টাকার বিনিময়ে ভক্তদের সঙ্গে এক টেবিলে ডিনার বাবর-আফ্রিদিদের
বিতর্ক আর পাকিস্তান ক্রিকেট দল যেন সমান্তরালে চলে। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদিরা যা–ই করুন না কেন, চলে আসেন খবরের শিরোনামে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বাবর–আফ্রিদিরা, যা নিয়ে তাঁদের ওপর মনঃক্ষুণ্ন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফ।
টেক্সাসের ডালাসে আগামীকাল রাতে সহ–আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হচ্ছে। ইংল্যান্ডের মাটিতে টি–টোয়েন্টি সিরিজ শেষে বাবরের দল ডালাসে পৌঁছেছে শনিবার। যেহেতু এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জন্য আইসিসি কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ রাখেনি এবং ডালাসে পৌঁছানো ও আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার মাঝখানে পাঁচ দিনের বিরতি, এই সুযোগে তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের আয়োজিত এক নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন বাবর–আফ্রিদিরা।
ডালাসের সময় রোববার রাত ১১টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলা সেই আয়োজনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ (দেখা করুন ও অভিনন্দন জানান)। বিদেশে খেলতে গিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে কোনো পার্টিতে অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের জন্য দোষের কিছু নয়। কিন্তু বাবর–আফ্রিদিরা ‘মিট অ্যান্ড গ্রিট’ নামের যে পার্টিতে গিয়ে ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা ছিল টাকার বিনিময়ে।
২৫ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ হাজার ৯০০ টাকা) দিলেই পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে এক টেবিলে ডিনার করতে ও সেলফি তুলতে পেরেছেন ভক্ত–সমর্থকেরা। রশিদ লতিফ প্রশ্ন তুলেছেন এই ‘এন্ট্রি ফি’ নিয়েই।
১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে পাকিস্তানকে ৩১ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া লতিফ আজ ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আনুষ্ঠানিক নৈশভোজ তো আছেই, এর ওপর আবার ব্যক্তিগত নৈশভোজ। এমন কাজ কেউ কীভাবে করতে পারে? এটা ভয়ানক। এর অর্থ হচ্ছে আপনি ২৫ ডলারের বিনিময়ে আমাদের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। সৃষ্টিকর্তা না করুন, সেখানে কোনো গন্ডগোল বেঁধে গেলে লোকে বলত ছেলেরা (বাবর-আফ্রিদিরা) টাকা কামাচ্ছে।’
লতিফ মনে করেন, ব্যক্তিগত নৈশভোজ পাকিস্তান খেলোয়াড়দের জন্য বাজে চর্চা হয়ে উঠেছে, যা ভালো লক্ষণ নয়, ‘লোকে আমাকে বলে, পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের যে-ই ডাকে, তারা শুধু জিজ্ঞেস করে, “কত টাকা দেবে?” এটা বাজে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সময়ে ব্যাপারগুলো ভিন্ন রকম ছিল। আমরাও ২-৩টি নৈশভোজে অংশ নিতাম, কিন্তু সেসব আয়োজন ছিল আনুষ্ঠানিক। বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক কথা বলে ফেললাম, কারণ এখন বিশ্বকাপ চলছে। খেলোয়াড়দের সতর্ক থাকা উচিত।’
ভিডিওর শেষে উত্তরসূরিদের সুপরামর্শও দিয়েছেন লতিফ, ‘২৫ ডলার কারও এভাবে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। তোমরা ২-৩টি নৈশভোজে অংশ নিতেই পারো, কিন্তু তাতে বাণিজ্যিক স্বার্থ যেন জড়িয়ে না থাকে। তোমরা দাতব্য (সংস্থার) নৈশভোজে যেতে পারো, তহবিল সংগ্রহ করতে পারো। কিন্তু এই নৈশভোজ তহবিল সংগ্রহের বা দাতব্যকাজের জন্য নয়। এটি একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান, যার সঙ্গে পাকিস্তান ও পাকিস্তান ক্রিকেটের নাম জড়িয়ে। এ ধরনের ভুল আর কোরো না।’
বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের কয়েকজন সদস্যও গত রোববার সন্ধ্যায় ডালাসের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। স্থানীয় এক মসজিদের জন্য চাঁদা তোলাই নাকি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য ছিল। তহবিল সংগ্রহের সেই অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান। উদ্দেশ্য যেটাই হোক, বিশ্বকাপের মতো আসরে খেলতে যাওয়া ক্রিকেটারদের এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়ে বিসিবিও এরই মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে।