ম্যাক্সওয়েল এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সবাইকে ছাড়িয়ে

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল যখন উইকেটে এলেন বেশ পরিপাটিই ছিলেন। ঝকঝকে জার্সির সঙ্গে উজ্জ্বল চোখমুখ। পরিস্থিতি অনুকূলে ছিল না। ব্যাটিং করেন ছয়–সাতে। ওখান থেকে বেশির ভাগ সময় ইনিংস শেষ করতে হয়। আজও ছয়েই নেমেছিলেন, কিন্তু দায়িত্বটা ঠিক মার মার কাট কাট ম্যাক্সওয়েলসুলভ ছিল না। অস্ট্রেলিয়া ৮.২ ওভারে ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। ম্যাক্সওয়েলকে দাঁড়াতে হয়েছিল হ্যাটট্রিক বলের সামনে।

আরও পড়ুন

তারপর ৩ ঘণ্টা ১ মিনিট সময়টা অনেকেই ছুঁয়ে দেখতে চাইতে পারেন! কেমন তাঁর অনুভূতি, কেমন তার রূপ–রস–ঘ্রাণ—সেটুকু বুঝতে। মানুষের সামর্থ্যের অনবদ্য প্রদর্শনী তো রোজ রোজ দেখা যায় না! আরব সাগরের তীরঘেঁষা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকাল সেই প্রদর্শনীই দেখালেন ম্যাক্সওয়েল। দলকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার পথে পায়ের মাংশপেশিতে টান পড়েছিল।

মাংশপেশীতে টান লাগায় মাঠে কয়েকবার শুয়ে পড়েন ম্যাক্সওয়েল
ছবি: এএফপি

অ্যাডাম জাম্পা কয়েকবার প্রস্তুত হয়ে ড্রেসিংরুম থেকে নিচে নেমে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল তাঁকে নামতে দেননি। দলকে একাই জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার পণ ছিল। আর ইচ্ছার বাস্তবায়নও করলেন সামর্থ্যের কী অবিশ্বাস্য প্রয়োগে! কাল অস্ট্রেলিয়া এই ম্যাচ জিতেছে ১৯ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে। দলের জয়ে ৬৮.৬০ শতাংশ রান একাই করে মাঠ ছেড়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ১০ ছক্বা ও ২১ চারে ১২৮ বলে ম্যাক্সওয়েলের এই অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসকে কী বলবেন?

ওয়ানডে ইতিহাসে অন্যতম সেরা? বাড়াবাড়ি মনে হলে অন্তত বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা তো বলাই যায়। তবে সবচেয়ে নিরাপদ বোধ হয় এই কথা—ম্যাক্সওয়েল একখণ্ড কাঠ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, মানুষের অসাধ্য বলে কিছু নেই। মানুষ চাইলে সব পারে, এমনকি পা ছাড়াও ব্যাট করতে পারে!

আরও পড়ুন

শেষ ১০ ওভারে আফগান বোলারদের যেভাবে লং অন থেকে ফাইন লেগ পর্যন্ত সীমানা দিয়ে বারবার পার করেছেন, সেটা এক পায়ে ভর করে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের ‘রেফারেন্স পয়েন্ট’ হতে পারে। ডান পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ায় ওই পা–টা যে নড়াতে পারছিলেন না। আরও কী চাই, গলফ কোর্সে চোট পাওয়ায় আগের ম্যাচটা খেলতে পারেননি। কাল দলে ফিরেই ম্যাক্সওয়েল এমন এক ইনিংস খেললেন, এখন থেকে গর্ডন গ্রিনিজের খোঁড়ানোর মতো তাঁকেও বলা হতে পারে ‘মাংসপেশিতে টান পড়া ম্যাক্সওয়েলের মতো ভয়ংকর আর কিছু হয় না!’

চোট নিয়েই অবিশ্বাস্য সব শট খেলেছেন ম্যাক্সওয়েল
ছবি: এএফপি

অথচ ম্যাচ শেষে ম্যাক্সওয়েলের মুখে বিনয়ের হাসি। কে বলবে, এই লোকটাই কিছুক্ষণ আগে ওয়ানডেতে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন!সম্প্রচারক চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলার সময় ভাগ্যকেও টানলেন, ‘সৌভাগ্যবশত শেষ পর্যন্ত থাকতে পেরেছি। ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি এবং নিজেদের ব্যাটিং পরিকল্পনায় থেকে ম্যাচটা জেতার চেষ্টা করেছি...এর আগে এমন ইনিংস খেলার সুযোগ পেলেও পুরোটা সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। আজ (কাল) সেটি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

আরও পড়ুন

এমন ইনিংসের দর্শক হিসেবে প্যাট কামিন্সেরই সবচেয়ে রোমাঞ্চিত হওয়ার কথা। ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংসটি তিনি দেখেছেন মাঠের সেরা জায়গা থেকে—নন–স্ট্রাইক প্রান্ত। শেষ ১০ ওভারে ম্যাক্সওয়েল যখন ঝুঁকি এড়াতে এক–দুই রান নেননি, তখন অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়েছেন কামিন্স। ওভারপ্রতি প্রায় ৬–এর মতো রান তাড়া করতে নেমে, যা দেখতেই অবিশ্বাস্য লাগার কথা!

কামিন্স এক প্রান্তে দর্শক হয়ে উপভোগ করেছেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় ইনিংস
ছবি: এএফপি

কিন্তু কামিন্স জানতেন, কেউ পারলে ম্যাক্সওয়েলই পারবেন! আর তাই অষ্টম উইকেটে তাঁদের রেকর্ড জুটিটির চেহারা দাঁড়াল এমন—১৭০ বলে অপরাজিত ২০২ রান। এর মধ্যে ম্যাক্সওয়েলের একারই অবদান ১০২ বলে ১৭৯! শেষ ১০ ওভারে ৬১ তুলেছে অস্ট্রেলিয়া, যেখানে ম্যাক্সওয়েলেরই ৫৯। হ্যাঁ, আরব সাগরের তীরে ওই সবুজ গালিচায় ম্যাক্সওয়েল কাল একাই খেলেছেন, বাকিরা দর্শক।

অবিশ্বাস্য!