বিপিএলে আমির যখন কোচের ভূমিকায়
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে ডানে এগোলেই অনুশীলনের জন্য সাজানো জায়গাটা চোখে পড়ে। ১৯০ বাই ২০০ ফিটের জায়গাটাকে নির্দিষ্ট করে বোঝাতে ‘আউটার’ বলা হয়। পাশাপাশি ১০টি উইকেট, এর মধ্যে ২টিতে অনুশীলন করছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্রিকেটাররা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নতুন আউটারে আজই প্রথম অনুশীলন করল কোনো দল।
দুটি নেটের একটিতে ব্যাটিং করছিলেন জাকির হাসান। সেখানে থ্রোয়ারের ভূমিকায় দেখা গেল দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালকে। বোলিং করছিলেন দলটির পেস বোলিং কোচ সৈয়দ রাসেল। ৩৮ বছর বয়সী এই সাবেক পেসারের সুইং সামলাতে কষ্ট হচ্ছিল জাকিরের। একটি আউটসুইংয়ে পরাস্ত হওয়ার পর জাকির নিজেই বললেন, ‘গুড বল, ভাই!’
পাশের নেটে ব্যাটিং করছিলেন সিলেটের অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। স্পিনের বিপক্ষে মুশফিকের সুইপ, রিভার্স সুইপ দেখছিলেন সবাই। একটু দূরে দাঁড়িয়ে তরুণ পেসার তানজিম হাসানের সঙ্গে কথা বলছিলেন মোহাম্মদ আমির। অভিজ্ঞ পাকিস্তানি বোলার তখন কোচের ভূমিকায়, আর তানজিম যেন বাধ্যগত ছাত্র।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বোলিংটা কেমন হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে দুজনের আলাপ হলো প্রায় মিনিট বিশেক। আমির বারবার তানজিমকে টি-টোয়েন্টিতে ফিল্ড সাজানোর গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিলেন। নিজের ফিল্ডিং নিজেকেই সাজানোর কথা বললেন, ‘ফিল্ডিং তুমি নিজেই সাজাবে। এটার ওপর তোমার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। ব্যাটসম্যান তো আর ফিল্ড সাজাবে না। এখানে সম্পূর্ণ তোমার দাপট। এরপর যদি সে ভালো খেলে, তাহলে মুখে হাসি নিয়ে বোলিং মার্কে ফিরে যাবে। ব্যাটসম্যান ভালো খেলতেই পারে।’
বোলিং মার্কে পরিষ্কার মানসিকতা থাকার বিষয়টি বারবার ঘুরেফিরে আসছিল আমিরের কথায়। ফিল্ডিং সাজানোর পর কোন ব্যাটসম্যানকে কোন বলটা করা উচিত, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে বলছিলেন তানজিমকে, ‘(মনে) সন্দেহ রাখা যাবে না। বোলিং মার্কে একদম ক্লিয়ার থাকা চাই। কোনো টেনশন নেওয়া যাবে না। টেনশন নিলেই বোলিং খারাপ হবে। আমার ভালো বলেও যদি কেউ ছক্কা মেরে দেয়, কিছু করার নেই। এটা হবেই। কিন্তু সেটা ভেবে ভেবে পরের বলটা খারাপ করা যাবে না।’
কিছুক্ষণ পর আমিরের সঙ্গেই পাশাপাশি নেটে বোলিং করতে দেখা গেল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের এ পেসারকে। ফাঁকা নেটে তানজিম ইয়র্কার অনুশীলন করছিলেন, আমির স্পট বোলিং। পরে তানজিম জানালেন, ‘নিজের বোলিংয়ে নিজে ফিল্ডিং সাজানো, পরিষ্কার ধারণা রাখা… এসব নিয়ে কথা হয়েছে আমিরের সঙ্গে। অফ কাটার আর ক্রিজ কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সেটাও দেখিয়েছে।’
আজ সিলেটের অনুশীলনে দেখা যায়নি দারুণ ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয়কে। চোটের কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে। তাঁর জায়গায় খেলতে পারেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান টম মুরস। অনুশীলনে তাঁকে লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে। সিলেটের পরের ম্যাচে তিন নম্বরে দেখা যেতে পারে এই ইংলিশ তরুণকে। এ ছাড়া প্রথম চার ম্যাচের মতো চারে জাকির ও পাঁচে মুশফিককে রাখারই পরিকল্পনা সিলেটের।
তৌহিদের পাশাপাশি ছন্দে আছেন জাকিরও। প্রতি ম্যাচেই ‘ক্যামিও’ ইনিংস খেলছেন এই বাঁহাতি। জাকিরকে অবশ্য সাহস জুগিয়েছে কদিন আগে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটি। গত ডিসেম্বরের সেই সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয় জাকিরের। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন।
সে আত্মবিশ্বাসটা বিশ ওভারের খেলায় কাজে লাগছে বলে জানালেন জাকির, ‘আমার মনে হয় দুটি টেস্ট খেলায়, ভারতের বোলারদের মুখোমুখি হওয়ায়, একটু আত্মবিশ্বাস এসেছে নিজের মধ্যে। সব মিলিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস তো ছিলই; কিন্তু ওই বোলিং আক্রমণ সামলানোর পর একটু ভালো হয়েছে।’
জাকিরের আত্মবিশ্বাসটা সিলেট দলের মধ্যেও ঢুকে গেছে। ৪ ম্যাচ খেলে সব কটিতেই জিতেছে মাশরাফির দল। রান রেটেও (+২.০৭২) যে তাদের ধারেকাছে কেউ নেই।