এবার শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত পাল্টালেন তৃতীয় আম্পায়ার, আলোচনায় সেই স্নিকোমিটার
মেলবোর্ন টেস্টে যশস্বী জয়সোয়ালকে শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদের সেই আউট দেওয়ার সিদ্ধান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। বিশ্লেষক থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা সেই ঝড় এখন অনেকটাই স্তিমিত। তবু চোখ সরেনি শরফুদ্দৌলার ওপর থেকে। আসলে সরানো যায়নি। সিডনি টেস্টে যে তিনি মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্বে। আজ অস্ট্রেলিয়ার নেওয়া রিভিউয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত পাল্টে দেন তৃতীয় আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। পাশাপাশি মেলবোর্ন টেস্টের মতো আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে স্নিকো।
শরফুদ্দৌলা মেলবোর্নে ছিলেন তৃতীয় আম্পায়ারের দায়িত্বে। সেই টেস্টের শেষ দিনে জয়সোয়ালকে মাঠের আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আউট না দিলেও তৃতীয় আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা আউট দেন। স্নিকোয় বল জয়সোয়ালের ব্যাটে কিংবা গ্লাভসে লাগার কোনো তরঙ্গ চিহ্ন ফুটে ওঠেনি। তবে বলের গতিপথ পরিবর্তিত হওয়া দেখে উইলসনের সিদ্ধান্ত পাল্টে তাঁকে আউট দেন শরফুদ্দৌলা। সিডনিতে ঘটল ঠিক তাঁর উল্টোটা। শরফুদ্দৌলা আউট দেননি। কিন্তু উইলসন সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে আউট দেন।
সেটি ৬৬তম ওভারের শেষ বলের ঘটনা। মেলবোর্ন টেস্টে অনেকটা জয়সোয়ালের সে শটের মতোই পুল করেছিলেন ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর। বোলারও এ যাত্রায় সেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সই। উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারি বল গ্লাভসবন্দী করে ক্যাচের আবেদন করলেও শরফুদ্দৌলা সাড়া দেননি। রিভিউ নেন কামিন্স। রিয়েল টাইম স্নিকোতে বল ওয়াশিংটনের গ্লাভসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছোট্ট তরঙ্গ চিহ্ন ফুটে ওঠে। আরও নিশ্চিত হতে বল গ্লাভস পেরিয়ে যাওয়ার পর গতিপথ পাল্টেছে কি না, সেটাও কয়েকবার দেখেন উইলসন। সেটা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে কয়েকবার ভিডিও রিপ্লে দেখে এবং স্নিকোয় ছোট্ট তরঙ্গ চিহ্ন দেখে উইলসন বলেন, ‘বল ও গ্লাভসের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা দেখছি না’ এবং শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্ত পাল্টে ওয়াশিংটনকে আউট ঘোষণা করেন।
তৃতীয় আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে স্নিকো প্রযুক্তি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আউটের সিদ্ধান্তে ভারতের যেসব সমর্থক সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং মাঠের আম্পায়ার ‘নট আউট’ দিয়েছিলেন বলছেন, সেসব সমর্থকদের কেউ কেউ আবার মনেও করিয়ে দিচ্ছেন—অথচ মেলবোর্নে এই শরফুদ্দৌলার ওপরই ভারতীয় নেটিজেনরা চড়াও হয়েছিল।
সে যা–ই হোক, ওয়াশিংটনকে আউট দেওয়ার সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টদের দলে একজন ইংরেজও আছেন। তিনি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। এক্সে তাঁর পোস্ট, ‘কোনো অবস্থাতেই এটা আউট নয়...খুব বাজে সিদ্ধান্ত...।’ অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি মার্ক ওয়াহর চোখে অবশ্য সেটা আউট, ‘গ্লাভসের নিচের অংশে (বল) ছুঁয়ে গেছে। ওয়াশিংটন সুন্দর টের পায়নি। তবে এমসিজির সেই (জয়সোয়াল) আউটের মতোই দৃশ্যপট। গ্লাভসটা ছুঁয়ে গেছে...ব্যাটসম্যানকে ফিরতে হবে।’ তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর ওয়াশিংটন কিছু সময় দাঁড়িয়েও ছিলেন। বুমরা মাঠের আরেক আম্পায়ার মাইকেল গফকে তপ্ত সুরে কিছু একটা বলেছেনও।
শরফুদ্দৌলার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মোট দুটি রিভিউ নেওয়া হয়েছে আজ। তাতে ১–১ ব্যবধানে ড্র করেছেন বাংলাদেশের এই আম্পায়ার।
ফিল্ডিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া দল তাঁর সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রথম রিভিউটি নেয় ভারতের ইনিংসে ১১.৫ ওভারে। শুবমান গিলকে এলবিডব্লু ও ব্যাট–প্যাডে লেগে ক্যাচের আবেদন করেছিলেন বোলার স্কট বোল্যান্ড। শরফুদ্দৌলা আবেদনে সাড়া দেননি। ভিডিও রিপ্লেতে উইলসন দেখেছেন, বল ব্যাটে লাগেনি অর্থাৎ ক্যাচ আউট হয়নি। বল ট্রাকিংয়ে দেখা গেছে, বোল্যান্ডের ডেলিভারিটি স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত অর্থাৎ এলবিডব্লও হয়নি। শরফুদ্দৌলার বিচক্ষতার সামনে হেরে অস্ট্রেলিয়ানদের সেই রিভিউটি নষ্ট হয়।
তবে ওয়াশিংটন সুন্দরের বেলায় আবার রিভিউ জিতেছে অস্ট্রেলিয়াই। সিডনিতে দিনের শেষ ভাগে শরফুদ্দৌলাকে অন্য ভূমিকায়ও দেখা গেছে— দুই পক্ষের বিরোধ ঠান্ডা করতে মোড়লের ভূমিকায়। বুমরা দিনের শেষ ওভারের পঞ্চম বল করার সময় তাঁকে থামিয়ে দেন স্ট্রাইকে থাকা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার উসমান খাজা। প্রস্তুত ছিলেন না। বুমরা তাতে অসন্তুষ্ট হন। ঠিক তখনই ভারতের অধিনায়কের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন অন্য প্রান্তের ওপেনার স্যাম কনস্টাস। দুজন একে অপরের দিকে এগিয়ে গেলে শরফুদ্দৌলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাঁদের নিজ নিজ জায়গায় ফেরত পাঠান।