মাহমুদউল্লাহকে ফিনিশারের ভূমিকাতেই দেখতে চাই
এবারের বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোতে দেখছি প্রথম ম্যাচের চেয়ে পরের ম্যাচগুলোতে উইকেট ভালো হচ্ছে। ওয়াংখেড়েতে আজ দ্বিতীয় ম্যাচ। আগের ম্যাচে প্রথম ইনিংসে উইকেট দারুণ ব্যাটিং সহায়ক ছিল, যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে পেসাররা একটু সহায়তা পেয়েছে। টস তো নিয়ন্ত্রণে নেই, তবে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলে ব্যাটিংই নেবে। আগের ম্যাচগুলোতেও তাই করেছে। বাংলাদেশও আগে ব্যাটিং করতে চাইবে। আগে ব্যাটিং করলে বাংলাদেশের একটু সম্ভাবনা আছে, পরে করলে সেটি অনেক কমে যাবে।
এ ম্যাচের একাদশ সাজানোটাই বাংলাদেশের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। সাকিব আল হাসানের ফেরা আশা জোগাবে। কিন্তু তিনি বোলিংয়ের জন্য পুরো ফিট কি না, সেটি প্রশ্ন। সে ক্ষেত্রে একজন বাড়তি বোলার নিতে হবে। তিনি সুস্থ থাকলেও ষষ্ঠ একজন বোলারকে নিলে মন্দ হবে না। সাকিব শুধু ব্যাটিং করলেও তাওহিদ হৃদয়ের জায়গায় খেলাতে বলব। আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগতে থাকা কাউকে এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দলে না রাখাই ভালো। তা ছাড়া সাকিবের অধিনায়কত্বের অভাবও দলে অনুভূত হয়েছে।
তিন পেসার ও তিন স্পিনার খেলানো হবে, নাকি একজন পেসার কমানো হবে—সে প্রশ্নটা থাকছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ডের পেসারদের বিপক্ষে অনেক সাবলীল ছিল। স্পিনাররাও যে তাদের ঝামেলায় ফেলতে পেরেছে, তা নয়। আবার বাংলাদেশের স্পিনাররা দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে কতটা স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। এমন ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে স্পিনাররা লেংথ নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
ব্যাটিংয়ে ঘাটতি কোথায়, সেটি এখন সবাই জানে। আশার কথা, দুজন ওপেনার রান করেছে। তবে ওপর থেকে কেউ যদি লম্বা ইনিংস খেলতে না পারে, মিডল অর্ডারে কেউ রান না পায়, তাহলে হবে না। লোয়ার অর্ডারের ওপর এত ভরসা করলে তো চলবে না। মাহমুদউল্লাহকে ফিনিশারের ভূমিকাতেই দেখতে চাই। আর ২০ রান করে আউট হলে চলবে না, ৫০ করেও আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে হবে না। দলের পক্ষ থেকে এগুলো ব্যাটসম্যানদের মনে করিয়ে দিতে হবে।
উইকেটের আচরণ ম্যাচের মাঝে বেশ বদলাচ্ছে। এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা এ বিশ্বকাপে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। থিতু ব্যাটসম্যানও একটা পর্যায়ে গিয়ে বাউন্ডারি পাচ্ছে না। এগুলো একটু মাথায় রাখতে হবে, বাউন্ডারি না এলেও স্ট্রাইক বদলানোর চেষ্টা করে যেতে হবে নিয়মিত। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে পাঁচ বোলারই খেলছে, ষষ্ঠ বোলার সেভাবে নেই। ফলে পরিকল্পনা করে খেলাটা তুলনামূলক সহজ। অবশ্য তারা চার পেসার খেলালে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা–অসুবিধা দুটিই আছে। এমন গতিময় বলে ফ্ল্যাশ করলেও বাউন্ডারি আসতে পারে। আবার ৬-৭ মিটার লেংথের বলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা পরীক্ষায় পড়বে। মাঝের ওভারে স্পিনারদের খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ দলকে এখানে পেসারদের টানা খেলতে হবে। মার্কো ইয়ানসেনকে তো নতুন বলে খুবই বিপজ্জনক মনে হয় আমার কাছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বড় কোনো স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে হলে আজকের ম্যাচটাই শেষ আশা। যদিও দলের বর্তমান অবস্থায় বড় স্বপ্ন দেখাটা একটু উচ্চাভিলাষীই হয়ে যায়। তাত্ত্বিক দিক দিয়ে পয়েন্ট তালিকায় হয়তো একটা মোটামুটি অবস্থানে আছে, তবে পারফরম্যান্স বা মানসিক দিক দিয়ে বোধ হয় সে অবস্থায় নেই বাংলাদেশ দল।
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক