অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত বোলিং, ২৪০–এ শেষ ভারত
রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি তো আছেনই। শুবমান গিল, শ্রেয়াস আইয়ার কিংবা লোকেশ রাহুল— ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের যার রেকর্ডের দিকেই তাকাবেন, কারো ওয়ানডে গড় ৪৯ এর কম নয়। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে প্রত্যেকেই আছেন ফর্মের তুঙ্গে। উইকেট যেমনই হোক, দারুণ ছন্দে থাকা ভারতীয়দের অল্প রানে আটকে রাখা চাট্টিখানি কথা নয়। আজ আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া সেই কঠিন কাজটাই করে দেখাল। দলগত বোলিং পারফরম্যান্সের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে ভারতকে ২৪০ রানে অলআউট করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছেন লোকেশ রাহুল।
বিশ্বকাপে ১২৫.৯৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত, ওপেনারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ২৯ বলে ৪৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে ভারতকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন। ফাইনালেও রোহিত হাত খুলে খেলবেন, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। হয়েছেও তাই। আহমেদাবাদের অসম গতির উইকেটে টাইমিংয়ে কষ্ট হলেও রোহিত খেলেছেন তাঁর গতিতে।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে টিকে থাকার অন্যতম শর্ত ছিল, দ্রুত ভারতের টপ অর্ডারের উইকেট নেওয়া। রোহিত তো বটেই, রোহিতের ওপেনিং সঙ্গী শুবমান গিল কিংবা বিরাট কোহলি, এঁদের কেউ একজন টিকে গেলেই যে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে রান বন্যা বইবে! অস্ট্রেলিয়ার নতুন বলে উইকেট নেওয়ার বিশেষজ্ঞ মিচেল স্টার্ক সেটি হতে দিলেন না। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ৭ বলে ৪ রান করা গিলকে মিড অনে ক্যাচ বানান তিনি।
উইকেট পতনের পরও অবশ্য রানের গতি কমেনি। রোহিত চার-ছক্কায় এগিয়ে নিচ্ছিলেন ভারতকে। উপায় না দেখে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বোলিংয়ে আনার জুয়া খেলেন প্যাট কামিন্স। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের উড়তে থাকা রোহিতের সামনে ম্যাক্সওয়েলের অফ স্পিন নিয়ে আসা জুয়া নয়তো কী! রোহিত সেই ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা ও তৃতীয় বলে মারেন চার। চতুর্থ বলেও ছক্কা মারার চেষ্টা ছিল। কিন্তু টাইমিং গড়বড় হওয়ায় বল চলে যায় কাভারে। সেখানে ট্রাভিস হেড উল্টো দিকে দৌড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন। ৩১ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৭ রানে থামে ভারতীয় অধিনায়কের ইনিংস।
অস্ট্রেলিয়ার নতুন বলের দাপট সেখানেই থামেনি। পরের ওভারেই কামিন্সের বলে কট বিহাইন্ড শ্রেয়াস আইয়ার। গত দুই ম্যাচে ১২৮ ও ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা শ্রেয়াস আউট হন ৩ বলে ৪ রান করে। ভারতের রান তখন ১০.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৮১।
ভারতের ভাগ্য, এমন বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তখনও ক্রিজে ছিলেন বিরাট কোহলি। পাঁচে তাঁকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য লোকেশ রাহুলও ছিলেন। দুজন মিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লিগ পর্বে ভারতকে ২ রানে ৩ উইকেটের ধস থেকে উদ্ধার করেন ১৬৫ রানের জুটি গড়ে। আজও দুজনের জুটি ভারতকে বিপদ মুক্ত করেছে। তবে দুজনকে ৬৭ রানের বেশি যোগ করতে দেননি অস্ট্রেলিয় অধিনায়ক।
উইকেটের অসম গতি কাজে লাগিয়ে কোহলিকেও ভুল শটের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ২৯তম ওভারে কামিন্সের ঠিক অফ স্টাম্পের একটু বাইরে করা বাউন্সারটি থার্ড ম্যানে ঠেলে খেলতে চাচ্ছিলেন কোহলি। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে বল টেনে আনেন স্টাম্পে। ৬৩ বল খেলে ৫৪ রানে থামে কোহলির ইনিংস। ৪টি চার ছিল তাঁর ৮৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।
৩৬তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজাকে (২২ বলে ৯ রান) রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে সিম মুভমেন্ট কাজে লাগিয়ে কট বিহাইন্ড করেন আরেক পেসার জশ হ্যাজলউড। ভারতের বড় ক্ষতিটা হয় ৪২তম ওভারে। অর্ধশত করে এগোতে থাকা রাহুল ভারতের ইনিংসটাকে আগলে রেখেছিলেন। ছোট ছোট জুটি গড়বেন, খেলবেন ৫০ ওভার পর্যন্ত; এটাই হয়ত ছিল লক্ষ্য। কিন্তু স্টার্ক সেটি হতে দেননি। ৪২তম ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে রাহুলকে কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন তিনি। ১০৭ বলে ১টি চারে ৬৬ রানে থামে রাহুলের লড়াকু ইনিংস। স্টার্কের দুর্দান্ত ডেলিভারিটি মনে করিয়ে দিচ্ছিল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়াসিম আকরামের বলে অ্যালান লাম্বের বোল্ড হওয়ার মুহূর্তটি।
ভারতের রান তখন ৪১.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ২০৩। সেখান থেকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানটাকে নিয়ে যান ২৪০-এ। অসম গতির উইকেটে এই রান জয়ের জন্য যথেষ্ট কী না, সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।