দক্ষিণ আফ্রিকার ‘হালাকু খান’–এর মার কীভাবে সামলাবেন সাকিবরা
হাইনরিখ ক্লাসেন। ক্রিকেট অঙ্গনে নামটি নতুন নয়, আবার খুব একটা পুরোনোও নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৮ সালে পা রাখা এই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন ৪টি। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা যথাক্রমে ৪৫ ও ৪১ ম্যাচের। এর মধ্যেই অবশ্য রথী-মহারথীদের নজর কাড়তে পেরেছেন।
কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার স্পিন বোলারদের বিপক্ষে ক্লাসেনের ফুটওয়ার্কের প্রশংসা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ভিলিয়ার্স তো ঘোষণার সুরেই বলেছেন—স্পিনে তাঁর দেখা অন্যতম সেরা ক্লাসেন। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসনের এতে দ্বিমত নেই। তিনি বরং ক্লাসেনে আরেকটু বেশিই মুগ্ধ। বলেছেন, এই মুহূর্তে স্পিনের বিপক্ষে তাঁকেই সেরা মনে করেন।
টেন্ডুলকার আর ডি ভিলিয়ার্স ক্লাসেনের এই প্রশংসা আগেই করেছেন। আর পিটারসেনের নজর তিনি কেড়েছেন পরশু, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৯ রানে জেতা ম্যাচে ৬৭ বলে ১০৯ রান করার পর। শুধু পিটারসেনের কাছেই নয়, ক্লাসেন এখন পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই আলোচিত এক নাম।
আলোচনা হবে নাই–বা কেন, শনিবার মুম্বাইয়ে তাঁর ব্যাটিং–ঝড়েই ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে শতক করেছেন ৬১ বলে। বিশ্বকাপে তার প্রথম ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতকটি করার পথে যে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন, সেটা দেখে পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান ও এই বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা রমিজ রাজা বলেছেন—ইংল্যান্ডের বোলারদের যেন হালাকু খানের মতো পিটিয়েছেন ক্লাসেন!
রমিজ রাজার এই ‘হাইনরিখ হালাকু ক্লাসেন খান’কে নিয়ে আলোচনা এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যেও। কারণ, বাংলাদেশের পরের পরীক্ষাটা যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই। ইংল্যান্ডকে যে মাঠে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্লাসেনরা, মুম্বাইয়ের সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই হয়তো বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে কিছুটা হলেও আশার সলতে জ্বলছে! সাকিব-মিরাজ-তাসকিন-শরীফুলদের মনেও কি উঁকি দিচ্ছে না গত বিশ্বকাপে এই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে পাওয়া জয় আর গত বছর তাদেরই মাঠ থেকে জিতে আসা সিরিজটি! হয়তো সেখান থেকে প্রেরণা খুঁজে আরেকটি...!
প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওই সব জয়ে আছে বাংলাদেশের স্পিনারদের ভূমিকা। কখনো কখনো তাসকিন-শরীফুলদের পেস বোলিংও বেগবান করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের খেলাকে। সোনালি সেই অতীত থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এবার এমন ভাবনা যদি মনে এসেও থাকে, সেটি হয়তো পরক্ষণেই আবার মিলিয়ে যাচ্ছে! কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন—কেন? এর উত্তর হতে পারে একটাই—ক্লাসেনের নাম আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর ইনিংসটি মনে পড়লে কি আর অমন ভাবনা মনে বেশিক্ষণ স্থান পেতে পারে!
সহজাতভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকা পেস বোলিং ভালো খেলে। সে ক্ষেত্রে স্পিন দিয়েই তাদের ধরাশায়ী করার কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ। তবে ফর্মের চূড়ায় থাকা ক্লাসেন তো এই স্পিনটাই খেলেন সবচেয়ে ভালো।
চলতি বছরে ওয়ানডেতে স্পিনের বিপক্ষে ক্লাসেনের গড় ৫৩ আর স্ট্রাইক রেট ১৫৭.৭৩। টি-টোয়েন্টিতে এই বছরে স্পিনের বিপক্ষে তিনি রান করেছেন ৯০.৪০ গড় আর ১৮২.৯৯ স্ট্রাইক রেটে। বোঝাই যাচ্ছে, স্পিনটা কতটা সাবলীলভাবে খেলেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। যে কারণে চলতি বছরের আইপিএলেও ক্লাসেন ছিলেন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ১৭ ইনিংসে রান করেছেন ৫১৪। গড় ৩৬.৭১, স্ট্রাইক রেট ১৬৫.৮১।
ধরে নিন এই পরিসংখ্যান দেখার পর ক্লাসেনের জন্য পরিকল্পনার বদল হবে। মানে ক্লাসেনকে সামলানোর রণকৌশল সাজানো হবে পেস দিয়ে। বিপত্তি আছে সেখানেও। এই ব্যাটসম্যান যে পেস বোলারদের বিপক্ষেও বিপক্ষে দুর্দান্ত। পেসারদের বিপক্ষে চলতি বছরে ক্লাসেন রান করেছেন ১৪২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে। স্পিনের চেয়ে পেস বোলিংয়ে স্ট্রাইক রেট একটু কমলেও পেসারদের বিপক্ষে তাঁর গড় ভালো। স্পিনের বিপক্ষে ক্লাসেনের গড় যেখানে ৫৩, সেখানে পেসারদের বিপক্ষে ৫৭.৫০।
এই ক্লাসেনকে কীভাবে সামলাবেন সাকিব আল হাসান-মেহেদি হাসান-তাসকিন আহমেদ-শরীফুলরা!