কে কে পেয়েছেন বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার ‘গোল্ডেন স্টাম্প’
বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমট জানালেন ফিল্ডিংয়ে উন্নতির পেছনের গল্প।
ফুটবলে গোল্ডেন বুট, গোল্ডেন বলের কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু ‘গোল্ডেন স্টাম্প’–এর কথা কি কখনো শুনেছেন? বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমটের আবিষ্কার এটি। কোনো সিরিজে বাংলাদেশ দলের সেরা ফিল্ডার পান এই ‘গোল্ডেন স্টাম্প’ পুরস্কার।
সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান, সেরা বোলার কে হচ্ছেন, সেটা তো সবার জানা। কিন্তু সেরা ফিল্ডার কে হলেন, সেটি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না বললেই চলে। এ কারণেই ম্যাকডারমটের মাথায় বাংলাদেশ দলের সেরা ফিল্ডারকে স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তাটা আসে। জাতীয় দলের খেলার বিরতিতে ম্যাকডারমট এখন আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। কাল মুঠোফোনে সেখান থেকেই বললেন, ‘আমি এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেরা ফিল্ডারকে গোল্ডেন স্টাম্পে পুরস্কৃত করার নিয়ম চালু করি। হয় কি, সিরিজ শেষে সেরা বোলার, সেরা ব্যাটসম্যান নির্বাচন করা হয় কিন্তু সেরা ফিল্ডার নয়। আমরা তাই সিরিজে সেরা ফিল্ডারকে গোল্ডেন স্টাম্প পুরস্কার দিই।’
তা ‘গোল্ডেন স্টাম্প’ জিনিসটা কী? সাধারণ একটা স্টাম্পেই সোনালি রং স্প্রে করে এটি বানানো হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তা তুলে দেওয়া হয় সেরা ফিল্ডারের হাতে। কেউ একজন সেরা ফিল্ডারের স্বীকৃতি পাওয়ার পর তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয় বলেও জানালেন ম্যাকডারমট, ‘কীভাবে একজন সেরা ফিল্ডার হলো, ওই সিরিজের আগে সে কী ধরনের কাজ করেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করি। এতে করে ফিল্ডিং নিয়ে দলের মধ্যে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়। ঘটনা হলো, সাধারণত ক্যাচ পড়লেই ফিল্ডিংয়ের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভালো ফিল্ডিং করলে সেটি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না।’
এই মুহূর্তে নাজমুল হোসেনকে ধরা হয় বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারদের একজন। ম্যাকডারমট জানালেন, গোল্ডেন স্টাম্পও সবচেয়ে বেশিবার জিতেছেন নাজমুলই। তবে ফিল্ডিং কোচ হিসেবে ম্যাকডারমটের সবচেয়ে বড় তৃপ্তি পেসারদের ফিল্ডিংয়ের উন্নতি দেখে, ‘এখন পর্যন্ত শান্ত সবচেয়ে বেশি গোল্ডেন স্টাম্প জিতেছে। শান্ত–মিরাজরা নিয়মিতই জেতে। শুনে অবাক হবেন, তাসকিনও জিতেছে। এই শেষ টেস্ট সিরিজে তো শরীফুলও জিতল। এর বাইরে ফাস্ট বোলারদের উন্নতিটাও ভালো লাগছে।’
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব নেন ম্যাকডারমট। তখন বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংয়ে ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া কঠিনই ছিল। এখন বাংলাদেশ দলের ছবিটা অন্য রকম। ইংল্যান্ডকে কদিন আগেই সিরিজে হারানোর পর সাকিব আল হাসান দাবি করেছেন, এশিয়ার সেরা ফিল্ডিং দল এখন বাংলাদেশ।
এক বছরের মধ্যে দলের মধ্যে কী পরিবর্তন এসেছে, সেটি জানতে চাইলে ম্যাকডারমট বললেন, ‘আমি যখন এক বছর আগে দায়িত্ব নিই, তখন দলের মধ্যে খুব বেশি আত্মবিশ্বাস ছিল না। যদি ছোট করে বলতে হয়, বড় পরিবর্তনটা এসেছে এই আত্মবিশ্বাসেই। একটা বিষয় নিয়ে খুব কাজ করেছি, সেটা হচ্ছে বোলার বলটা ছাড়ার সময় সবাই যেন বলটা ধরার জন্য উন্মুখ থাকে। মানসিকভাবে যেন সবাই সুইচড অন থাকতে পারে। ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এই কথা খুব সহজ শোনায়, কিন্তু এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
অনুশীলনেও বেড়েছে ফিল্ডিংয়ের গুরুত্ব। ব্যাটিং–বোলিংয়ের চেয়ে ফিল্ডিংয়ে বেশি সময় দিতে দেখা যায় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের, ‘মাঠের বাইরে ফিল্ডিং নিয়ে কাজ করার সময় বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের কৃতিত্ব দিতেই হয়। ওরা এখন ব্যাটিং, বোলিংয়ের মতো ফিল্ডিংকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের ফিল্ডিং সেশনগুলো খেয়াল করে দেখবেন, অনেক সময় ব্যাটিং–বোলিংয়ের চেয়ে ফিল্ডিংয়ে বেশি সময় দেওয়া হয়।’
এ ক্ষেত্রে দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ভূমিকাও আলাদা করে উল্লেখ করলেন ম্যাকডারমট, ‘আমরা তিন সংস্করণেই সেরা ফিল্ডিং দল হতে চাই। আর এই ভিশনকে সমর্থন দিচ্ছে সাকিব-তামিমের মতো অভিজ্ঞরা, যারা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। একটা নতুন ছেলে এসে যদি দেখে যে সাকিব-তামিমরা ফিল্ডিংকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাহলে কিন্তু অর্ধেক কাজ হয়ে যায়। তখনই সে ব্যাটিং, বোলিংয়ের মতো সমান গুরুত্ব ফিল্ডিংয়েও দেবে। তখন কোচের কাজটাও সহজ হয়ে যায়।’