লাবুশেনও চান, ইংল্যান্ড ‘বাজবল’ খেলুক
‘সে তো আউট হয়ে গেছে। ৪০ রান করে।’
এজবাস্টন টেস্টে জো রুটের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করছিলেন কেভিন পিটারসেন। তাঁর কথা শেষ হওয়ার পর শুধু ওপরের দুটি বাক্য বলেছিলেন রিকি পন্টিং। প্যাট কামিন্সকে দিনের প্রথম বলেই রিভার্স স্কুপ করার চেষ্টা বা স্কট বোল্যান্ডকে একই শটে ছক্কা মারা রুট দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫৫ বলে ৪৬ রান। রুটের সে ইনিংসটিকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলছেন মারনাস লাবুশেন। অস্ট্রেলিয়ার এ ব্যাটসম্যান চান, ইংল্যান্ড সিরিজজুড়েই এমন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলুক। সেটি তিনি উপভোগও করছেন দারুণ। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’-এর একটা সুবিধাও দেখছেন লাবুশেন।
২৮ জুন থেকে শুরু লর্ডস টেস্টের আগে আজ অনুশীলন করেছে অস্ট্রেলিয়া। লাবুশেন সেখানে ইংল্যান্ডের এই খেলার ধরন ও প্রথম টেস্টে নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেছেন, ‘মিথ্যা বলব না, ইংল্যান্ড যেভাবে খেলছে, সেটি উপভোগ করি। ক্রিকেট দর্শক হিসেবে এর আগের সিরিজগুলো দারুণ লেগেছে আমার। আমার মনে হয় এটি রোমাঞ্চকর, বিনোদনদায়ী, দেখতে দারুণ। তবে দিন শেষে আমাদের দলের যে মান, তার অনেক নিচের ক্রিকেট খেলেছি আমরা।’
এজবাস্টনে ২ উইকেটে হারার পর থেকে ইংল্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, লর্ডসে আরও আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে তারা। জ্যাক ক্রলি বা ওলি রবিনসন বলেছেন, লর্ডসের উইকেট তাঁদের খেলার ধরনের সঙ্গে বেশ মানানসই। লাবুশেন অবশ্য ভিন্ন কথাই বলছেন, ‘তারা আমাদের বোলারদের বিপক্ষে কেমন করে, সেটি দেখার কথা ছিল। সেটি যে করতে পারে, তারা দেখিয়েছে। তবে লর্ডসে যখন উইকেটে আরেকটু বেশি কিছু থাকবে, তখন কেমন হবে? প্রথম টেস্টের পর আমরা ১-০-তে এগিয়ে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক, কারণ আমার মনে হয় না নিজেদের সেরাটি খেলেছি।’
লাবুশেনের ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, সেরাটা না খেলেও যদি এ ইংল্যান্ডকে হারানো যায়, তাহলে আরও ভালো খেললে স্বাগতিকদের অবস্থা খুব একটা ভালো হবে না। রুটের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে এরপর লাবুশেন বলেছেন, তাঁর অমন ব্যাটিং-ই অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে রেখেছিল।
লাবুশেন বলেন, ‘সে যেভাবে ব্যাটিং করছে, সেটি দুর্দান্ত। মানে সে যখন স্বাভাবিকভাবে ব্যাটিং করে, সেটির কথাই বলছি। সে সত্যিই ভালো খেলছে। তবে আমাদের দিক থেকে দেখলে, তার খেলার এই পদ্ধতি ও আর ওই শটগুলোই আমাদের ম্যাচে রেখেছিল।’
সেটি কীভাবে, লাবুশেন ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমি দ্বিতীয় ইনিংসটি উদাহরণ হিসেবে দেব। তার সামনে বোধহয় সুযোগ ছিল ম্যাচটি আমাদের হাত থেকে পুরোপুরি ছিনিয়ে নেওয়ার। কিন্তু সে যেভাবে খেলছিল, সেটিই আমাদের ম্যাচে রেখেছিল। অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছে, কিন্তু ৪০ (৪৬) রানেই আউট হয়ে গেছে। যদি ইনিংসটিকে সে ৮০ বা এর বেশি পর্যন্ত নিতে পারত, তাহলে আমাদের ৩০০ রান তাড়া করতে হতো। যেটি কঠিন একটা কাজ ছিল।’
এ কারণেই ইংল্যান্ডের খেলার ধরনের নিজেদের সুযোগ দেখছেন লাবুশেন, ‘তারা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছে, সে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। এটি দারুণ। কিন্তু এটিই আমাদের সুযোগ তৈরি করে দেয়। আশা করি, সিরিজের কোনো একপর্যায়ে গিয়ে এটি কাজে লাগবে।’
রোমাঞ্চকর এক জয় পেলেও এজবাস্টন ব্যক্তিগতভাবে লাবুশেনের জন্য গেছে ভুলে যাওয়ার মতোই। প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাকের পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৩ রান করেই ফিরে যান আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের তখনকার শীর্ষ ব্যাটসম্যান। দুবারই স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে উইকেটের পেছনে জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দেন তিনি। অমনভাবে আউট হওয়ার পর হতাশ লাবুশেন বলেছেন, ‘আমি যেভাবে খেলি, সে দুটি আউট আসলে এর সঙ্গে যায় না। এ কারণেই আমি নিজেকে নিয়ে খুব হতাশ। নিজেকে প্রশ্নও করেছি, “কেন ওই ডেলিভারিগুলোতে ব্যাট চালালাম?”’
উত্তরও পেয়েছেন সে প্রশ্নের, ‘আমি নিজের মতো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছি। আর যাতে এমন না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে কৌশল বা টেকনিকের দিক দিয়ে আমি কিছু করতে পারি কি না। ওসব বলে খেলাটা আমার জন্য মোটেও নিয়মিত ঘটনা নয়, ফলে খুব বেশি চিন্তাও করা যাবে না। তবে নিজেকে আমি ওই আউটগুলোর চেয়ে বেশ উঁচু মানেরই মনে করি।’
লাবুশেন অবশ্য কৃতিত্ব দিয়েছেন ব্রডকেও। সাধারণত ব্রডের বল ভেতরে ঢোকে, এ ভাবনা থেকে খেললেও লাবুশেনের বিপদ ঘটিয়েছে আউটসুইং। লাবুশেন বলেছেন, ‘প্রথম বলটিতে যা হয়েছে, বেশির ভাগ সময়ই খেলতে গিয়ে মিস করবেন, এরপর নিজেকেই বলবেন, “সমস্যা নেই।” তুমি ঠিকঠাক করতে পারবে। তবে আমি (রবিচন্দ্রন) অশ্বিনের ব্যাপারেও এটি বলেছি, যারা সময় নিয়ে হোমওয়ার্ক করে, খেলাটি বুঝে এবং নির্দিষ্ট কাউকে কীভাবে আউট করে সেটি খুঁজে বের করে। তাদের প্রতি আমার অনেক সম্মান। আর তারা যে সময় ও প্রচেষ্টা ব্যয় করেছে, সেটির ফল যদি মেলে, তাহলে তাদের কৃতিত্ব দিতেই হবে।’