চট্টগ্রাম মানেই বিপিএলে বড় স্কোর। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচেই বিপিএলের রেকর্ড ছুঁয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। উইল জ্যাকসের শতকে ভর করে ২৩৯ রানের সংগ্রহ গড়া কুমিল্লা ৭৩ রানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে। হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নেন এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা মঈন আলী, ৪টি নেন এ মৌসুমে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা রিশাদ হোসেনও। বিপিএলে রেকর্ড ৫টি ক্যাচও নেন জ্যাকস। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে এমন পারফরম্যান্সের পর রংপুর রাইডার্সের আরও কাছে চলে এসেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ৮ ম্যাচ শেষে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান, পার্থক্য এখন শুধু নেট রানরেটে। অন্যদিকে তিনে থাকা চট্টগ্রাম হারল টানা দুটি ম্যাচ।
বিপিএলে এর আগে ২১১ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়া করে জেতেনি কেউ। তবে রেকর্ড রান তাড়ায় চট্টগ্রামের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। পাওয়ারপ্লেতে বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলেছিল তারা, জশ ব্রাউন ও তানজিদ হাসানের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৮০ রান। মোস্তাফিজের শর্ট বলে আপার কাট করতে গিয়ে উইল জ্যাকসের প্রথম ক্যাচে পরিণত হন তানজিদ। চট্টগ্রাম এরপর আটকেছে রিশাদ হোসেনের ঘূর্ণিতে। বিনা উইকেটে ৮০ রান থেকে ১১৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় তারা, এর মধ্যে তিনটিই নেন রিশাদ।
রিশাদ পরে ফিরে নেন শুভাগত হোমেরও উইকেট। মাঝে সৈকত আলী খেলেছিলেন ১১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। তবে সেটি যথেষ্ট হয়নি চট্টগ্রামের। কুমিল্লার জয়ে ‘আইসিং অন দ্য কেক’ হয়ে আসে মঈনের হ্যাটট্রিক। ১৭তম ওভারের প্রথম ৩ বলে শহীদুল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন ও বিলাল খানের উইকেট নিয়ে বিপিএলের অষ্টম হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তিনি।
কুমিল্লার রেকর্ড ছোঁয়া সংগ্রহ আসে মূলত তিনটি ইনিংসে ভর করে—জ্যাকসের অপরাজিত শতকের সঙ্গে লিটন দাসের ৩১ বলে ৬০ ও মঈন আলীর ২৪ বলে অপরাজিত ৫৩ রানে। তাদের ইনিংসেরও তিনটি ভাগ—লিটন ও জ্যাকসের উদ্বোধনী জুটি, মাঝে দ্রুত ৩ উইকেট হারানো, এরপর জ্যাকস ও মঈনের শেষের ঝড়।
কুমিল্লা পাওয়ারপ্লেতে তোলে ৬২ রান, অথচ নিহাদউজ্জামানের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে এসেছিল মাত্র দুটি লেগ বাই। প্রথম ৪ ওভার শেষেও কুমিল্লা তুলেছিল মাত্র ২৩ রান। পঞ্চম ওভারে আল-আমিন হোসেনের ওপর চড়াও হন জ্যাকস ও লিটন, ৩টি ছক্কা ও ২ চারে তাতে আসে ২৭ রান।
লিটন অর্ধশতক পূর্ণ করেন ২৬ বলে। অষ্টম ওভারে শহীদুল ইসলামের বলে কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ক্যাচ দিয়ে থামেন তিনি। ঠিক পরের বলেই এলবিডব্লু হন তাওহিদ হৃদয়ও। সে সময় কুমিল্লার রানের গতি ভালোই আটকায় চট্টগ্রাম। ৮-১২ ওভারের মধ্যে আসে ৩৯ রান, লিটন-হৃদয়ের পর ফেরেন ব্রুক গেস্টও।
জ্যাকস ও মঈন ঝড় তোলেন এরপর। প্রথম ২৫ বলে ৩৬ রান করা জ্যাকস অর্ধশতক পান ৩১ বলে। পরের ৫০ রান করতে তাঁর লাগে মাত্র ১৯ বল। মঈনও শুরুতে একটু সময় নেন, এরপর বাড়ান গতি। ইংলিশ অলরাউন্ডার ৫০ পূর্ণ করেন ২৩ বলে। জ্যাকস ও মঈনের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫৩ বলেই ওঠে ১২৮ রান। শেষ ৩ ওভারেই দুজন তোলেন ৫৮ রান। জ্যাকস তাঁর ইনিংসে ৫টি চারের সঙ্গে মারেন ১০টি ছক্কা, মঈন মারেন ৫টি।
কুমিল্লার ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গেছে চট্টগ্রাম পেসার আল-আমিনের ওপর দিয়ে, ৪ ওভারেই তিনি দেন ৬৯ রান। বিপিএলে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের যেটি নতুন রেকর্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ২০ ওভারে ২৩৯/৩ (লিটন ৬০, জ্যাকস ১০৮*, হৃদয় ০, গেস্ট ১০, মঈন ৫৩*; নিহাদউজ্জামান ৪-১-২৭-০, আল-আমিন ৪-০-৬৯-০, বিলাল ৪-০-৪৪-০, শহীদুল ৪-০-৪৯-২, ক্যাম্ফার ২-০২৩-০, সৈকত ২-০-২৩-১)
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৬.৩ ওভারে ১৬৬ (ব্রাউন ৩৬, তানজিদ ৪১, ব্রুস ১১, শাহাদাত ১২, সৈকত ৩৬, ক্যাম্ফার ৫, শুভাগত ১৯, শহীদুল ২, নিহাদউজ্জামান ০*, আল-আমিন ০, বিলাল ০; মঈন ৩.৩-০-২৩-৪, তানভীর ৪-০-৫৩-০, ফোর্ড ২-০-২১-০, মোস্তাফিজুর ৩-০-৪৬-২, রিশাদ ৪-০-২২-৪)
ফল: কুমিল্লা ৭৩ রানে জয়ী