বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ সফরে নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে সিরিজ জয় ছিল বিরাট ঘটনা। কেন? বিরাট ঘটনা কেন? কারণ, ওই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের দুটি জয় এসেছিল আগের ১৩ বছরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা ৭টি ম্যাচে পরাজয়ের পর।
ওই ১৩ বছরের ‘নিয়ম’ ছিল, নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে এসে ওয়ানডের পর ওয়ানডে হারবে, আবার নিউজিল্যান্ডে গিয়ে হারবে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড সেই ধারা বদলে দিতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো তা পারেনি। গত পরশু ডানেডিনে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পরাজয় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে বাংলাদেশের টানা ১৭তম।
তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়–পরাজয়ের হিসাবে গেলে একটা জয় অবশ্য খুঁজে পাবেন। তা যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নয়, তা তো বুঝেই ফেলেছেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেই জয় এসেছিল যে মাঠে, সেখানেই আগামীকাল (ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায়) সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
শহরের নাম নেলসন, যেটি বিখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের শহর হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ বিশ্বকাপে এখানে বাংলাদেশের জয়টা নানা কারণেই স্মরণীয়। বাংলাদেশ জিতেছিল সে সময় নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে। তামিম ইকবাল করেছিলেন সর্বোচ্চ ৯৫ রান। এবার তামিম ইকবাল নেই, তবে সেই ম্যাচে তাঁর ওপেনিং পার্টনার এনামুল হক আছেন।
যদিও এনামুলের সেই ম্যাচে ব্যাটিং করা হয়নি। ফিল্ডিংয়ের সময় ডান কাঁধে চোট পেয়ে ওই ম্যাচ তো বটেই, ছিটকে পড়েন বিশ্বকাপ থেকেই। এনামুলের প্রতিশ্রুতিময় ক্যারিয়ারের পথ হারিয়ে ফেলারও সেটাই শুরু। তখন পর্যন্ত ৩০ ম্যাচের ২৭ ইনিংসে ৩টি সেঞ্চুরি করা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ৩টি হাফ সেঞ্চুরিও ছিল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগানো—৭৭, ৮০ ও ৯৫। ওই চোট পাওয়ার পর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশ দলের বাইরে। দলে আসা–যাওয়া করতে করতে খেলতে পেরেছেন আর মাত্র ১৬টি ওয়ানডে।
নেলসনে গিয়ে এনামুলের তাই ওই সর্বনাশা ম্যাচের কথা মনে না পড়ে পারেই না। ওই ম্যাচ থেকে সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিমই শুধু আছেন এবারের দলে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে একমাত্র জয়ের ভেন্যু হিসেবে নেলসনকে যদি মনে রাখতে চান, এটাও মনে রাখা দরকার যে এরপর এখানে দুটি ওয়ানডেতে হেরেছেও বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ কে ছিল, তা বোধ হয় বলার দরকার নেই।
ডানেডিনের প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টি খুব ভুগিয়েছে। বাংলাদেশের ভোগান্তির তালিকা অবশ্য আরও দীর্ঘ। সৌম্য সরকারকে পঞ্চম বোলার হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা পুরোপুরিই ব্যর্থ। চার বিশেষজ্ঞ বোলার খেলানোর চিন্তা থেকে বাংলাদেশ দলের তাই সরে আসারই কথা। ব্যাটিংয়ে ব্যাটসম্যানরা আস্কিং রেটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। নেলসনে আরেকটি জয়ের গল্প লিখতে কোথায় কোথায় উন্নতি করতে হবে, সেটি তাই সবারই জানা। বাংলাদেশ দল তা পারবে কি না, সেটাই হলো প্রশ্ন।