টিকে থাকার ম্যাচেই এশিয়া কাপে সেরা ব্যাটিং বাংলাদেশের
সমীকরণটা সবার জানা। এশিয়া কাপে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের আজ আফগানিস্তানকে হারাতেই হবে। এমন দিনে বাংলাদেশ দল একাদশে এনেছে তিন পরিবর্তন। শুধু কি তা–ই? চমক ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপেও। যে মেহেদী হাসান মিরাজ লোয়ার অর্ডারে খেলে অভ্যস্ত, তাঁকেই ইনিংস উদ্বোধনে নামানো হলো! মিডল অর্ডারের চেনা মুখ তাওহিদ হৃদয়কেও তুলে আনা হলো তিন নম্বরে!
তবে ঘণ্টা দুয়েক পর বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচক নিয়ে নিশ্চয়ই কেউ কথা বলেননি। কারণ, ওপেনার মিরাজের ব্যাট থেকেই এসেছে অপরাজিত ১১২ রানের ইনিংস। হৃদয় তিনে নামায় এক ধাপ নিচে নেমে যাওয়া নাজমুল হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ১০৪ রান। দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রান তুলেছে। এশিয়া কাপে এটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
আফগানিস্তান বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নামার আগে কী চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, তা বাংলাদেশের ভালোই জানা। নতুন বলে ফজলহক ফারুকি ও মুজিব উর রেহমান বোলিংয়ে দুই প্রান্ত থেকে উইকেট শিকারের মিশনে নামবেন। আর ফারুকির সুইং যতটা ভয়ংকর, ততটাই মুজিবের ক্যারম বল। বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দুজনের সাম্প্রতিক রেকর্ডও দুর্দান্ত।
এমন পরিস্থিতিতে উপায় থাকে দুটি। প্রথমত, ইনিংসের শুরুতে দেখেশুনে খেলে দুজনের প্রথম স্পেলটা পার করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নেওয়া। বাংলাদেশ আজ ঝুঁকিপূর্ণ পথটাই বেছে নিয়েছে। উদ্বোধনে নামা মোহাম্মদ নাঈমই এতে নেতৃত্ব দিলেন। ফারুকির বলে ড্রাইভ ও কাট শটে বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছেন চারবার। আফগান বোলিংকে চাপে ফেলানোর জন্য তা যথেষ্ট ছিল। আর প্রতি আক্রমণে এলোমেলো আফগান বোলাররা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে অতিরিক্ত রান।
তাতে বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতেই ৬০ রান তুলে ফেলে। কিন্তু যাঁর সৌজন্যে বাংলাদেশের এই ভালো শুরু, সেই নাঈমকে পাওয়ারপ্লের শেষ বলে হারায় বাংলাদেশ। মুজিবের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা অবিশ্বাস্য ডেলিভারিটি সামনে পা বাড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেও ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি নাঈম। ৩২ বল খেলে ৫টি চারে সাজানো নাঈমের ২৮ রানের ইনিংসটি থামে তখনই।
আফগান স্পিনের কথা মাথায় রেখে গত ম্যাচে তিনে নেমে ৮৯ রান করা বাঁহাতি নাজমুল হাসানের জায়গায় নামানো হয় ডানহাতি তাওহিদ হৃদয়কে। অবশ্য আজ বেশি কিছু করতে পারেননি। পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই গুলবদিন নাইবের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। ২ বল খেলে কোনো রান না করেই ড্রেসিংরুমে ফিরতে হয় হৃদয়কে।
তবে বাংলাদেশ দলের একজন ডানহাতিকে ক্রিজে রাখার যে পরিকল্পনা, সেটি বাঁচিয়ে রাখেন মিরাজ। পাওয়ারপ্লের সতর্ক ব্যাটিংটা চালিয়ে যান মাঝের ওভারেও। সঙ্গে ছিলেন দারুণ ছন্দে থাকা নাজমুল। আগের ম্যাচে ক্যান্ডির কঠিন উইকেটে যিনি ৮৯ রান করেছেন, তাঁর তো লাহোরের ব্যাটিং স্বর্গ উপভোগ করার কথা। তা তিনি করেছেনও। ফ্লিক আর ড্রাইভে ইনিংসের শুরুতেই বাউন্ডারি খুঁজে নেওয়া নাজমুল ৫৭ বলে পেয়ে যান ফিফটি।
মিরাজ আরেকটু বেশি সময় নিয়েছেন। তিনি ৬৫ বল খেলে ফিফটি করেছেন। তবে দুজনের মধ্যে মিরাজই প্রথমে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছেন। ইনিংসের ৪১তম ওভারে গুলবদিনের বল লেগের দিকে ঠেলে পৌঁছে যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। ওপেনিংয়ে নেমে প্রথম সেঞ্চুরির উদ্যাপনটা অবশ্য মনের মতো করতে পারেননি। পানি শূন্যতায় পেশির টানের কারণে মিরাজের লাফিয়ে ওঠা উদ্যাপন দেখা যায়নি। ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়েই উদ্যাপন শেষ করেন মিরাজ। সেই পেশির টান মিরাজের ইনিংসেরও ইতি টানে। ১১৯ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ রান করে আহত অবসর হয়ে মাঠ ছাড়েন মিরাজ।
তাতে অবশ্য বাংলাদেশ দলের রানের গতি কমেনি। ৪৩তম ওভারে নাজমুল ১০১ বলে তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন। ৯টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাতে। রান আউট হওয়ায় সেঞ্চুরির পর তাঁর ইনিংস অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। ৪৫তম ওভারে ১০৫ বলে ১০৪ রানে থামে নাজমুলের ইনিংস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে এই দুজন যোগ করেন ১৯৪ রান। এশিয়া কাপে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ওয়ানডেতে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
বাংলাদেশের রানটাকে তিন শর ওপারে নিতে সাহায্য করেন দুই অভিজ্ঞ সাকিব ও মুশফিক। সাকিব অপরাজিত ৩২ রান যোগ করেন মাত্র ১৮ বলে। ১৫ বল খেলে ২৫ রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে।