দুটি নাটকীয় ধসের পর আয়ারল্যান্ডের হৃদয় ভেঙে সিরিজ বাংলাদেশের
ম্যাচে এক সময় পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল আয়ারল্যান্ডেরই। ৫০ বলে প্রয়োজন ৫০ রান, ক্রিজে দুই থিতু ব্যাটসম্যান। সেখান থেকেই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ, চেমসফোর্ডে আরেকটি রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের ঠিক দিকে থাকল তামিম ইকবালের দল। ২৭৫ রানের লক্ষ্যে আয়ারল্যান্ড ৫০ ওভারে আটকে গেছে ৯ উইকেটে ২৬৯ রানেই। ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে ২-০ ব্যবধানে বিশ্বকাপ সুপার লিগের শেষ সিরিজটিও জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচে গল্পটা বলা যায় দুটি নাটকীয় ধসের। প্রথমটি ছিল বাংলাদেশ ইনিংসে—১৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ভালো একটা অবস্থান থেকেও ২৭৪ রানেই আটকে যায় তারা। পরেরটির শিকার অবশ্যই আয়ারল্যান্ড—১৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে পথ হারায় তারা।
প্রথম ৫ ওভারে ১৭ রান—আয়ারল্যান্ডের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ষষ্ঠ ওভারে ভুগতে থাকা স্টিফেন ডোহেনিকে ফিরিয়ে সে চাপ আরও বাড়ান দলে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান। আয়ারল্যান্ডের শুরুর সে চাপ অনেকটাই কমিয়ে আনেন পল স্টার্লিং ও অ্যান্ডি বলবার্নির দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ব্যবহৃত উইকেটে চার পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ, একমাত্র স্পিনার মিরাজকেও দ্রুতই আনেননি তামিম। ডট বলের চাপ বাংলাদেশ বোলাররা যেমন তৈরি করেছেন, বলবার্নি-স্টার্লিং সেটির জবাবে মেরেছেন বাউন্ডারি। স্টার্লিংয়ের পর বলবার্নি—ফিফটি পান দুজনই। ১২৫ বলে ১০৯ রানের জুটির পথে আয়ারল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি শত রানের জুটির রেকর্ডও নিজেদের করে নেন দুজন।
ইবাদত হোসেন ভাঙেন সে জুটি, পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ৭৮ বলে ৫৩ রান করা বলবার্নি। প্রয়োজনীয় রান রেট বাড়ছিল, সে চাপ কমাতে মিরাজের ওপর চড়াও হতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে মৃত্যুঞ্জয়ের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন স্টার্লিং। ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান, বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকার সেটি হতে দেননি। দুজন সময় নিয়েছেন, প্রয়োজনীয় রান রেট বাড়লেও ধৈর্য ধরেছেন। ৩৭তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর কাছ থেকে আসে ২১ রান, বল ও রানের ব্যবধান তাতে কমে আসে অনেকটাই। টেক্টর ও টাকার থিতু হন, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও চলে যায় আয়ারল্যান্ডের হাতে।
বাংলাদেশের তখন দরকার বিশেষ কিছু, সেটিই করেন নাজমুল হোসেন ও লিটন দাস। প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে আসা নাজমুলকে পুল করতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে লিটনের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন টেক্টর। আয়ারল্যান্ড ইনিংসে উইকেটের বাঁধ ভাঙে যেন তাতেই, সেটি দিয়ে ঢুকে পড়েন মোস্তাফিজ। নিজের শেষ ৩ ওভারে তিনি একে একে ফেরান ক্যাম্ফার, ডকরেল ও টাকারকে। জোরের ওপর তুলে মারতে গিয়ে মিড অফে তামিমের হাতে ক্যাচ দেন ক্যাম্ফার, ডকরেল কাভারে ধরা পড়েন বদলি ফিল্ডার ইয়াসিরের হাতে। ফিফটি করা টাকার বোল্ড হন স্কুপ করতে গিয়ে।
নাজমুলকে দিয়ে ৩ ওভার করান তামিম, এ অফ স্পিনার দেন মাত্র ১০ রান। তবে হাসান মাহমুদকে শেষ ৩ ওভারের ২টি করাতে পারতেন, একটি করাতে হয় তাই মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে দিয়ে। সে ওভার মার্ক অ্যাডাইর তোলেন ১৪ রান, আয়ারল্যান্ডও আশা পায় আবার। কিন্তু শেষ ওভারে হাসান মাহমুদকে প্রথম বলে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন অ্যাডাইর, এরপর আর হাসান ফিরে তাকাননি। তাঁর স্লোয়ার আর ইয়র্কারের জবাব দিতে পারেননি ক্রেইগ ইয়াং-অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনরা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ব্যর্থ আজও। লিটনের জায়গায় তামিমের সঙ্গে নামেন অভিষিক্ত রনি তালুকদার, তবে বলের মুভমেন্টে খেই হারান তিনি। আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলেও সফল হননি, ১৪ বলের ইনিংসে একটি বাউন্ডারি মেরেই অ্যাডাইরের আউট সুইংয়ে ব্যাট চালিয়ে কট-বিহাইন্ড হন তিনি।
তবে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে তামিমের ৪৯ ও লিটন দাসের সংগে ৭০ রানের দুটি জুটিতে ভালো ভিতই পায় বাংলাদেশ। ছন্দে থাকা নাজমুলের পর লিটনও শুরুটা ভালো করেন, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। নাজমুলের ৩২ বলে ৩৫ রানের ইনিংস শেষ হয় ক্রেইগ ইয়াংয়ের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। লিটন থামেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়ে। জর্জ ডকরেলের বলে বোল্ড হওয়া তাওহিদ হৃদয় অবশ্য তেমন কিছুও করতে পারেননি।
আশা হয়ে ছিলেন তামিম। ১ রানে স্লিপে অ্যান্ডি বলবার্নির হাতে জীবন পাওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক ৯ ইনিংস পর ওয়ানডেতে ফিফটির দেখা পান। জীবন পাওয়ার পর ভালোভাবেই এগোতে থাকলেও মাঝে ছন্দপতন হয় তাঁর, ৬১ বলে ফিফটির পরও ঠিক স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না। ডকরেলের ওপর চড়াও হতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে তামিম ফেরেন ৩৪তম ওভারে।
তামিম আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের বড় স্কোরের আশা হোঁচট খায় ভালোভাবেই। সে আশা ফিরিয়ে আনেন মুশফিক ও মিরাজ। ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ বলে দুজন যোগ করেন ইনিংস-সর্বোচ্চ ৭৫ রান। ফিফটির পথে এগোচ্ছিলেন দুজনই, কিন্তু কেউই সেটি পাননি। আউটও হয়েছেন অসময়েই, শেষের আক্রমণ শুরু করার আগেই। ৪৬তম ওভারে ম্যাকব্রাইনকে স্লগ করে ছক্কা মারার পরের বলে আবার স্লগের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে এলবিডব্লু হন ৫৪ বলে ৪৫ রান করা মুশফিক। পরের ওভারে অ্যাডাইরের শিকার ৩৯ বলে ৩৭ রান করা মিরাজ। ১৩ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থামে ২৭৪ রানেই।