ক্যালিস হওয়ার স্বপ্ন ক্যাম্ফারের
‘চার-ছক্কা মারো, দেখি কেমন পারো’—আয়ারল্যান্ডের উইকেটকিপার নিয়াল ও’ব্রায়েন তরুণ অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফারকে বারবার কথাটা বলছিলেন। আয়ারল্যান্ড তখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার এক রাজ্য দলের বিপক্ষে খেলছিলেন আইরিশরা। সেই রাজ্য দলের হয়ে খেলছিলেন ১৮ বছর বয়সী ক্যাম্ফার। তরুণ প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের সঙ্গে স্লেজিংয়ের ফাঁকেই ও’ব্রায়েনের পরিচয়।
পারিবারিক সূত্রে ক্যাম্ফারের যে আইরিশ পাসপোর্ট আছে, সেটি জানতে পেরেই তরুণ প্রোটিয়া অলরাউন্ডারকে আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার প্রস্তাব দেন ও’ব্রায়েন। ক্যাম্ফারও সুযোগটা কাজে লাগান। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আয়ারল্যান্ড, এরপর দুই দেশেরই ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন ক্যাম্ফার। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। একই বছর আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ক্যাম্ফারের। পরপর দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলে ফেলেছেন তিনি। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে তো হ্যাটট্রিক করে তাক লাগিয়ে দেন এই তরুণ।
এবারের বিপিএলে ক্যাম্ফার খেলছেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এবারই প্রথম খেলছেন ২৩ বছর বয়সী এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তবে এটাই ক্যাম্ফারের প্রথম বাংলাদেশ সফর নয়। ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ড উলভস দলের হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। উপমহাদেশের কন্ডিশন কেমন হতে পারে, সে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে খেলেই হচ্ছে ক্যাম্ফারের, ‘একদমই ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আমি যার সঙ্গে পরিচিত নয়। তবে আমাকে এতে অভ্যস্ত হতে হবে। আমার খেলাটা কোন পর্যায়ে আছে, সেটা বড় মঞ্চের জন্য কতটা প্রস্তুত, সেটা বোঝার জন্য এ ধরনের টুর্নামেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভিন্ন কন্ডিশনে আমার খেলা কতটা মানানসই, সেটারও একটা ভালো পরীক্ষা এটি।’
আইরিশ ক্রিকেট এখন পালাবদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার হলো এ সময় চার-পাঁচজন তরুণ ক্রিকেটার দলে আছে, যারা কিনা ভবিষ্যতে বড় তারকা হওয়ার সামর্থ্য রাখে।
ক্যাম্ফারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছে একের পর এক চমকের মধ্য দিয়ে। ওয়ানডে অভিষেকেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে ফিফটি করে আলোচনায় আসেন। সর্বশেষ বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের পর তো ক্যাম্ফারের নাম সবার মুখে মুখে, ‘এ ধরনের শুরু আমি স্বপ্নেও চিন্তা করিনি। খুবই খুশি যে এত ভালো শুরু হয়েছে। হ্যাটট্রিক যেকোনো সংস্করণেই স্বপ্নের মতো অনুভূতি। সেটা যদি হয় বিশ্বকাপের মঞ্চে, তাহলে তো কথাই নেই। ওই হ্যাটট্রিকের পর পুরো ক্রিকেট–বিশ্বে আমার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সেই অভিজ্ঞতা মজার ছিল।’
বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের পারফরম্যান্সও ছিল চোখে পড়ার মতো। তারুণ্য যে আইরিশ ক্রিকেটে নতুন জোয়ার এনে দিচ্ছে, সে বার্তা পাওয়া গেল ক্যাম্ফারের কথায়, ‘আইরিশ ক্রিকেট এখন পালাবদলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার হলো এ সময় চার-পাঁচজন তরুণ ক্রিকেটার দলে আছে, যারা কিনা ভবিষ্যতে বড় তারকা হওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর তারা বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছে। জশ লিটল আইপিএল খেলছে। হ্যারি টেক্টর দ্রুততম এক হাজার ওয়ানডে রান করেছে। এখন হচ্ছে নিজেদের আরও পরিণত করার সময়।’
আগামী মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসবে আয়ারল্যান্ড। ৩টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলবে আইরিশরা। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর বাংলাদেশ দলের আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার কথা। তার আগেই বিপিএলের সৌজন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন ক্যাম্ফার, ‘আমরা যে ধরনের কন্ডিশন ও খেলার ধরনের সঙ্গে পরিচিত, সেটা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন খেলা হয় এখানে। এটা আমার জন্য চোখ খুলে দেওয়ার অভিজ্ঞতা। আশা করি, এখানে আমি যা দেখছি, তা দলের বাকিদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারব। বাংলাদেশ তাদের ঘরের মাঠে খুবই শক্তিশালী দল। ওরা সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে এমনিতে ওঠেনি। খুবই শক্তিশালী, খুবই ভারসাম্যপূর্ণ দল তাঁরা। আমাদের জন্য নিজেদের খেলাটা খেলা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, দ্রুত এখানকার খেলার ধরনটা ধরতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
ক্যাম্ফার এখন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার হলেও দক্ষিণ আফ্রিকান সেই হার না–মানা মানসিকতাটা ধরে রেখেছেন। ক্রিকেট মাঠে তাঁর শরীরী ভাষা বরাবরই আক্রমণাত্মক। ক্রিকেটীয় দক্ষতার চেয়ে এই মানসিকতাটাকেই নিজের শক্তি মনে করেন তিনি, ‘আমি টেকনিক্যালি নিখুঁত ক্রিকেটার ছিলাম না। আমার ব্যক্তিত্বটা লড়াই করে যাওয়ার মতো। ম্যাচের লড়াইটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি সেটা উপভোগ করি। দলের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজটা আমি সবার আগে করতে চাই। আমার ক্রিকেটটাই এমন। এতে আমি সাফল্যও পেয়েছি।’
দক্ষিণ আফ্রিকা আবার কিংবদন্তি অলরাউন্ডারদের দেশ। সেই সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা ক্যাম্ফার নিজেও ক্যালিস-ক্লুজনারের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ক্যাম্ফারের ব্যক্তিগত পছন্দ অবশ্য জ্যাক ক্যালিসই। ক্যালিসের ক্যারিয়ারের অর্ধেক অর্জন করতে পারলেও নাকি নিজেকে ধন্য মনে করবেন ক্যাম্ফার, ‘জ্যাক ক্যালিস একজন সুপারস্টার। এই জানুয়ারিতে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, প্রথমবার। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। খেলার জ্ঞান এত বেশি, কল্পনা করা যাবে না। আমি যদি তাঁর ক্যারিয়ারের অর্ধেকটাও অর্জন করতে পারি, তাহলে আমি খুবই খুশি হব।’