খালেদ মাহমুদ বললেন, ‘আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না’

সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও তামিমফাইল ছবি

২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক।

দেড় যুগ ধরে সেটিই হয়ে থেকেছে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সর্বশেষ ঘটনা।

মাহমুদউল্লাহ গতকাল ফেসবুক পোস্টে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি আরও একবার সামনে এসেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে অবসর নেওয়ার সংস্কৃতি কি কখনো দেখা যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখন বেশ কঠিন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় না বলার এই সংস্কৃতি নিয়ে আজ কথা বলেছেন খালেদ মাহমুদ।

২০০‍৬ সালে বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে মাঠ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো মাহমুদ বলেছেন, ‘ওদের ক্যারিয়ারটা (মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, তামিম) বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা উজ্জ্বল ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা জায়গা থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছিল ওরা। আমি মনে করি, মাঠ থেকে অবসর নেওয়াটা ওদের প্রাপ্য। আমি মনে করি, যারা ওদের সমর্থক, যারা ওদেরকে ভালোবেসেছে এত দিন, তারাও ডিজার্ভ করে যে একটা বড় করতালির মধ্যে ওদের মাঠ থেকে বিদায় দেওয়া।’

আমি যখন অবসর নিয়েছি, তখন বলেছি এটা আমার শেষ ম্যাচ। যখন কেউ এটা বলে, তখন একটা আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে পারে।
খালেদ মাহমুদ

ভক্ত–সমর্থকদের প্রসঙ্গ নিয়ে খালেদ মাহমুদ এরপর যোগ করেন, ‘আমরা যারা সমর্থক ছিলাম, আমরা যারা ওদের ক্রিকেটকে ভালোবাসি, সেই সুযোগটা (মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার) আমাদের হয়তো হলো না। কেন ওরা মাঠ থেকে অবসর নিল না, ওরাই ভালো বলতে পারবে। হয়তো ওদের কোনো একটা কারণ থাকতে পারে। যেটা আমার মতামত, কোনো ছেলেকে অভিষেকের দিন মাঠেই ক্যাপ পরানো হয়। খেলাটা ছাড়ার সময়ও যদি মাঠ থেকে বিদায় হয়, জিনিসটা আরও প্রেজেন্টেবল হয়। যে খেলাটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, সেটা ছাড়াটা আসলেও কষ্টের।’

তামিম ইকবাল সম্প্রতি জাতীয় দলে আর না খেলার কথা বলেছেন। কোনো ধরনের ঘোষণা না দিলেও মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ার শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়। সাকিব আল হাসানও আর কখনো বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভালো না করার পর মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিককে নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। এরপর ফেসবুক পোস্টে মুশফিক ওয়ানডে থেকে আর মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন।

প্রিমিয়ার লিগে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কোচ খালেদ মাহমুদ
শামসুল হক

সঠিক সময়ে তাঁরা অবসর নিয়েছেন বলেই অবশ্য মনে করেন খালেদ মাহমুদ, ‘ওদের ক্যারিয়ারের যে সময়, দুজনেই ওয়াইজ ডিসিশন নিয়েছে। হয়তো ওরা চাইলে আরও কিছুদিন খেলতে পারত। সেটা কতটা ওয়াইজ হতো, আমি জানি না। মাঠ থেকে বিদায় নিলে হয়তো আরেকটু ভালো হতো। মাহমুদউল্লাহ অবসর নিত, গ্যালারি ভরা দর্শক থাকত, মানুষের হাততালিতে বিদায় নিত, সেটা ওর জন্য বড় পাওয়া হতো। আমি জানি না, ওরা কেন মাঠ থেকে অবসর নিতে চায় না। হলে ভালো হতো।’

আরও পড়ুন

মাঠ থেকে অবসর নিতে না পারায় অনেকেই বোর্ডের দায় দেখে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যোগাযোগ ঠিকঠাক হয় কি না, এ প্রশ্নও থাকে। তবে খালেদ মাহমুদ তেমন মনে করেন না, ‘আমি যখন অবসর নিয়েছি, তখন বলেছি এটা আমার শেষ ম্যাচ। যখন কেউ এটা বলে, তখন একটা আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনার ব্যবস্থা করতে পারে। বোর্ড কি কাউকে পুশ করতে পারে আপনি অবসর নেন? ওরা যদি বলত যে পরের সিরিজে অবসর নেব। তাহলে বিসিবি প্রস্তুতি নিতে পারে। ওরা যদি না বলে, বিসিবি বুঝবে কীভাবে। বিসিবিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’  

মাহমুদউল্লাহ গতকাল ফেসবুক পোস্টে অবসরের ঘোষণা দেন
প্রথম আলো

মাহমুদউল্লাহ–মুশফিকের মতো ক্রিকেটারের বিকল্প কে হবেন, এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে। দুজনেরই প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ার ছিল। এখন তাঁদের জায়গায় কে খেলবেন? এ নিয়ে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘ওদের অভিজ্ঞতা কেউ নিতে পারবে না। আপনি এটা কিনতে পারবেন না। ওরা শুরুতে বড় তারকা ছিল, তা না, তিলে তিলে নিজেদের গড়ে তুলেছে। হয়তো ওদের বদলি ১০০% পাবেন, তা–ও সত্যি কথা না। ওদের শূন্যস্থান হঠাৎ করে পূরণ না হলেও আমি মনে করি যথেষ্ট ভালো খেলোয়াড় আছে, যারা কি না এই জায়গা নিতে পারবে।’

আরও পড়ুন