ক্রিকেট কমেডিতে আজীবন সম্মাননা পাকিস্তানের, বর্ষসেরা ষড়যন্ত্রে ভারতের নাম
২০২৪ সাল শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর, তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে এক দিন আগেই। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের শেষ ম্যাচে টি–টোয়েন্টি খেলবে শ্রীলঙ্কা–নিউজিল্যান্ড। শেষ হতে চলা বছরটায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কম বিনোদন দেখেনি। বছরের মাঝামাঝিতে ছিল টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এর আগে–পরে মিলিয়ে হয়েছে পঞ্চাশের বেশি টেস্ট। বছরভর এত এত খেলার মধ্যে কিছু ঘটনা, কিছু রটনা ছিল মহা আলোচিত। এর মধ্যে আগে থেকে চলে আসা নাটকের ধারাবাহিকতা যেমন ছিল, তেমনি ছিল ক্রিকেটবিশ্ব তোলপাড় করে দেওয়া রটনাও। এ সবের অনেক ঘটনাতেই ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিল ‘নিধিরাম সর্দারে’র ভূমিকায়। ২০২৪ সালজুড়ে ক্রিকেটে আলোচিত হওয়া এমন উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে এনেছে ইএসপিএনক্রিকইনফো।
বর্ষসেরা যড়যন্ত্র তত্ত্ব: সূর্যর ক্যাচ যখন ছক্কা
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। শেষ ৬ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১৬ রান। উইকেটে ডেভিড মিলার। হার্দিক পান্ডিয়া প্রথম বলটিতেই দিলেন ফুলটস। পান্ডিয়ার কাছ থেকে পাওয়া উপহার কাজে লাগাতে পারেননি মিলার, বল তুলে দেন আকাশে। বাকি কাজটা করেন সূর্যকুমার যাদব। তবে ঠিকভাবে কাজটা করতে পেরেছেন কি না, তা নিয়েই যত সন্দেহ!
সূর্য ছিলেন লং অন বাউন্ডারির পাশে, বলও যায় আশপাশে। দৌড়ে জায়গামতো পৌঁছে বল হাতে নিতে নিতেই সূর্যকুমার বুঝে যান, নিজেকে মাঠের ভেতরে আটকে রাখা সম্ভব নয়। বল হাতে থাকা অবস্থায় বাউন্ডারি সীমানায় পা-ও ফেলা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় সীমানার আগে পা ফেলে বল ওপরের দিকে ছুড়ে মারেন তিনি। এরপর মাঠের বাইরে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক করে ভেতরে এসে ক্যাচ নেন। আম্পায়ার আর সূর্যের ভাষ্য এমনই।
তবে ক্যাচের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন ওঠে, ওটা ছক্কা ছিল। বল ওপরে ছুড়ে মারার সময় সূর্যকুমারের পা বাউন্ডারিতে লেগেছিল। ম্যাচটি ভারত জিতে গেলে ক্যাচ না ছক্কা বিতর্ক আরও তীব্র হয়। আইসিসি যড়যন্ত্র করে ভারতকে জিতিয়েছে—এমনটাই দাবি অনেকের। আইসিসি মানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল, সে তো জানাই আছে।
আবারও চোক: দক্ষিণ আফ্রিকা
বড় মঞ্চে হাতের নাগালে থাকা ম্যাচ ব্যাখ্যাহীন বিপর্যয়ে ফসকে ফেলা—দক্ষিণ আফ্রিকার এমন প্রবণতায় দলটির নামের সঙ্গে ‘চোক’ জুড়ে আছে অনেক দিন। সেটা বজায় থেকেছে এ বছরও। বার্বাডোজে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের জন্য ৩০ বলে ৩০ রান দরকার, হাতে ৬ উইকেট—এমন সমীকরণও মেলাতে পারেনি প্রোটিয়ারা। একই ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের দল দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও হেরেছে এ বছর।
কমেডিতে আজীবন সম্মাননা: পাকিস্তান
পাকিস্তান ক্রিকেট আর কমেডি—এই দুই বিষয়কে আলাদা করবে এমন সাধ্য কার! কখন কে কোন দায়িত্বে থাকেন, সেটা বোধ হয় পিসিবিও ভুলে যায়। পরিস্থিতিটা দেখুন আর মনে রাখার চেষ্টা করুন।
গত বছর সাকলায়েন মুশতাকের কাছ থেকে পাকিস্তানের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ট ব্র্যাডবার্ন। তিনি পদত্যাগ করেন গত ৮ জানুয়ারি। মাঝে নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টি সিরিজে টিম ডিরেক্টর ও কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকেও সরিয়ে দেয় পিসিবি। এরপর এপ্রিলে গ্যারি কারস্টেনকে সাদা বল ও গিলেস্পিকে লাল বলের কোচের দায়িত্ব দেয় পিসিবি।
