বিসিবি সভাপতি জানালেন, কেন হেরেছে বাংলাদেশ
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে হারের ব্যাখ্যাটা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তামিম ইকবালের মুখে শোনা গেছে গতকাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। ম্যাচ–পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে হারের আরেক দফা ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে সংস্কৃতি, তাতে ক্রিকেটার-কোচের বিশ্লেষণ অনেক দিনই আর যথেষ্ট নয়। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানও এটাকে তাঁর একটা দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছেন। এটা তাঁকে নিয়মিতই করতে হয়। ম্যাচের আগের দিন রাতে ক্রিকেটারদের ‘সাহস’ দিতে তাঁকে টিম হোটেলেও যেতে হয়। সেখানে আবার সংবাদ সম্মেলন করে কী কী করলেন, তার বর্ণনাও দিতে হয়।
আজও নাজমুল হাসান টিম হোটেলে গিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচের আগে তিনি ক্রিকেটারদের সাহস জুগিয়েছেন। তাঁর মুখেই শুনুন সে কথা, ‘আজ আসার পেছনে কারণ একটাই। প্রথম ম্যাচের আগে যেদিন এলাম, সেদিন সাকিবকে পাইনি। সাকিবের রিকোয়েস্টে এরপর সেকেন্ড ডেতে এলাম। ঠিক আছে, সাকিবসহ বসি। আসছিলাম ওদের সঙ্গে বসতে, সাহস দিতে, দেখতে। কয়েকটা দল আছে, তাদের সঙ্গে জেতাটা এত সহজ নয়। হারা–জেতাটা বড় কথা নয়, একটু সাহস দিতে...।’
এরপর তিনি ফিরে গেলেন গতকালের ম্যাচের ব্যবচ্ছেদে, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছে। আমরা সুযোগও পেয়েছিলাম। সুযোগ সব সময় আসে না। আমাদের বোলিং-ফিল্ডিং ভালো ছিল। প্রায় ১০০ রানে ওদের ৫ উইকেট পড়ে যায়। ভালো ভালো উইকেটও পড়ে যায়। রয়, বাটলার, যাদের নিয়ে আমরা ভয়ে ছিলাম। সেদিক থেকে আমাদের বোলিং-ফিল্ডিং ভালো ছিল। ওরাও যে খুব আরামে ব্যাটিং করেছে, তা নয়। পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছে ডেভিড ম্যালান। ওর ধৈর্যের কাছে আমরা হেরে গিয়েছি। আমাদের যদি ওই রকম ধৈর্য ধরত, যে আমি শেষ করে যাব, শেষ পর্যন্ত থাকব, তাহলে আমাদের লাভ হতো।’
শুধু কাল মাঠে নয়, আমি যখন এখানে দ্বিতীয় দিন এলাম, আমি শুধু তামিম ও সাকিবের সঙ্গে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। কোচও ছিলেন। তখনো তারা কথা বলেছে। তামিম একটা প্রশ্ন করেছিল, ও কী মনে করে? আর সে উত্তর দিয়েছে। আমি মাঠেও দেখেছি। এই জিনিসটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত। কারণ, এটা যে খেলায় কোনো প্রভাব ফেলে না, সে প্রমাণ আমি পেয়ে গিয়েছি।
প্রথম ম্যাচটা হারলেও বাংলাদেশের লড়াইয়ের প্রশংসা শোনা গেল বোর্ড প্রধানের কথায়, ‘আমাদের ওপেনিংটা ভালো হয়েছে। ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে মিরপুরের মতো কন্ডিশনে ৫১/১ করা, খুবই ভালো শুরু ছিল। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যে পরপর তিনটি উইকেট পড়ে যাওয়া, আমরা হয়তো একটু বেশি ঝুঁকি নিয়েছি। সে ঝুঁকি না নিলেই চলত। আমাদের আরও ৩০ রান হওয়া উচিত ছিল। হলেই যে জিতে যাব, সেটা বলছি না। তাহলে ওরা আরও বেশি চাপে পড়ে যেত। কিন্তু এত কম রান করেও ওদের যে আমরা চাপে ফেলেছিলাম, সেটার কৃতিত্ব ছেলেদের অবশ্যই দিতে হয়।’
মিরপুরের উইকেটের প্রসঙ্গও এসেছে। নিজেকে এক্সপার্ট মনে না করলেও এ প্রসঙ্গে তিনি উত্তরটা দিয়েছেন এক্সপার্টের মতোই, ‘আমাদের ওরা হয়তো ভেবেছে, অনেক রান করতে হবে। ইংল্যান্ড বাইরে যখন খেলে, তখন সাড়ে তিন শ-চার শ করে ফেলে। উইকেটটা সে রকম না, এখানে ২৪০-২৫০ হলেই হতো। আমি এক্সপার্ট নই। ওরা হয়তো ভেবেছে, আরও বেশি করতে হবে। যার জন্য ঝুঁকি একটু আগে নিয়ে নিয়েছে।’
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে সাকিব আল হাসান ব্যাটিং করেছেন পাঁচ নম্বরে। সেটা ঠিক ছিল কি না, এটা বোর্ড সভাপতিকে কেন বলতে হবে, তা একটা প্রশ্ন বটে। নাজমুল সেটিও বলেছেন, ‘একটা জিনিস জানি, সাকিব যদি কোনো জায়গায় ব্যাট করতে চায়, কোনো ক্যাপ্টেন, কোনো কোচ সেটা না করবে না। এটা যে তার অসম্মতিতে হয়েছে, এটার জন্য সে মনঃক্ষুণ্ণ, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমি নিজে ওকে জিজ্ঞেস করেছি, তিনে ব্যাট করতে চাও কি না। সে বলেছে, “দলের জন্য যেখানে দরকার, সেখানে করতে রাজি।” এটা পরিষ্কার বার্তা। এটা সাকিব, অধিনায়ক ও কোচকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।’
কয়েক দিন ধরে আলোচিত সাকিব-তামিমের সম্পর্ক নিয়েও নাজমুল হাসান প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যে দলে কোনো প্রভাব ফেলছে না, সেই নিশ্চয়তা দিয়েছেন তিনি, ‘শুধু কাল মাঠে নয়, আমি যখন এখানে দ্বিতীয় দিন এলাম, আমি শুধু তামিম ও সাকিবের সঙ্গে বসেছিলাম অনেকক্ষণ। কোচও ছিলেন। তখনো তারা কথা বলেছে। তামিম একটা প্রশ্ন করেছিল, ও কী মনে করে? আর সে উত্তর দিয়েছে। আমি মাঠেও দেখেছি। এই জিনিসটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত। কারণ, এটা যে খেলায় কোনো প্রভাব ফেলে না, সে প্রমাণ আমি পেয়ে গিয়েছি।’
‘জিনিসটা’ অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত। তবে বোর্ড সভাপতিকে যদি এই প্রশ্নটা করা হয়, ‘জিনিস’টা শুরু করেছিল কে?