‘কঠিন সময়ে’ নারী দল, স্বস্তি মিলবে কবে
ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচ নিলেন রিতু মনি। সে ক্যাচ দেখে হাসছিলেন এমনকি আউট হওয়া ব্যাটার শেফালি বর্মাও। যেভাবে চেয়েছিলেন, সেভাবে হয়তো শটটা হয়নি, কিন্তু আউট হবেন, সেটিও হয়তো ভাবতে পারেননি শেফালি। রিতুর ওই ক্যাচের পর বাংলাদেশ দলের উদ্যাপনও হলো দেখার মতো। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে সবচেয়ে বড় উল্লাসের আওয়াজটা ভেসে এল তখনই।
ম্যাচে এমন উপলক্ষ অবশ্য খুব একটা আসেনি বাংলাদেশের জন্য। শেফালি আউট হন ৩৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে, ১১৮ রানের লক্ষ্যে ভারত ১২.১ ওভারেই তুলে ফেলে ৯১ রান। এরপর ৩৩ বল কোনো বাউন্ডারি মারেনি তারা, সে ম্যাচও জিতেছে ৯ বল বাকি থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার পর ভারত—এ নিয়ে টানা ৬টি ম্যাচ হারল বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষ ম্যাচটি ধরলে সে সংখ্যা ৭।
ছয় মাস ধরে দলটা ভালো করছিল। এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। আমাদের শান্ত থাকতে হবে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হবে।
যে টপ অর্ডার এত দিন আলোচনায় ছিল, অন্তত গত দুই ম্যাচে তারা বেশ ভালোই করেছে। আজ তৃতীয় টি–টোয়েন্টিতে তো দিলারা আক্তার ভারতকে বেশ চাপেই ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও সেই ১২০ রানের চক্র থেকে বেরোতে পারছে না বাংলাদেশ, প্রায় প্রতিদিনই পুড়তে হচ্ছে আরও কিছু রানের আফসোসে। বলের চেয়ে কম রান দরকার—এমন লক্ষ্যে ভারতের মতো দলের যেভাবে খেলার কথা, শেষ দুই ম্যাচে তারা খেলেছে সেভাবেই। গত ম্যাচে দয়ালান হেমলতার পর এবার ঝড় তুললেন শেফালি বর্মা।
সময়টা যে মোটেও সুবিধার যাচ্ছে না, সেটি আজ ম্যাচ শেষে নিজেই বললেন বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা, ‘ছয় মাস ধরে দলটা ভালো করছিল। এখন কঠিন সময় যাচ্ছে। আমাদের শান্ত থাকতে হবে, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিতে হবে।’
লেগ স্পিনার রাবেয়া খান বলেছেন, দল নাকি চাপে আছে। কী সেই চাপ, কোথা থেকে আসছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁর উত্তর, ‘ম্যাচ হারলে তো পরের ম্যাচে চাপ তৈরি করবেই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। আজ জিতলে ওরা সিরিজ জিতে যেত, সবাই তাই মানসিক দিক দিয়ে একটু চাপে ছিল। তারপরও চেষ্টা করেছি।’
সে চাপের কারণেই কি না, রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও বাংলাদেশ দেখিয়ে যাচ্ছে বাজে ক্রিকেটের প্রদর্শনী। দিলারা আক্তারের কথাই ধরুন। বাংলাদেশ ওপেনার মাত্রই তখন জীবন পেয়েছেন ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে। এরপর ২ রান নিতে গিয়ে বোলার পূজা বস্ত্রকরের সঙ্গে একটু ধাক্কা লাগল। দিলারা যেন হিতাহিত হারিয়ে ফেললেন এরপর। ব্যাটটা হাত থেকে পড়ে গেল, ক্রিজে যে পৌঁছাতে হবে, সেটি যেন মনেই ছিল না! শেষ পর্যন্ত শ্রেয়াঙ্কা পাতিলের থ্রো-টা স্টাম্পের ওপর দিয়ে যাওয়াতে রক্ষা।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দিলারা বেঁচে গেলেও তিনজন হয়েছেন রানআউট। এর মধ্যে আছেন মুর্শিদা খাতুনও। ছয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা এই ব্যাটার এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে রানআউট হলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, দুবারই তিনি রানআউট হয়েছেন ফ্রি হিটে!
রানআউট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া যেন অসহায় আত্মসমর্পণই করলেন, ‘রানআউটটা কখনোই ভালো নয়। এটা ম্যাচে আপনাকে পিছিয়ে দেবেই।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই ব্যাটারদের ব্যর্থতার মাঝেও বোলাররা লড়াই করেছেন। তবে আগের দুই ম্যাচে, বিশেষ করে পাওয়ারপ্লেতে ভারতের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। অধিনায়ক নিগারকে ভাবাচ্ছে সেটিও, ‘তারা (বোলাররা) ভালো করছে প্রতিবারই। কিন্তু ব্যাটিং বিভাগ আমাদের ডোবাচ্ছে। তবে (আজ) পাওয়ারপ্লেতে যেভাবে বোলিং করেছি, সেটি উদ্বেগের বিষয়। পাওয়ারপ্লের পর আমরা বেশ ভালো করেছি। নাহিদা এবং অন্য বোলাররা ইনিংসের শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’ কিন্তু ততক্ষণে যে বেশ দেরিই হয়ে গেছে!
বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সটা যেন ফুটে ওঠে রাবেয়ার কথাতেই, ‘হয় ওপেনাররা ভালো করছে, নাহয় লোয়ার অর্ডার ভালো করছে। (কিন্তু) ধারাবাহিকতাটা পাচ্ছি না।’
অর্থাৎ সমন্বিত পারফরম্যান্সটাই দেখাতে পারছে না দল। এমন কঠিন সময়ে তাই রিতুর একটা ক্যাচেই যা একটু উল্লাস আর উদ্যাপন করতে হচ্ছে।