এম এ আজিজে মুমিনুলদের অন্য রকম একদিন
‘মুমিনুল ভাই কই?’
শনিবার দুপুরে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রশ্নটা অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছিল। বেশির ভাগই খুদে ক্রিকেটার। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্রিকেট একাডেমি থেকে মাঠে এসেছেন খেলা দেখতে। শনিবার এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে হয়ে গেল চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম আবাহনীর সে ম্যাচটায় অন্য রকম আবহ এনে দেয় টেস্ট দলের সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের উপস্থিতি।
চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে ম্যাচটি খেলেছেন মুমিনুল হক। একই দলে খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেনও। শুক্রবার ফতুল্লায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সুপার লিগের ম্যাচে মোহামেডানের বিপক্ষে ১৩৩ রান করেছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক। এম এ আজিজে সেই মোসাদ্দেককে চট্টগ্রাম আবাহনীর জার্সিতে দেখা গেল। প্রতিপক্ষ দল ব্রাদার্স ঢাকা থেকে ব্যাটসম্যান আল আমিনকে উড়িয়ে এনেছে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য মুমিনুলদের আবাহনীই জিতেছে ১১২ রানের বিরাট ব্যবধানে। ভেজা আউটফিল্ডের কারণে খেলা শুরু হতে দেরি হওয়ায় ম্যাচটা ছোট হয়ে আসে ৪০ ওভারে। আগে ব্যাট করে আবাহনী ৩৯.২ ওভারে করে ২৬৪ রান। মুমিনুল ২৪ বলে ২৯ রান করলেও মোসাদ্দেক ১ রানে আউট হয়েছেন। ব্রাদার্স জবাবে ২৮.৩ ওভারে অলআউট ১৫২ রানে।
তবে এম এ আজিজে ম্যাচের ফলাফলের চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল মুমিনুলকে ঘিরে। আবাহনীর ড্রেসিংরুমের সামনে ক্রিকেটার ও সমর্থকদের ভিড় সরছিলই না! উঁকি দিয়ে বারবার সবাই দেখছিলেন, কই আছেন মুমিনুল, করছেন কী?
খুদে ক্রিকেটারদের ভিড়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সানরাইজ ক্রিকেট একাডেমির জার্সি পরা শ্রীকান্তকে বেশিই কৌতূহলী মনে হলো। নিজের স্টিকারবিহীন বর্ণিল ক্রিকেট ব্যাটটা দিয়ে বারবার ড্রেসিংরুমের গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মুমিনুলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই, ব্যাটে মুমিনুলের অটোগ্রাফ চাই।
শ্রীকান্তের দেখাদেখি চট্টগ্রাম বেসিক ক্রিকেট একাডেমির আরও কয়েকজন ব্যাট নিয়ে হাজির। আবাহনীর ড্রেসিংরুমের সামনে তখন অটোগ্রাফ–শিকারিদের জটলা বেঁধে গেছে। কিছুক্ষণ হইচইয়ের পর ভেতরে বসা মুমিনুলের নজরে এল বিষয়টা। এরপর দলের একজনকে একাডেমির ছাত্রদের ব্যাটগুলো ড্রেসিংরুমে নিয়ে আসতে বলেন মুমিনুল।
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ…নাহ, ব্যাটের সংখ্যাটার হিসাব রাখা গেল না। মুমিনুল হাসিমুখে প্রতিটি ব্যাটে অটোগ্রাফ দিলেন। মুমিনুলের নাম লেখা ব্যাটগুলো ফিরে পেয়ে একাডেমির ছাত্রদের সে কী আনন্দ! চওড়া হাসি নিয়ে কয়েকজন ড্রেসিংরুমের সামনে থেকে সরে গেলেন অন্যদিকে।
এদিকে মুখে মুখে খবরটা যেন বিদ্যুৎগতিতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ছড়িয়ে পড়ে। আরও কয়েকজন ক্যাপ, গ্লাভস, টেনিস বল, ক্রিকেট নিয়ে হাজির হলেন অটোগ্রাফের আশায়। মুমিনুল তাঁদেরও হতাশ করলেন না। অটোগ্রাফ দেওয়ার ফাঁকে এই প্রতিবেদকের কাছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের খোঁজখবর নিলেন।
মুমিনুলের অটোগ্রাফ পেয়েও কয়েকজন সন্তুষ্ট হলেন না। তাঁদের মোসাদ্দেকের অটোগ্রাফও লাগবে। কিছুক্ষণ পর মোসাদ্দেকও খুদে ক্রিকেটারদের দাবি মেটালেন। অটোগ্রাফ–শিকারিদের একজন নিজের ব্যাটের এক পাশে মুমিনুল, আরেক পাশে মোসাদ্দেকের অটোগ্রাফ দেখিয়ে চওড়া এক হাসি দিলেন, যেন বিশ্ব জয়ের রোমাঞ্চ তাঁর চোখেমুখে।
ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে একজন টেস্ট ক্রিকেটারের উপস্থিতি কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে তা দেখা গেল।