মুমিনুলের সেঞ্চুরি ছাড়া বাংলাদেশের ইনিংসে আর কিছু নেই

নাজমুলের বিরুদ্ধে এলবিডব্লুর সফল আবেদন ভারতের খেলোয়াড়দেরএএফপি

দেশের বাইরে মুমিনুলের সেঞ্চুরি ‘দুর্লভ’ এক জিনিসই বলা যায়। এর আগে ক্যারিয়ারের ১২টি টেস্ট সেঞ্চুরির মাত্র একটিই বিদেশের মাটিতে করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান। ভাগ্যিস, কানপুরে আজ এই ‘দুর্লভ’ জিনিস আরেকবার দেখা গেছে। আর না হলে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংস হয়তো থেমে যেত অনেক আগেই। মুমিনুলের অপরাজিত ১০৭ রানের ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ২৩৩ রান।

মুমিনুলের পর বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান নাজমুল হোসেনের। বাংলাদেশের অধিনায়ক করেছেন ৩১ রান। এ ছাড়া সাদমান ইসলাম ২৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজ করেছেন ২০ রান। আর মাত্র দুজনই দুই অঙ্ক পেরোতে পেরেছেন-লিটন দাস ১৩ আর মুশফিকুর রহিম করেছেন ১১ রান। ভারতের পক্ষে যশপ্রীত বুমরা সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন। এ ছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ, আকাশ দীপ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। একটি মাত্র উইকেট পেয়ে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা।

মুমিনুলের সেঞ্চুরি উদ্‌যাপন
এএফপি

লাঞ্চের তখন মাত্র ৪ মিনিট বাকি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের লেগ স্টাম্পের ওপরের বলটাকে লেগের দিকে ঠেলে এক রান নিতে পারতেন মুমিনুল হক, খুব সহজেই। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক টেস্ট ক্রিকেটটাকে এভাবে দেখেন না। মারার বলটা মেরে দিতে হবে, সেটা ম্যাচের যে অবস্থায়ই হোক। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক তিনি এভাবে খেলেই হয়েছেন। সে সূত্র মেনে তিনি অশ্বিনের ওই বলটা নিচু হয়ে চালিয়ে দিলেন স্কয়ার লেগের দিকে। থার্ড ম্যাচে থাকা মোহাম্মদ সিরাজ একটুও নড়লেন না। বলটা বাউন্ডারিতে যাওয়ার পর হেঁটে হেঁটে কুড়িয়ে থ্রো করলেন।

ততক্ষণে বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের ভেতর থেকে সবাই বাইরে এসে দাঁড়ালেন। মুমিনুল হেলমেট খোলার চেষ্টা করছিলেন। আর নন স্ট্রাইকে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ, যিনি বরাবরই সতীর্থ সাফল্য উদ্যাপন করেন, তিনি হাত উঁচিয়ে চওড়া হাসি দিতে দিতে মুমিনুলের দিকে এগোতে থাকেন। মুমিনুল ততক্ষণে হেলমেট খুলে ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট উড়িয়ে ধরলেন, সেজদায় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করলেন। মুমিনুলের ১৩ তম সেঞ্চুরি এটি, ভারতের মাটিতে প্রথম, বাংলাদেশিদের মধ্যে মুশফিকুর রহিমের পর দ্বিতীয়, তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারেরও ঘরের বাইরে তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। গতকাল ৩৩-এ পা দেওয়া মুমিনুলের জন্য ইনিংসটি নিশ্চিতভাবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ইনিংসটি সাজিয়েছেন একের পর এক সুইপ শটের। ১৭২ বলে ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় সেঞ্চুরি করা পর্যন্ত ২৩টি সুইপ শট খেলেছেন তিনি। সংখ্যাটাই বলে দেয়, ভারতের দুই স্পিনার অশ্বিন ও জাদেজাকে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন তিনি। মুমিনুল বলের লাইন দেখেছেন, সুইপ খেলেছেন। বিশেষ করে অফ স্টাম্পের বাইরের বল পেলেই সুইপ, লেগ স্টাম্প হলে তো কথাই নেই।

আরও পড়ুন
টেস্টে ১৩তম সেঞ্চুরি করার পথে এমন সুইপ অনেকবারই খেলেছেন মুমিনুল হক
এএফপি

মমিনুলের সেঞ্চুরির আরেকটি মহত্ত্ব আছে। ভারতে এসে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের খুব একটা বড় ইনিংস খেলতে দেখা যায় না। সেটা মূলত অশ্বিনের কারণেই। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আউট করা বলা যে ভারতের হয়ে খেলেন! ২০১৯ সাল থেকে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে আসা বলগুলোর মধ্যে বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি মাত্র চারটি। বেন ডাকেট, উসমান খাজা, দিমুথ করুনারত্নের পর চতুর্থ ব্যাটসম্যান মুমিনুল। এই টেস্টে আবার মুমিনুল খেলেছেন তিন নম্বরে, এই পজিশনে ১৬ ইনিংস পর খেলতে নামলেন তিনি। তিন নম্বরে খেলা ৩১ ইনিংসের মধ্যে এটি মুমিনুলের ষষ্ঠ টেস্ট শতক, চারে ৩৫ ইনিংস খেলে মুমিনুলের সেঞ্চুরি সংখ্যা ৭।

ভারতীয় এক সাংবাদিক মুমিনুলের রেকর্ড ঘাটতে ঘাটতে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘মুমিনুল কি বিপিএলে দল পায়?’ উত্তরটা শোনার পর তিনি মুমিনুলের সঙ্গে চেতেশ্বর পূজারাকে মেলাতে চাইলেন। এই মুহূর্তে জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ বললে পূজারার ছবিটাই কল্পনায় আসে। ভারতের কাছে ‘বাংলাদেশের পূজারা’ মুমিনুলই। আজ সকালের সেশনকে দ্রুত বাংলাদেশকে আউট করে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কানপুর টেস্টটাকে জমিয়ে তোলার একটা চেষ্টা ছিল ভারতের। মুমিনুলের সেঞ্চুরি তা হতে দেয়নি। ম্যাচ থেকে ফল বের করার যা একটু আশা ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে গেল মুমিনুলে। এখন বড় কোন অঘটন না ঘটলে কানপুর টেস্ট ড্র’র দিকেই এগোচ্ছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৭৪.২ ওভারে ২৩৩ (মুমিনুল ১০৭*, নাজমুল ৩১, সাদমান ২৪, মিরাজ ২০, লিটন ১৩, মুশফিক ১১; বুমরা ৩/৫০, সিরাজ ২/৫৭, অশ্বিন ২/৪৫, আকাশ দীপ ২/৪৩, জাদেজা ১/২৮)।

আরও পড়ুন