কারস্টেনের অধীনে কোনো ওয়ানডে খেলতে পারেনি পাকিস্তান। দল ও অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে পিসিবির সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরায় গত ২৮ অক্টোবর পদত্যাগ করেন কারস্টেন। মাঝে এক দিন পর অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য গিলেস্পিকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনিও করেন পদত্যাগ। বর্তমানে পাকিস্তানের প্রধান কোচ আকিব জাভেদ।
মাঠের পারফরম্যান্সেও আছে পাকিস্তানসুলভ পারফরম্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বকাপে হারা পাকিস্তান ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ হেরেছে। আবার ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। এরপর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেও তাদের মাটিতে হারিয়েছে ওয়ানডে সিরিজে। এ দিকে আবার অধিনায়ক বদল নিয়ে হয়েছে নাটকের পর নাটক।
গত বছর বাবর আজমকে চাপ দিয়ে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর টি–টোয়েন্টিতে অধিনায়ক করা হয়েছিল শাহিন শাহ আফ্রিদিকে। এ বছরের মার্চে সেই শাহিনকে সরিয়ে আবার বাবরকে অধিনায়ক করা হয়।
মজার বিষয় হচ্ছে বছরের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানের অধিনায়ক কিন্তু বাবর নন, হাত ঘুরে এখন মোহাম্মদ রিজওয়ানের কাছে। এ দিকে আবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অবসর ভাঙিয়ে জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছিল মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমকে। দুজনে অবসর ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলেন এক দিন আগে–পরে। বছরের শেষ দিকে সেই দুজনই আবার একদিন আগে–পরে করে দ্বিতীয়বার অবসর নিয়েছেন।
পাকিস্তান ক্রিকেটের এ সব ধারা বহুদিন ধরে চলে আসছে বলে কমেডিতে আজীবনের সম্মাননায় অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই।
প্রশাসকদেরও প্রশাসক যিনি: জয় শাহ
বিসিসিআই সচিব নয়, জয় শাহ এখন আইসিসির চেয়ারম্যান। অবশ্য ক্রিকেটে কোন পদটা বেশি শক্তিশালী তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কারণ, কখনো কখনো আইসিসির চেয়ে বিসিসিআই–ই যে শক্তিশালীরূপে আবির্ভূত হয়।
জুনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের জয়ের পর মাঠে রোহিত শর্মাকে দিয়ে ভারতের পতাকাও পুঁতে দিয়েছিলেন এই জয় শাহ। তিনি এখন আগামী দুই বছরের জন্য আইসিসিপ্রধানের দায়িত্বে।
সেরা সিদ্ধান্তদাতা: আইসিসি
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কোথায় হবে, সেটা তো ৩ বছর আগেই ঠিক করা। তবে ২০২৫ আসর নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। আলোচনা কম হয়নি।
ভারত সরকার আয়োজক পাকিস্তানে দল পাঠাতে রাজি নয়। ব্যস, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে অচলাবস্থা। এই দেশ হুমকি দেয়, ওই দেশ আল্টিমেটাম দেয়। দুই দেশের সাবেক ক্রিকেটার ও মিডিয়ায় চলতে থাকে নানা কথা। এর মধ্যে পেরিয়ে যায় সূচি ঘোষণার ডেডলাইন। শেষ পর্যন্ত ভারত দল পাকিস্তানে যাবে না, পাকিস্তান দল ভারতে যাবে না সমঝোতায় একটা সমাধান হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান না ভারত জিতেছে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে নিঃসন্দেহে হেরেছে আইসিসি। তাদের সিদ্ধান্তের যেকোনো মূল্যই নেই!