২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সেই শাদাবই এখন ‘বাজির ঘোড়া’

পাকিস্তানের সহ–অধিনায়ক শাদাব খানছবি: শামসুল হক

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষের দৃশ্য সেটি। পাকিস্তান ডাগআউটে মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন অধিনায়ক বাবর আজম। অনুভূতিশূন্য চেহারায় দাঁড়িয়ে শাহিন আফ্রিদি, শান মাসুদ, মোহাম্মদ রিজওয়ানসহ অন্যরা। কিন্তু সহ–অধিনায়ক শাদাব খান তখন আশপাশে নেই। কোথায় গেছেন? পাকিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজার ইব্রাহিম বাদিস শাদাবকে খুঁজে ফেরেন ড্রেসিংরুমে যাওয়ার পথটায়। হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসে মাথা ঝুঁকে আছেন শাদাব। কাঁদছেন। হতাশায় মুষড়ে পড়া শাদাবের মতোই অবস্থা তখন পাকিস্তান দলের। ভারতের পর জিম্বাবুয়ের কাছেও শেষ বলে হার। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় যে প্রায় নিশ্চিত হয়েই গেল!

২৭ অক্টোবর চোখের জল ফেলা সেই শাদাবের টুইটার অ্যাকাউন্টটা এখন ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। হাসছেন, উল্লাস করছেন, সতীর্থের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে আছেন—প্রতিটি টুইটে যেন সুখী মানুষের প্রতিচ্ছবি। যে ছবি শুধু ব্যক্তি শাদাবের নয়, এখনকার পাকিস্তান দলেরও। মেলবোর্নে আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শিরোপা–নির্ধারণী ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। শাদাব যেখানে বাবরের ‘বাজির ঘোড়া’, পাকিস্তান সমর্থকদের স্বপ্নসারথি।

বলের মতো ব্যাট হাতেও এবারের বিশ্বকাপে উজ্জ্বল শাদাব
ছবি: এএফপি

সুপার টুয়েলভের দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে হারের ম্যাচটিতে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন শাদাব। ৩ উইকেট নেন পরের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। তবে প্রায় বাদ পড়া পাকিস্তানকে টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রাখতে দরকারটা বেশি ছিল ব্যাটিংয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ‘বাঁচা–মরা’র ম্যাচে সেই দরকারি কাজটিই দারুণভাবে করেন শাদাব। মাত্র ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা পাকিস্তান যে শেষ পর্যন্ত ১৮৫ রানের ভালো পুঁজি গড়ে, তাতে ৪ ছক্কা ৩ চারে খেলা শাদাবের ৫২ রানের ইনিংসটিরই ছিল মূল অবদান। মাত্র ২২ বলের ইনিংসটিতে শাদাবের স্ট্রাইক রেট ছিল ২৩৬.৩৬। লেগ স্পিনার হিসেবে পরিচিত শাদাবের এই ঝোড়ো ব্যাটিং অনেকের কাছে অচেনা লাগতে পারে। তবে ২০২০ সালের পর থেকে যে তিনজন ক্রিকেটার টি–টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের পাশাপাশি ১ হাজারের বেশি রান করেছেন, তাঁদের একজন ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারই (অপর দুজন সামিত প্যাটেল ও জেসন হোল্ডার)।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ জেতানো সেই ইনিংসের পর অবশ্য ব্যাট হাতে আর দাঁড়াতে হয়নি শাদাবকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামতে না–নামতেই দল জিতে গেছে, সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামতেই হয়নি। তবে ফাইনাল নিশ্চিতের ম্যাচটিতে ব্যাটিং–বোলিংয়ের বাইরে নিজের ‘অন্য হাত’টি ঠিকই ব্যবহার করেছেন। ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা নিউজিল্যান্ড ওপেনার ডেভন কনওয়েকে রানআউট করেন দারুণ এক সরাসরি থ্রোয়ে। টুর্নামেন্টে যা ছিল তাঁর দ্বিতীয় রানআউট। ব্যাট হাতে ৪ ইনিংসে ৭৮ আর বল হাতে ১০ উইকেটের ‘আসল অবদান’ তো আছেই। যার স্বীকৃতি হিসেবে আইসিসি তাঁকে টুর্নামেন্ট–সেরার সংক্ষিপ্ত মনোনয়নে জায়গা দিয়েছে।

পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর অবশ্য এরই মধ্যে শাদাবকে টুর্নামেন্ট–সেরার স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেছেন। গতকাল ফাইনাল–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে টুর্নামেন্ট–সেরার প্রশ্নে বাবরের জবাব ছিল এ রকম—‘যেভাবে খেলেছে, শাদাব খানেরই পাওয়া উচিত। বোলিং করেছে অসাধারণ, ব্যাটিংয়েও ভালো উন্নতি করেছে। শেষ তিনটি ম্যাচে অসাধারণ ফিল্ডিংসহ যে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, শাদাবই টুর্নামেন্ট–সেরার প্রধান দাবিদার।’