জিতলেই চ্যাম্পিয়ন। এমন ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডিকে হারাতে ২৬৮ রানের লক্ষ্য পেল আবাহনী লিমিটেড। বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে আজ সেই লক্ষ্যটা ১ বল ও ৪ উইকেট হাতে রেখে পেরিয়েছে আবাহনী। পেসার শফিকুল ইসলামের করা শেষ ওভারের পঞ্চম বলটায় বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা মেরে আবাহনীকে টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে ২৩তম লিগ শিরোপা এনে দেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। টানা ১৪তম জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন হলো আবাহনী।
শেষ তিন ওভারে ২৭ রান দরকার ছিল আবাহনীর। শেষ ওভারের আগে সেটি নেমে আসে ৬ বলে ৯ রানে। প্রথম চার বলেই ২ রান করে নিয়ে সমীকরণটাকে ২ বলে ১ রান বানিয়ে ফেলেন মোসাদ্দেক। এরপর পঞ্চম বলে সেই ছক্কা। ওই ছক্কায় ফিফটিও পুরো হয়ে যায় মোসাদ্দেকের। আবাহনী অধিনায়ক চার ছক্কায় ৫৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
মোসাদ্দেক যখন উইকেটে আসেন ৩২.৩ ওভারে আবাহনীর রান ৩ উইকেটে ১৬৩। আফিফ হোসেন-এনামুল হকের ১০৩ রানের জুটি তখন মাত্রই ভেঙেছে। ৭৯ বলে ৬৭ রান করার পর সাইফ হাসানের বলে এলবিডব্লু এনামুল। তাঁর বিদায়ের পর আফিফকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৯.৪ ওভারে ৫০ রানের জুটি মোসাদ্দেকের। ৮৮ বলে ৮৩ রান করা আফিফকে ফিরিয়েছেন তাইবুর রহমান।
আফিফ যখন ফেরেন ৪৭ বলে ৫৫ রান দরকার আবাহনীর। এরপর শেখ জামালের বোলাররা চেপে ধরেন আবাহনীকে। রান তুলতে হাঁসফাঁস করা দলটি ৪৮তম ওভারটা শুরু করে ২৭ রানের প্রয়োজন নিয়ে। ওই ওভারে শফিকুলকে একটি ছক্কা মারলেও পরের বলেই বোল্ড ১৯ বলে ২৪ রান করা নাহিদুল।
১২ বলে ২০ রান, সমীকরণ যখন এমন তরুণ পেসার রিপন মণ্ডলে করা ওভারে তানজিম হাসান ও রাকিবুল হাসানরা ১টি করে বাউন্ডারি মেরে তোলেন ৯ রান। রিপন অবশ্য ওভারের পঞ্চম বলে তানজিমকে ফিরিয়ে দেন। এরপর উইকেটে এসেই রাকিবুল থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে দেন। এরপর শেষের সেই ওভার আর মোসাদ্দেকের ব্যাটে আবাহনীর জয়।
এর আগে ৪৩তম ওভারে ৮ উইকেটে ১৮৫ রান হয়ে যাওয়া শেখ জামাল ২৬৭ করে জিয়াউর রহমানের ব্যাটিং ঝড়ে। নয়ে নামা জাতীয় দলের সাবেক এই অলরাউন্ডার ৫৮ বলে ৬ চার ও ৮ ছক্কায় করেন ৮৫ রান।
এ ছাড়া ৪৯ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। ৫৬ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় এই রান করেছেন তিনি। এরপর বল হাতে ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে সাকিব নেন ১ উইকেট। কিন্তু সেটি যথেষ্ট হয়নি আবাহনীর শিরোপা উৎসব পিছিয়ে দিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শেখ জামাল ধানমন্ডি: ৫০ ওভারে ২৬৭/৯ (জিয়া ৮৫, সাকিব ৪৯, নুরুল ৪১, সৈকত ৪১; রাকিবুল ৩/২৯, তানজিম ৩/৬২, নাহিদুল ২/৩১)।
আবাহনী: ৪৯.৫ ওভারে ২৭৬/৬ (আফিফ ৮৩, এনামুল ৬৭, মোসাদ্দেক ৫৩*; শফিকুল ২/৬০)।
ফল: আবাহনী ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন।
মোহামেডানের সান্ত্বনার জয়
পাশের মাঠে যখন আবাহনী শিরোপা-উৎসবে মেতেছে, বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে শাইনপুকুরের বিপক্ষে মোহামেডানের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতার হয়ে গেছে। আবাহনী হারলেই শুধু লিগ জয়ের ক্ষীণ আশা বেঁচে থাকত মোহামেডানের।
তবে সেই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত মোহামেডান জিতেছে ৮ রানে। জাতীয় দলের দুই খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ (৭৮ বলে ৫৮) ও মাহমুদউল্লাহর (৬৯ বলে ৫৬) ফিফটিতে ভর করে মোহামেডান অলআউট হওয়ার আগে করে ২৫৫ রান। মোহামেডানের ইনিংসে এ ছাড়া ৩৩ বলে ৪১ রান করেন আরিফুল হক।
রান তাড়ায় জয়ের আশা জাগিয়েও শাইনপুকুর ৪৯.৪ ওভারে অলআউট ২৪৭ রানে। ওপেনার খালিদ হাসান (৮৩ বলে ৪৮), অভিজ্ঞ মার্শাল আইয়ুব (৭২ বলে ৭০) ও অধিনায়ক আকবর আলীর (৬৭ বলে ৬১) সৌজন্যে ৪ উইকেটে ১৯৮ রান তুলে ফেলে শাইনপুকুর। দলটির পতনের শুরু এরপরই। ৪৯ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় দলটি। এর শেষ ৪টি আবার শেষ দুই ওভারে হারিয়েছে শাইনপুকুর। শেষ ২ ওভারে ১৬ রান দরকার ছিল দলটির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মোহামেডান: ৪৯.৫ ওভারে ২৫৫ (মিরাজ ৫৮, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, আরিফুল ৪১, ইমরুল ৩০; সানি ৩/৩৪, নাঈম ২/৪৭, রানা ২/৬৭)।
শাইনপুকুর: ৪৯.৪ ওভারে ২৪৭ (মার্শাল ৭০, আকবর ৬১, খালিদ ৪৮, ইরফান ৩৮; হায়দার ৪/৫১, মুশফিক ৩/৪৫)।
ফল: মোহামেডান ৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ।
তামিম-মুশফিকের ফিফটি, প্রাইম ব্যাংকের সহজ জয়
ফতুল্লায় দিনের সবচেয়ে গুরুত্বহীন ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া গাজী ৪১.৩ ওভারে অলআউট ১৮১ রানে। রানটা ৩১.৩ ওভারেই পেরিয়ে যায় প্রাইম ব্যাংক।
রান তাড়ায় প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ৭৪ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় করেছেন এই রান। জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ৫৫ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে গাজীর ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন আট নম্বর ব্যাটসম্যান আবদুল গাফফার। এ ছাড়া সাতে নামা মঈন খান অপরাজিত ছিলেন ৩৬ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪১.৩ ওভারে ১৮১ (গাফফার ৩৯, মঈন ৩৬*; রেজাউর ৩/৩৬, হাসান ৩/৪১, নাজমুল ২/৩২, সানজামুল ২/৩৫)।
প্রাইম ব্যাংক: ৩১.৩ ওভারে ১৮৬/৩ (তামিম ৭৬, মুশফিক ৫৯*, মিঠুন ৩১*; মঈন ১/৩২)।
ফল: প্রাইম ব্যাংক ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল।