বিভ্রান্ত ট্রট একটু অবাকও
জনাথন ট্রট: তুমি তো বলেছিলে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছিল বলেই নাকি উইকেট সবুজ! গরমের পরে উইকেটের সবুজ ভাবটা থাকবে না, উইকেট বদলাবে, স্পিনাররা সাহায্য পাবে...আরও কী কী। কই, কিছুই তো হচ্ছে না!
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: বলেছিলাম নাকি!
জনাথন ট্রট: আলবত বলেছিলে। অথচ আমি তো দেখছি এটা বাংলাদেশের চিরাচরিত উইকেটের মতো নয়! উইকেট থেকে পেসাররা ভালো সাহায্য পাচ্ছে।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে: হতেই পারে। জানো তো, সব কথা বিশ্বাস করতে নেই।
—এই কথোপকথনের পুরোটাই কিন্তু কাল্পনিক। তবে সে কল্পনার কিছু না কিছু ভিত্তি তো আছেই। আজ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে উইকেট প্রসঙ্গে আফগানিস্তান কোচ ট্রটের মন্তব্য আর হাথুরুসিংহের চতুর ক্রিকেট মস্তিষ্ককে কল্পনার আয়নায় ফেললে টিম হোটেলের লবি কিংবা লিফটে ওঠানামার সময় দুজনের এ রকম একটা কথোপকথন তো দাঁড়াতেই পারে। যদিও পেশাদার ক্রিকেটে কোচদের মধ্যে এ রকম আলাপ প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।
মিরপুর টেস্টের আগে থেকেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ উইকেট আলোচনার কেন্দ্রে। বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথায়ও ফুটে উঠেছিল ঘরের মাঠে একটু অন্য রকম কন্ডিশন তৈরি করে পেসারদের দেখার পরিকল্পনার কথা।
তবে সে আলোচনায় কিছুটা পানি ঢেলেছিল টেস্টের আগের দিন করা হাথুরুসিংহের একটা মন্তব্য। কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণেই উইকেট এত সবুজ...গরম পড়লে এই উইকেটই ভেঙে স্পিনারদের সাহায্য করতে শুরু করবে—স্বাগতিক কোচের এ রকম কথা সবুজ উইকেট নিয়ে চিন্তার জালে কিছুটা বিঘ্ন তো ঘটাতেই পারে।
ট্রটের ক্ষেত্রে সেটাই হয়ে থাকবে। মিরপুরের উইকেটকে যে রকম ভেবে এই দেশে এসেছিলেন, টেস্টের দুই দিন যাওয়ার পরও আফগানিস্তানের দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইংলিশ কোচের সেই ভাবনা মিলছে না। আজ দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে তো বলেই দিলেন, উইকেটের আচরণে তিনি কিছুটা বিস্মিতই, ‘একটু অবাক হয়েছি। বাংলাদেশে সাধারণত যে রকম উইকেট হয়, সে রকম নয় এটা। উইকেট স্পিন সহায়ক হবে, অসম বাউন্স থাকবে—এ রকমই তো হওয়ার কথা।’
এই সময়ের আবহাওয়াটাও ঠিক পক্ষে যাচ্ছে না আফগানদের। কাল প্রথম দিন তো প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই খেলা হয়েছে। আজ দ্বিতীয় দিনে গরম কিছুটা কম থাকলেও সেটাও অস্বস্তিকর আফগানদের জন্য। ট্রটের কথায়ও ফুটে উঠেছে সেটা, ‘কাল তো আকাশে কোনো মেঘই ছিল না। অনেক গরম ছিল। তবে আমার মনে হয় আজ সকালে আমরা খুবই ভালো বোলিং করেছি, ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছি। উইকেটও আমাদের কিছুটা সাহায্য করেছে।’
অভিষেক টেস্টের প্রথম বলেই উইকেট নেওয়ার পর প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটও নিয়েছেন পেসার নিজাত মাসুদ। ট্রটকেও তাঁর কথা আলাদা করেই বলতে হলো, ‘টেস্ট ক্রিকেটে ও রকমসংখ্যক উইকেট পেলে যে কাউকেই সেটার স্বীকৃতি দিতে হবে। সে ভালো বল করেছে, ঠিক জায়গায় বল ফেলেছে।’
১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই দলের ব্যাটিং নিয়ে হতাশ ট্রট। কিছু বাজে শট খেলাকেই এর কারণ মনে হচ্ছে তাঁর। বাজে শট খেলার কারণটাও ব্যাখ্যা করে বলেছেন কোচ, ‘খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ না খেলা এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও অনেক দিন না খেলার কারণেই এটা হয়েছে। খেলা সম্পর্কে ধারণার অভাব থেকে ওরা একটু তাড়াহুড়াও করেছে। এখানে এমনকি আমরা কোনো প্রস্তুতি ম্যাচও খেলিনি। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ খেলে সরাসরি এখানে চলে এসেছি। আবার শ্রীলঙ্কায় খেলেনি, এমন অনেকেও এখানে এসেছে।’
ট্রট অবশ্য এসবকে কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড় না করিয়ে উল্টো বাংলাদেশকেই কৃতিত্ব দিলেন দুই দিনেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ায়। এখান থেকে আফগানিস্তানের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোটা যে কঠিন, বলেছেন সেটাও।
তাহলে এই টেস্ট থেকে এখন কী পেতে পারে আফগানিস্তান? জনাথন ট্রট চান, তাঁর দল প্রতিকূলতর বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব লড়াই করুক। ভিন্ন কন্ডিশন আর আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে যতটা সম্ভব রুখে দাঁড়াক। নিজেদের দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের মেজাজটা দেখাক তাঁর খেলোয়াড়েরা।
উইকেট নিয়ে বিভ্রান্ত ট্রট তাতে যদি হাথুরুসিংহেকে একটা জবাব দিতে পারেন।