মিরাজের রোমাঞ্চ, লিটনের প্রেরণা
‘আমি কোনটা পাব?’ কাল সোনারগাঁও হোটেলে সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারে এসেই মেহেদী হাসান মিরাজ হাসতে হাসতে প্রশ্নটা করলেন। উত্তরটা অবশ্য তখনই মিরাজকে দেওয়া হয়নি। প্রথম আলো পুরস্কার ঘোষণার আগে কাউকে জানায় না কখনোই।
লিটন দাসের অবশ্য এমন কোনো কৌতূহল ছিল না। তাঁকে দেখে মনে হয়েছে, ক্রীড়া পুরস্কারের অনুষ্ঠানটা তিনি বেশ উপভোগই করছেন। অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে লিটনকে নিয়ে বানানো ক্যারিকেচারটা বড় পর্দায় এলে নিজের মুঠোফোন বের করে হাসতে হাসতে ভিডিও করলেন।
মিরাজ ও লিটন—দুজনই এর আগে প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কার জিতেছেন। ২০২১ সালে বর্ষসেরা রানারআপ হয়েছেন দুজনই। কাল ২০২২ সালের জন্যও বর্ষসেরা রানারআপের পুরস্কার জিতলেন এই দুজন। লিটন ২০২২ সালে ১০ টেস্ট খেলে ৪৪.৪৪ গড়ে করেছেন ঠিক ৮০০ রান, ১৩ ওয়ানডেতে ৫২.৪৫ গড়ে ৫৭৭ রান, ১৯ টি-টোয়েন্টিতে ১৪০.২০ স্ট্রাইক রেটে ৫৪৪ রান, এর মধ্যে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ২৭ বলে ৬০ রানের সেই ইনিংস। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৯৫৭ রান, যা ছিল এক ক্যালেন্ডার বছরে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। পাকিস্তানের বাবর আজমই শুধু লিটনের ওপরে ছিলেন।
২০২২ সালজুড়ে দাপট দেখিয়েছেন মিরাজও। সে বছর তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৯ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫৯ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ৬৫৭ রান করেছেন। টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটও নিয়েছেন। ওয়ানডেতে দুবার ৪ উইকেট, দুই ম্যাচেই জেতে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে ২ টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন।
আর বছরের শুরুতে ব্যাটিংয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর আফিফ হোসেনের সঙ্গে ১৭৪ রানের সেই অবিশ্বাস্য জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতায়। বছরের শেষে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে শেষ জুটিতে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৫১ রান যোগ করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে আটে নেমে শতক করেছেন, দলের জয় নিশ্চিত করেছেন।
মিরাজ এর আগে ২০১৬ সালে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন। তৃতীয়বারের মতো পুরস্কৃত হতে পেরে স্বাভাবিকভাবেই রোমাঞ্চিত মনে হলো মিরাজকে। প্রথম আলোকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বললেন, ‘আমি সব সময় বলি, এটা আমাদের জন্য দারুণ এক মঞ্চ। শুধু যে পুরস্কৃত হচ্ছি, সে জন্য নয়। আমরা অন্য খেলার অর্জনগুলোও পুরস্কৃত হতে দেখি। অন্য খেলার খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হয়। ব্যস্ততার কারণে এই যোগাযোগটা হয়ে ওঠে না। প্রথম আলো পুরস্কারের সৌজন্যে সেটা সম্ভব হয়। আর এই পরিবেশটা আমি সব সময় উপভোগ করি।’
লিটনের কাছে এই পুরস্কার অনুপ্রেরণার, ‘ভালো লাগছে। স্বাভাবিক, যেকোনো ক্রীড়াবিদ বছর শেষে যখন তার পারফরম্যান্সের জন্য পুরস্কৃত হয়, তখন খুবই ভালো লাগে। গর্বিত মনে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। গত বছরও পেয়েছিলাম। এবারও পেলাম। আশা করি, সামনেও ভালো পারফর্ম করে যেতে পারব।’
মঞ্চে পুরস্কার নেওয়ার সময় ২০২২ সালের মতো আরও একটি সাফল্যে মোড়ানো বছরের স্বপ্ন দেখিয়েছেন লিটন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে আমি সব সময় চাইব, যে রানটা করেছি, সে রানটা যেন করতে পারি বা তার চেয়েও ভালো করতে পারি। চেষ্টা সব সময় থাকে। পরিশ্রমও করছি। সব খেলাই এমন। অনেক সময় পরিশ্রম করেও ফল আসে না। তবে চেষ্টা করছি। হয়তো আগামী বছর বা এই বছর ভালো যাবে।’