বিমানে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে ফেলেছিল ডাচরা
স্কট এডওয়ার্ডসদের এতক্ষণে আমস্টারডামে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল!
অন্তত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এমনই পরিকল্পনা ছিল নেদারল্যান্ডস দলের। কিন্তু ডাচ রাজধানীতে যাওয়ার বদলে এডওয়ার্ডসদের গন্তব্য এখন হোবার্ট। সোমবার বেলেরিভ ওভালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে নেদারল্যান্ডস। শুধু সোমবার নয়, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ওঠায় আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতেই থাকবে ডাচরা। ফিকে হয়ে যাওয়া স্বপ্নটা যে ভাগ্যের পরশে আচমকাই জেগে উঠেছে!
এবারের বিশ্বকাপটা দারুণভাবেই শুরু করেছিল নেদারল্যান্ডস। প্রথম ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে জয় ৩ উইকেটে। পরের ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে জিতেছে ৫ উইকেটে। ‘এ’ গ্রুপের বাকি তিন দলের কারও দুটি দুই জয় ছিল না। জয়ের সংখ্যায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার পর রানরেটে মার খেয়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
যে কারণে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার কাছে ১৬ রানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ছিটকে পড়ার পথেই ছিল নেদারল্যান্ডস। সম্ভাবনা যেটুকু ঝুলে ছিল, সেটি আরব আমিরাতের ওপর। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আমিরাত নামিবিয়াকে হারালেই শুধু নেদারল্যান্ডস উঠতে পারবে, এই ছিল সমীকরণ।
কিন্তু আগের দুই ম্যাচের দুটিতেই হেরে যাওয়া আমিরাত কি নামিবিয়াকে হারাতে পারবে? যে নামিবিয়া টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে! এসব প্রশ্নও ছিল ডাচ্দের মনে।
আমিরাতের পক্ষে বাজি ধরার চেয়ে হোটেলে ফিরে ব্যাগ–ব্যাগেজ গোছানোই বরং সহজ মনে হয়েছে এডওয়ার্ডসদের। ক্রিকইনফো জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর শুক্রবার সকালে নেদারল্যান্ডসগামী বিমানে চড়ার পরিকল্পনা করছিলেন এডওয়ার্ডসরা।
নিজেদের ম্যাচ শেষে নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক এডওয়ার্ডস যখন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার সময় সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। নেদারল্যান্ডস খেলোয়াড়দের আলোচনা তখন আমিরাত–নামিবিয়া ম্যাচ নিয়ে। মাঠে বসে খেলা দেখবেন নাকি হোটেলে ফিরে ব্যাগ গোছাবেন। এডওয়ার্ডস সিদ্ধান্ত নেন মাঠে বসেই খেলা দেখবেন। তবে সবাই খেলা দেখেননি।
বিক্রমজিত সিং, টিম প্রিঙ্গল, পল ফন মিকেরেনরা চলে যান খেলোয়াড়দের ডাইনিংয়ে, অন্যরা ফিরে যান টিম হোটেলে।
খেলা শুরুর পর হোটেলে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তই ভালো মনে হয়েছে কারও কারও। রান তুলতে হিমশিম খাচ্ছিল আমিরাত। শ্রীলঙ্কার ১৬২ রান তাড়া করতে নেমে নেদারল্যান্ডস দেড় শর কাছাকাছি চলে গেছে, সেখানে আমিরাত ১৩০ রানের পুঁজিও দাঁড় করাতে পারবে কি সন্দেহ ছিল। ১৮ ওভার শেষে আমিরাতের ৩ উইকেটে ১১৮ রান ছিল তেমনই ইঙ্গিত।
তবে পরের দুই ওভারেই নেদারল্যান্ডস খেলোয়াড়দের মন ভালো করে দেন সিপি রিজওয়ান আর বাসিল হামিদ। ডেভিড ভিসা আর জেজে স্মিটের শেষ দুই ওভারে তিন ছয় দুই চার মিলিয়ে স্কোরবোর্ডে রান ১৪৮–এ নিয়ে যায় আমিরাত। হঠাৎ করেই যেন আশার বাতাস বয়ে যায় নেদারল্যান্ডস ক্যাম্পে।
আমিরাত দর্শকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রিজওয়ান–বাসিলদের সাফল্যে গলা মেলানো শুরু করেন এডওয়ার্ডসরাও।
সুপার টুয়েলভে স্বপ্ন আরও দোলা দেয় নামিবিয়া ব্যাটিংয়ে নামার পর। পাওয়ার প্লেতেই ৩ উইকেট তুলে নেয় আমিরাত। নামিবিয়ার রান যখন ৩ উইকেটে ৪৩, ডাইনিং ছেড়ে হোটেলের দিকে রওনা দিয়েছিলেন বিক্রম–প্রিঙ্গলরা। স্টান্ডে রয়ে যান এডওয়ার্ডস।
নামিবিয়ার আরও ২ উইকেট পড়তে দর্শকদের সঙ্গে নিয়ে সেলফিও তুলে ফেলেন ডাচ অধিনায়ক। কিন্তু নামিবিয়ার ভিসা ব্যাটিংয়ে নামার পর আবার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেন। পেশাদারিত্বের খোলস ছেড়ে ততক্ষণে দর্শকে পরিণত হয়েছেন এডওয়ার্ডস। জহুর খানের বলে ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ক ও জেইন গ্রিন আউট হতে আসন ছেড়ে লাফও দিয়ে উঠলেন, বাতাসে ছোড়েন ঘুষিও।
নামিবিয়াকে ৭ উইকেটে ৭০ রানে রেখে দ্রুত হোটেলে ছোটেন এডওয়ার্ডস। উদ্দেশ্য সবাইকে নিয়ে উদ্যাপন।
তখন নেদারল্যান্ডসের সুপার টুয়েলভে ওঠার পথে বাধা শুধু ভিসা। ৩০ বলে ৬৪ রানের সমীকরণ চোখের পলকে ১২ বলে ২০ রানেও নিয়ে আসেন নামিবিয়া অলরাউন্ডার। মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বের করেই নিয়ে গেছেন ভিসা।
কিন্তু নেদারল্যান্ডসের জন্য নায়ক হয়ে দেখা দেন আমিরাতের মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাঁর পঞ্চম স্টাম্পে ফেলা বল লং অন দিয়ে ওড়াতে গিয়ে আলিশান শরাফুর হাতে ধরা ভিসা। আমিরাতের সঙ্গে জিতে যায় নেদারল্যান্ডসও।
এডওয়ার্ডস–প্রিঙ্গল, ম্যাক্স ও ডাউডরা তখন একে–অপরকে জড়িয়ে উল্লাসে মত্ত, কেউ একজন তখন ফোনও করেন এয়ারলাইনসে আমস্টারডামগামী ফ্লাইট বাতিল করতে!