সাকিব আবার ফেল, ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা
গত ২১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে দেওয়া বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষায়ও সাকিব আল হাসান ব্যর্থ হয়েছেন। দিনদুয়েক আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে সেই পরীক্ষার ফলাফল জেনেছে বিসিবি। তার ভিত্তিতে সিলেটে কাল গাজী আশরাফ হোসেন বিষয়টিকে বলেছেন ‘শকিং’। তবে কাল রাত পর্যন্ত লিখিতভাবে ফলাফল না জানতে পারায় বিসিবি বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে পারছে না।
আইসিসির অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বোলারের অ্যাকশন প্রথমবার অবৈধ ঘোষণার পর দুই বছরের মধ্যে আরেকবার নিষিদ্ধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি পরের এক বছর বোলিং করতে পারবেন না। এমনকি ওই এক বছরের মধ্যে অ্যাকশন শোধরানোর পরীক্ষাও আর দিতে পারবেন না।
নিয়ম অনুযায়ী আইসিসি মনোনীত কোনো সেন্টারে পরীক্ষা দিয়ে অ্যাকশনের বৈধতার ছাড়পত্র না নেওয়া পর্যন্ত সাকিব ঘরোয়া ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোথাও বোলিং করতে পারবেন না। তবে বোলিং অ্যাকশন ত্রুটিমুক্ত করতে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। যে মুহূর্তে তাঁর মনে হবে অ্যাকশনে আর সমস্যা নেই, তিনি তখন আইসিসি অনুমোদিত কোনো সেন্টারে অ্যাকশনের পরীক্ষা দিতে পারবেন।
বিসিবির একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, চেন্নাইয়ের পরীক্ষায় আসা নেতিবাচক ফলটিতে ‘টেকনিক্যাল এরর’ বা কারিগরি ত্রুটি থেকে থাকতে পারে বলে তাঁরা শুনেছেন। সে ক্ষেত্রে এই পরীক্ষার ফলাফল ধর্তব্যের মধ্যে আনা হবে না। সাকিব ‘দ্বিতীয়’ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন আবারও।
চেন্নাইয়ে সাকিবের বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষাটি হয়েছে তাঁর আর ইসিবির যৌথ ব্যবস্থাপনায়। এই পরীক্ষার রিপোর্ট যাবে ইসিবিতে। এরপর তারাই সেটি বিসিবিতে পাঠাবে বা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করবে।
সাকিবের চেন্নাইয়ের পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে কাল রাতে বিসিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আন–অফিশিয়ালি শুনেছি যে সে চেন্নাইয়ে অ্যাকশনের পরীক্ষায় ফেল করেছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগপর্যন্ত এ ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু বলা সম্ভব নয়।’
এর আগে গতকাল শোনা গিয়েছিল ২১ ডিসেম্বরের পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক আসায় চেন্নাইয়ে এরই মধ্যে আরেকবার পরীক্ষা দিয়েছেন সাকিব। যদিও এই তথ্য কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। বরং জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে সাকিব যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন।
গত সেপ্টেম্বরে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের ডিভিশন ওয়ানের একটি ম্যাচে। টুর্নামেন্টে সারের হয়ে সমারসেটের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব। টন্টনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ১১১ রানে হেরে গিয়েছিল সারে। কিন্তু দুই ইনিংসে ৬৩ ওভার বোলিং করে সাকিব নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। ম্যাচের প্রায় দুই মাস পর জানা যায়, ওই ম্যাচে সাকিবের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আম্পায়াররা।
পরে ২ ডিসেম্বর বার্মিংহামের অদূরে লাফবরো ইউনিভার্সিটির মেডিকেল বিভাগে বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দেন সাকিব। পরীক্ষার পর তাঁর কাছের একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছিল, লাফবরোর বিশেষজ্ঞদের সামনে মোট চার ওভার বোলিং করা সাকিব আশাবাদী ছিলেন, তাঁর বোলিং অ্যাকশনে কোনো ত্রুটি ধরা পড়বে না।
তবে ওই চার ওভারের মধ্যে প্রথম তিনটি ওভার তিনি করেছিলেন তাঁর নিয়মিত অ্যাকশনে। শেষের এক ওভার বোলিং করেন একটু জোরের ওপর, মূলত যে ডেলিভারির অ্যাকশনের কারণে কাউন্টির ম্যাচে আম্পায়ারদের কাছে তাঁর অ্যাকশন ত্রুটিযুক্ত মনে হয়েছিল বলে সাকিবের ধারণা।
১০ ডিসেম্বর পাওয়া লাফবরোর ফলাফলে জানা যায়, তাঁর অ্যাকশন অবৈধ। ২১ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ে দেন দ্বিতীয় পরীক্ষা, যেটির ফলাফল সত্যি সত্যি নেতিবাচক হলে সাকিবের জন্য তা বড় দুঃসংবাদই হবে। তাঁর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিকে খেলা নিয়ে এমনিতেই অনেক বাধা। এখন যদি তিনি বোলিংও করতে না পারেন, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন, বিসিবি হয়তো তাঁকে দলভূক্ত করার আগে দ্বিতীয়বার ভাববে।
অবশ্য আইসিসির নিয়মে যদি বোলারের মনে হয় তাঁর অ্যাকশন পরীক্ষার রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ, তাহলে এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ আছে।