গুগল বলছে গুয়াহাটির তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রি, আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ। দুইয়ে মিলে গুয়াহাটির তাপমাত্রাকে বলা হচ্ছিল ‘অতিরিক্ত গরম’। গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের এক ক্রিকেটারের সঙ্গে কন্ডিশন নিয়ে কথা বলার পরই কৌতূহলী হয়ে গুয়াহাটির তাপমাত্রা দেখা। খেলার মাঠে দুই দলের ক্রিকেটারদের ঘর্মাক্ত চেহারা দেখার পর সেটি আরও পরিষ্কার হলো।
এমন কন্ডিশনে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দলের কতটা লাভ হলো, সেটা একটা প্রশ্ন। ‘গরম’ গুয়াহাটিতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশকে যেতে হবে ঠান্ডা আবহাওয়ার ধর্মশালায়। যেখানে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুটি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। অথবা বিশ্বকাপের লিগ পর্বের শেষার্ধে যখন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দেখা হবে, তখন সে ম্যাচের শহর দিল্লিতে থাকবে শীত।
তবে প্রস্তুতি ম্যাচ তো শুধু কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই নয়, নিজেদের সামর্থ্য দেখারও একটা ব্যাপার থাকে। সেদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি উদ্বোধনী জুটি। গুয়াহাটির ব্যাটিং উইকেটেও শ্রীলঙ্কাকে ৪৯.১ ওভারে ২৬৩ রানে আটকে রাখার পর সে রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে লিটন দাস ও তানজিম হাসান উদ্বোধনী জুটিতেই করে ফেলেন ১৩১ রান। আর সেটিই বাংলাদেশের ৭ উইকেটের জয়ের মঞ্চ গড়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়েছে।
পেস বোলাররা ভালো করছেন, স্পিনাররাও খারাপ করছেন না। দলে অনেক তরুণ ক্রিকেটার থাকায় ফিল্ডিংটাও ভালো এখন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের যত দুশ্চিন্তা ব্যাটিং নিয়ে, আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে টপ অর্ডারের ব্যাটিং। সর্বশেষ ১৩টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দল উদ্বোধনী জুটি থেকে একবারও এক শ রান পায়নি। হোক না প্রস্তুতি ম্যাচ, ১৩টি ওয়ানডের পর বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি আজই প্রথম এক শ ছাড়াল। লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৬১ রান, তানজিদ ৮৪ রান করেছেন।
গুয়াহাটির উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেও রান তো রানই। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে দুজনেরই জন্যই এই ব্যাটিংটা কাজে দেবে। লিটনের সর্বশেষ ১০ ইনিংসে ফিফটি ছিল ১টি। আর তানজিদ আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেছেন মাত্র ৫টি, তাতে সর্বোচ্চ ছিল ১৬ রান। আজকের ৮৮ বলে ৮৪ রানের ইনিংসটি তাই মূল টুর্নামেন্টের আগে তানজিদকে নিশ্চিত আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের জায়গায় সুযোগ পাওয়া তানজিদের ওপর আস্থা বাড়বে দলেরও।
আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে রান পেয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজও। চোটের কারণে নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচটা খেলা হয়নি মিরাজের। অনুশীলনে পায়ে সামান্য চোট পাওয়ায় ঝুঁকি এড়াতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ম্যাচটি খেলেননি। সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেনও একাদশে না থাকায় আজ মিরাজ নেতৃত্বও দিয়েছেন দলকে। ১০ ওভার বোলিং করে ব্যাটিং করতে নেমেছেন তিনে, ৬৪ বলে অপরাজিত ৬৭ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছেড়েছেন। ৪৩ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংসে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি সেরেছেন মুশফিকুর রহিমও।
স্পিন-পেস মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের বোলিং এখন কতটা ভালো ছন্দে, তা আজ আরও একবার দেখা গেছে। ব্যাটিং স্বর্গেও লঙ্কানদের অল্প রানে থামানো বোলিং আক্রমণে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা বাড়বে নিশ্চিত। বিশেষ করে আগে ব্যাট করে লঙ্কানরা যখন উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৪ রান পেয়ে যায়, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্বটা বোলারদের দিতেই হবে। সেটাও সাকিব আল হাসান নেই এমন ম্যাচে! মিরাজের সঙ্গে অন্য দুই স্পিনার মেহেদী হাসান ও নাসুম আহমেদ মিলে মাঝের ওভারগুলোতেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন।
কুশল মেন্ডিসকে আউট করে লঙ্কান ধসের শুরুটা নাসুমের হাত ধরে। এর আগে ২৪ বলে ৩৪ রান করে আহত অবসর নেন কুশল পেরেরা। শ্রীলঙ্কার আরেক ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা ৬৪ বলে ৬৮ রান করে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদীকে। এরপর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কোনো ব্যাটসম্যানই খুব একটা রানের দেখা পাননি।
ধনাঞ্জয়া মিরাজের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৭৯ বলে করেন ৫৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী। ৯ ওভার বোলিং করে এই অফ স্পিনার দিয়েছেন ৩৬ রান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান, শরীফুল ইসলাম, নাসুম ও মেহেদী হাসান। পেসার তাসকিন আহমেদ ৭ ওভার বল করে ২৯ রান দিয়ে পাননি কোনো উইকেট।