যেমনটা আশা করা হয়েছিল, উইকেট তেমন ছিল না। আর আমার মনে হয় না বাংলাদেশ খুব ভালো লাইন-লেংথে তারা বোলিং করেছে। যে কারণে মারও খেয়েছে অনেক। ম্যালান যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তা অসাধারণ ছিল। জো রুটের সঙ্গে তার জুটিটাও দুর্দান্ত ছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশের ইনিংসে কোথাও কোনো জুটি গড়তে দেখিনি। এই উইকেট নিয়ে বলা হয়েছিল, আগে যারা ব্যাট করবে বেশি রান করতে পারবে না, কিন্তু তা হয়নি। আর এই জয়ের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড জানিয়ে দিল যে তারা লড়াইয়ে ফিরে এসেছে।’
শোয়েব মালিক বাংলাদেশের বোলিং লাইনকে শক্তিশালী বললেও ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের বিপক্ষে কেন মোস্তাফিজ-তাসিকনরা ভালো করতে পারেননি, সেই ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বোলিং লাইন খুব ভালো। আজ নতুন যাকে আনল শেখ মেহেদী হাসান, খরুচে হলেও সে কিন্তু ৪ উইকেট নিয়েছে। তাদের কাছে ভালো করার সব উপাদান আছে। তারা যে–কাউকে হারাতে পারে। কিন্তু তারা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের অনেক জায়গা দিয়েছে। তবে এটা বলে জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ম্যালানকে ছোট করার সুযোগ নেই। তাদের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে বেয়ারস্টো ৫২ রান করছে, রুট ৮২ করেছে এবং মালান ১৪০ করেছে।’
কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম আরেকটু যোগ করেন এভাবে, ‘ইংল্যান্ড আজ প্রথম ১০ ওভারে ৩৭ ডট বল দিয়েও ৬১ রান করেছে। বাংলাদেশ শুরুতে ভালো বল করেছে। মোস্তাফিজুরের বল আউট সুইং হচ্ছিল। কিন্তু ইংল্যান্ড, যারা কিনা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর সাদা বলে তারা খেলেও ভিন্ন মানসিকতায়। ১০ ওভারে ৬১ করার পর তাদের প্রথম উইকেট পড়ল ১১৫ রানে এবং দ্বিতীয় উইকেট পড়ল ২৬৬ রানে। ততক্ষণে ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে।’
আলাপের শেষ দিকে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন শোয়েব, ‘লিটন দাস অনেক দিন ধরে আউট ফর্ম ছিল। কিন্তু আজ সে রান পেয়েছে। সে ৬৬ বলে ৭৬ রান করেছে। এরপর দেখেন, তানজিদ হাসান, নাজমুল হাসান, সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসানের রান হচ্ছে ১, ০, ১ ও ৮। এখানেই অনেক বড় পার্থক্য হয়েছে। কোনো জুটি হয়নি। এরপর মুশফিক ৫১ রান করেছে। লক্ষ্য অনেক বড় ছিল। কিন্তু মাঝে ব্যাটসম্যানরা যদি রান করত, তবে ইংল্যান্ডকে পরীক্ষায় ফেলতে পারত বাংলাদেশ।’