যে কারণে অপরাধবোধে ভুগছেন এনামুল

ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে না পেরে হতাম এনামুল হকনিউজিল্যান্ড ক্রিকেট

ম্যাচ হারলে খারাপ লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু এনামুল হক বিজয়ের ক্ষেত্রে সেই খারাপ লাগাটা যেন একটু বেশি। খারাপ লাগার অনুভূতিটা পরিণত হচ্ছে অপরাধবোধে। মনের ভেতর দহন—আমিও তো পারলাম না দলকে জিতিয়ে আসতে!

ডানেডিনে আজ নিউজিল্যান্ডের ২৩৯ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছে ঠিক ২০০ রানে, যেখানে এনামুলের ৩৯ বলে করা ৪৩ রানই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। ভালো শুরু করে এর কাছাকাছি রান আরও অনেকেই করেছেন। এনামুলের মতো তাঁদেরও নিশ্চয়ই একই জ্বালা—ইনিংসটা আরেকটু লম্বা করতে পারলে তো আজ হয়েও যেতে পারত!

আরও পড়ুন

সেটি করতে পারেননি বলেই ম্যাচ শেষে অপরাধবোধে ভোগার কথা বললেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার এনামুল, ‘আমাদের ভালো সুযোগ ছিল, আমরা ব্যাটিংয়ে একটা ছন্দও পেয়েছিলাম। সবার চিন্তা ছিল যে আমরা ম্যাচ জিততে পারব। দোষটা আমিই নিতে চাই যে ভুল আমি করেছি। আমি যদি একটু বড় রান করে আসতাম, ম্যাচটা শেষ করে আসতাম, তাহলে খুব ভালো হতো। জয় দিয়ে শুরু করতে পারতাম। নিজের ভেতর অপরাধবোধ কাজ করছে।’

কেন থিতু হয়েও থাকতে পারলেন না উইকেটে, সেটারও ব্যাখ্যা খুঁজে পাবেন তাঁর কথায়, ‘আরেকটু পরিকল্পনা করে আমরা সাজাতে পারতাম। আমরা যদি আরেকটু ধৈর্য ধরতাম, আরেকটু লম্বা খেলতাম, তাহলে মনে হয় দৃশ্যপটটা ভিন্ন হতে পারত। যদি শেষ ৫ ওভারে ৫০ রানও লাগত, আমরা ম্যাচটাকে বের করে আনতে পারতাম।’

বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ বলে ৪৩ রান করেছেন এনামুল হক
এএফপি

এনামুলের আশা উইকেটে থিতু হয়েও বড় রান করতে না পারার ভুল সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে সবাই শুধরে নেবেন, ‘টপ অর্ডারকে দায়িত্ব নিতে হবে। আজকে আমি সেট হয়েছি, তবু ইনিংস বড় করতে পারিনি। আফসোস হচ্ছে। পরে যখনই আবার সুযোগ পাব, চেষ্টা থাকবে সেটা যেন বড় করতে পারি। এটা একেক দিন একেক ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে হবে। কোনো দিন সৌম্য সেট হবে, কোনো দিন লিটন বা শান্ত (নাজমুল)। তারা যখনই সুযোগ পাবে, সেটা যদি বড় করতে পারে, তাহলেই দৃশ্যপট বদলে যাবে।’

আরও পড়ুন

বল হাতে ৬ ওভারে ৬৩ রান দিয়েছেন, রানের ঘরটাও শূন্য। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এনামুল অবশ্য পাশেই দাঁড়ালেন সতীর্থের, ‘একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আরেকজন খেলোয়াড়ের মন্তব্য করাটা ঠিক নয়। টিম ম্যানেজমেন্ট এটা ভালো বুঝবে। সতীর্থ হিসেবে সবাই তাকে পুরো সমর্থন দেব। খেলোয়াড় হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব সব খেলোয়াড়কে সমর্থন দেওয়া।’

এনামুলের দৃষ্টিতে বারবার বৃষ্টির বাগড়াও ম্যাচে বাংলাদেশকে বেশ ঝামেলায় ফেলেছে, ‘কার্টেল ওভার যখনই হয়, তখন কিন্তু মূল বোলারদের বোলিংয়ে একটু সমস্যা হয়ে যায়। শরীফুল-মোস্তাফিজ কিন্তু পরের দিকে বোলিং করতে পারেনি। কারণ, একজন বোলার ছয় ওভারের বেশি করতে পারবে না। আমাদের পার্টটাইম বোলারদের দিয়ে চালাতে হয়েছে। কয়েকজনের ওভার হাতে থাকলে আমরা হয়তো সেটা কাজে লাগাতে পারতাম। বাতাস ছিল, স্পিনারদের দিয়ে চালাতে হয়েছে।’

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে তাদের পেস আক্রমণের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বরাবরই অস্বস্তিতে ভোগেন। আজও মাঝেমধ্যেই বাউন্সারে সমস্যা হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সবার জানা পুরোনো ব্যাখ্যাটাই দিলেন এনামুল, ‘ওদের পেসারদের উচ্চতা কিন্তু অনেক। যখন ওরা বল করে, তখন এমনিতেই একটা বাড়তি সুবিধা পায় বাউন্সের ক্ষেত্রে, যেটা আমরা সাধারণত খেলে অভ্যস্ত নই।’

ওয়ানডে সিরিজে এখনো দুই ম্যাচ বাকি। এনামুলের আশা, দ্রুতই সব পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন তাঁরা। ২০ ডিসেম্বরের পরের ম্যাচের আগের দুই দিনের অনুশীলনে কাজ করবেন এই ম্যাচের ভুল-ত্রুটি ও ব্যর্থতা নিয়ে।