রোহিতের বিরুদ্ধে স্বার্থপরতার অভিযোগ সাবেক ক্রিকেটারের
স্বার্থপর!
রোহিত শর্মাকে নিয়ে আকাশ চোপড়ার বিশ্লেষণের সারকথা এটাই। ভারতের সাবেক এই ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকের মতে, মেলবোর্ন টেস্টে ভারত অধিনায়ক রোহিত দলীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। চলতি বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্ট ১৮৪ রানে হেরে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে ভারত। সিডনিতে পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরু শুক্রবার।
পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক রোহিত। অ্যাডিলেড টেস্টে ব্যাট করতে নামেন ছয়ে। ব্রিসবেনেও তা–ই। রোহিত সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ওপেনার হলেও টেস্টে সব সময় তাঁকে এ ভূমিকায় দেখা যায় না।
পার্থে ভারতের জয়ের টেস্টে লোকেশ রাহুল ও যশস্বী জয়সোয়ালের উদ্বোধনী জুটির কাছ থেকে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছে ২০১ রান। যদিও অ্যাডিলেড ও ব্রিসবেনে ওপেনিং জুটিতে সফল হতে পারেননি তাঁরা। মেলবোর্নে এসে রাহুলকে তিনে নামিয়ে ওপেন করেন রোহিত। কিন্তু সফল হতে পারেননি সিরিজে আগের দুই টেস্টের চার ইনিংসের মতোই। ৩ ও ৯ রানে আউট হন মেলবোর্ন টেস্টে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ব্রিসবেনে করেছিলেন ১০ রান, অ্যাডিলেডে ৩ ও ৬।
যে ওপেনিং জুটি অন্তত একটি ইনিংসে দারুণ করায় টেস্ট জিতেছে ভারত, মেলবোর্নে সেই জুটি ভেঙে রোহিতের ওপেন করতে নামার সমালোচনা করেছেন আকাশ চোপড়া। সিদ্ধান্তটা রোহিতের নিজের জন্য বলেই মনে করেন ভারতের হয়ে ১০ টেস্ট খেলা সাবেক এই ক্রিকেটার। এর পাশাপাশি আরেক ওপেনার শুবমান গিলকে মেলবোর্ন টেস্টে দলের বাইরে রাখা নিয়েও প্রশ্ন আকাশের।
নিজের ইউটিউব শোতে আকাশ রোহিতের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তার ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো সে নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো তার জন্য। এম এস ধোনি ও বিরাট কোহলি তাকে মিডল অর্ডার থেকে ওপরে তুলে এনেছিল। ধোনি করেছে ওয়ানডেতে, বিরাট টেস্টে। কারণ, তারা রোহিতকে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখতে চেয়েছে।’
মেলবোর্নে ওপেন করার সিদ্ধান্তটি যে রোহিতের নিজের জন্য, সেটাও বলেছেন আকাশ চোপড়া, ‘এই প্রথমবারের মতো রোহিত একটি সিদ্ধান্ত নিল এবং সেটাও তার নিজের স্বার্থে। সত্যি বলতে, এটা দলীয় স্বার্থে নেওয়া হয়নি। কারণ, রাহুল ওপেনিংয়ে খুব ভালো করছিল। শুবমান গিল ২০২৩ সালেও ভালো করেছে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিল। কঠিন পরিস্থিতিও মোকাবিলা করেছে। আর সে অ্যাডিলেডেও ভালো করেছে। কিন্তু তাকে দলের বাইরে রাখা হয়েছে। এই সবকিছু করা হয়েছে কারণ রোহিত নিজের কথা ভেবেছে, দলের কথা ভাবেনি। তার অধিনায়কত্ব ক্যারিয়ারে এই প্রথমবারের মতো ব্যাপারটায় ভালো ফল আসেনি। ভারত ড্র–ও করতে পারেনি।’
পার্থে ওপেন করতে নেমে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৭ রান করেন রাহুল। প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে আউট হন। অ্যাডিলেডে ৩৭ ও ৭ রানে আউট হন। ব্রিসবেনে ৮৪ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। অ্যাডিলেডে গিল ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫১ বলে ৩১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০ বলে ২৮ রান করেন। রোহিত নিজে রানে নেই, সে তথ্য দেওয়া হয়েছে আগেই। তবে পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দিচ্ছে, তাঁর পরিস্থিতি কতটা সঙিন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সফরকারী দলের অধিনায়কদের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড় এখন রোহিতের!
হিসাবটি করা হয়েছে অন্তত ৫ ইনিংসে ব্যাট করা অধিনায়কদের নিয়ে। চলতি সিরিজে ৩ টেস্টে ৫ ইনিংস ব্যাট করে ৬.২০ গড়ে ৩১ রান করেছেন রোহিত শর্মা। তাতে পেছনে পড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক কোর্টনি ওয়ালশ। সেই সফরে ক্যারিবিয়ান পেস কিংবদন্তির গড় ছিল ৭.৭৫। পার্থক্যটা হলো, ওয়ালশ বোলিংয়ে যতটা ভয়ংকর ছিলেন, ব্যাটিংয়ে ততটাই হাসির খোরাক। রোহিত কিন্তু সেটাও ছাপিয়ে গেছেন এবার।
সিডনি টেস্ট সামনে রেখে প্রশ্নটি তাই ওঠেই এবং আকাশ চোপড়াই তা তুলেছেন, ‘দলের স্বার্থে তিনি কি সিডনি টেস্টে বাইরে থাকবেন? আমি অবসর নেওয়ার কথা বলছি না। কিন্তু নিজেকে বসিয়ে কি বলবেন, “আমি কিছুই করতে পারছি না। রাহুল ওপেনিংয়ে যাক, শুবমান গিল তিনে নামুক আর নীতীশ ছয়ে।”এটা ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু তিনি কি সেটা করবেন?”’ রোহিত যদি এ সিদ্ধান্ত না নেন, তবে সেটা কিসের জন্য, সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আকাশ চোপড়া। এর পাশাপাশি নির্বাচক ও কোচদেরও টেনে এনেছেন সামনে।
আকাশ বলেছেন, ‘তিনি এ সিদ্ধান্ত না নিলে ক্রিকেটাররা কেন এমন করেন, সেটা বলি—সব ক্রিকেটারই বিশ্বাস করে, তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। সম্ভবত রোহিত শর্মাও তা–ই ভাবছেন। তাহলে সফরের মাঝে নির্বাচকেরা কি সিদ্ধান্ত নেবেন? গৌতম গম্ভীর এবং অজিত আগারকার—সবাই কিন্তু আপনাদের দিকেও তাকিয়ে।’