৩টি ছক্কা, ৩টি ক্যাচ মিস, ৩টি ওয়াইড—কোনো ম্যাচের শেষ ওভারকে মহানাটকীয় করে তুলতে আর কী চাই!
মোহালির মুল্লানপুরে সেরকমই এক ওভার দেখা গেল। জয়দেব উনাদকাতের করা দীর্ঘ ওভারটিতে এল ২৬ রান। তবু হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারল না পাঞ্জাব কিংস। অল্পের জন্য পারলেন না শশাঙ্ক সিং ও আশুতোষ শর্মা। আগের ম্যাচের এই দুই নায়কের বীরত্বের পরও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে পাঞ্জাবকে হারতে হলো ২ রানে।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রান তুলেছিল প্যাট কামিন্সের হায়দরাবাদ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রীতি জিনতার পাঞ্জাব থেমেছে ৬ উইকেটে ১৮০ রানে। এটাই রানের হিসেবে হায়দবাদের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়। ভারতের তেলাঙ্গানা রাজ্যের দলটির আগের কম ব্যবধানের জয়টি ছিল ৩ রানে, ২০২২ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে। এ জয়ের পরও অবশ্য আইপিএলের পয়েন্ট তালিকায় নড়চড় হয়নি। ৬ পয়েন্ট নিয়ে হায়দরাবাদ পাঁচে আর ৪ পয়েন্ট নিয়ে পাঞ্জাব ছয়েই রয়ে গেল।
গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে নিজেদের আগের ম্যাচে কঠিন পরিস্থিতি থেকে পাঞ্জাবকে জিতিয়েছিলেন নিলামে ‘ভুলে বিক্রি হওয়া’ শশাঙ্ক আর ‘অচেনা’ আশুতোষ। সেদিন সপ্তম উইকেটে দুজন যোগ করেছিলেন ২২ বলে ৪৩ রান। আশুতোষ শেষ ওভারে আউট হলেও শশাঙ্ক দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। তবে আজ দুজনই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও অল্পের জন্য দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারলেন না।
অবশ্য আজ শশাঙ্ক ও আশুতোষকে আরও জটিল সমীকরণ মেলাতে হতো। শেষ ৪ ওভারে করতে হতো ৬৭ রান, শেষ ওভারে আরও কঠিন; ২৯ রান। আইপিএলে শেষ ওভারে এত রান নিয়ে জয়ের রেকর্ড যে নেই, তা নয়। গত বছরই রিংকু সিং যশ দয়ালের শেষ ওভারে ৫ ছক্কা মেরে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে অবিস্মরণীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন, রাতারাতি বনে গিয়েছিলেন আগামীর তারকা।
এমন কীর্তি তো আর প্রতি বছরই বলে–কয়ে করা যায় না। শশাঙ্ক–আশুতোষও রিংকুর কীর্তি ফেরাতে পারেননি। তবে দুজন মিলে পাঞ্জাবের হারের ব্যবধান যতটুকু কমিয়েছেন, সেটাই বা কম কী! ১৮৩ রান তাড়া করতে নামা দলটি যে ইনিংসের কোনো পর্যায়েই ম্যাচে ছিল না। প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৭ রান তুলেছিল পাঞ্জাব, যা এবারের আইপিএলে পাওয়ার প্লেতে সর্বনিম্ন।
অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান, ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এ ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ। স্যাম কারেন, সিকান্দার রাজা, জিতেশ শর্মারা ইনিংস লম্বা করার আভাস দিয়েও পারেনননি। তাই শুরু থেকেই মেরে খেলার যাবতীয় চাপ এসে পড়েছে আইপিএলে অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ শশাঙ্ক ও আশুতোষের ওপর।
একপেশে ম্যাচটাকে শেষ ওভারে জমিয়ে তোলার দায় অবশ্য হায়দরাবাদেরই। দলটির ফিল্ডাররা উনাদকাতের ওই ওভারে যে তিনটি ক্যাচ ছেড়েছেন, এর দুটিই হয়েছে ছক্কা। উনাদকাত নিজেও স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে না পেরে দিয়েছেন তিন–তিনটি ওয়াইড। তিনি একটি করে বল করছিলেন আর তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের পরামর্শের পরও দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না উনাদকাদ। তবে শেষ ওভারে ২৮ রান আটকানোর কাজ হাতে নিয়ে বোলিংয়ে এসেছেন বলেই হয়তো কোনোরকমে পার পেয়ে গেলেন।
এর আগে হায়দরাবাদও ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ে পড়েছিল। ৩৯ রান তুলতেই দলটি হারায় টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড, অভিষেক শর্মা ও এইডেন মার্করামকে। হাইনরিখ ক্লাসেনও ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগে আউট হন।
তবে চারে নামা নিতীশ রেড্ডি আজ হায়দরাবাদের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন। তাঁর ৩৭ বলে ৬৪ রানের সুবাদে হায়দরাবাদের ইনিংস ১৫০ ছাড়িয়ে যায়। আর শেষ দিকে আবদুল সামাদ ও শাহবাজ আহমেদের ‘ক্যামিও’তে দলটি পেয়ে যায় ১৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ। অর্শদীপ সিং নেন ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ: ২০ ওভারে ১৮২/৯
(নিতীশ ৬৪, সামাদ ২৫, হেড ২১; অর্শদীপ ৪/২৯, হার্শাল ২/৩০, কারেন ২/৪১)
পাঞ্জাব কিংস: ২০ ওভারে ১৮০/৬
(শশাঙ্ক ৪৬*, আশুতোষ ৩৩*, কারেন ২৯; ভুবনেশ্বর ২/৩২, কামিন্স ২/২২, নটরাজন ১/৩৩)
ফল: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নিতীশ রেড্ডি (সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)।