২৭ বছর ধৈর্য ধরে বিশ্বকাপে নেমেই কিপটেমির রেকর্ড
এমন গল্প প্রতিদিন তৈরি হয় না। ক্রিকেটকে ভালোবেসে একটি বিশ্বকাপ খেলার জন্য ২৭ বছর ধরে অপেক্ষা করার ধৈর্যও সবার থাকে না। যাঁর থাকে তিনিই গল্পের প্রধান নায়কে পরিণত হন।
আজ যেমন হয়েছেন উগান্ডার স্পিনার ফ্র্যাঙ্ক এনসুবুগা। এনসুবুগার ভালোবাসাটা একতরফা ছিল না। একতরফা হলে তো বিশ্বকাপ তাঁকে রেকর্ড দিয়ে বরণ করে নিত না!
পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে আজ এনসুবুগার বোলিং ফিগার ছিল এমন—৪-২-৪-২। ৪ ওভার বোলিং করে দুটি মেডেনসহ মাত্র ৪ রান দিয়েছেন এই স্পিনার। সঙ্গে তুলে নিয়েছেন দুই উইকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে যা সবচেয়ে কিপটে স্পেল (৪ ওভারের স্পেল)। এর আগে সবচেয়ে কিপটে স্পেলের রেকর্ড ছিল আনরিখ নর্কিয়ার।
এই বিশ্বকাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ওভার বোলিং করে ৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন নর্কিয়া। এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ৪ ওভার বোলিং করে ২০১৪ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ রান দিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার।
এনসুবুগা ৪ ওভার বল করে ২০টি বলই করেছেন ‘ডট’। এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি মেডেন ওভার রেকর্ড ছিল তাঁর। আজ সেটিকে আরও ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেলেন। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এনসুবুগা মেডেন দিয়েছেন ১৭টি। তালিকার দুইয়ে কেনিয়ার শেম ওবাদো এনগোচে, মেডেন নিয়েছেন ১২টি।
বিশ্বকাপের আগেই অবশ্য আরও একটি রেকর্ড গড়েছিলেন এনসুবুগা। ৪৩ বছর ২৮২ দিন বয়সী এই স্পিনারই ছিলেন এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে এনসুবুগা ছিলেন বেশি বয়সী ক্রিকেটারদের তালিকায় দ্বিতীয়। তাঁর চেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলেছেন মাত্র একজন—হংকংয়ের ৪৪ বছর ৩৪দিন বয়সী রায়ান ক্যাম্পবেল।
এনসুবুগার অভিষেক ১৯৯৭ সালে। যে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ, সেই টুর্নামেন্টেই ১৬ বছর বয়সে অভিষেক হয় তাঁর। সেই আসরে তিনি খেলেছেন পূর্ব মধ্য আফ্রিকার হয়ে।
তখন মালাওয়ি, তানজানিয়া, উগান্ডা, জাম্বিয়ার খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে এই দলটির হয়ে খেলত। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে আইসিসি সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায় উগান্ডা। সেই থেকেই মূলত এনসুবুগার উগান্ডার হয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখা।
এই স্বপ্ন অবশ্য অনেকবারই দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দিয়েছে এনসুবুগার। এই তো ৫ বছর আগে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে চতুর্থ স্তরে নেমে গিয়েছিল উগান্ডা। তবে সে ধাক্কা সামলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জিম্বাবুয়ের মতো দলকে হারিয়েই বিশ্বকাপ খেলছে উগান্ডা।
বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ার পর এনসুবুগা ২৭ বছরের অপেক্ষার শেষের কথা বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার জন্য ২৭ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বপ্ন পূরণের জন্য অপেক্ষা করছি, এখন এটা সত্যি হতে চলেছে।’ স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় নতুন রেকর্ড আর দলের জয় নিঃসন্দেহে এনসুবুগার স্বপ্ন পূরণের অধ্যায়কে আরও মধুর করেছে।
অলিম্পিকে উগান্ডার অ্যাথলেটরা ১১টি পদক জিতেছেন। এর মধ্যে চারটি সোনা। তবে দলীয় খেলায় এই দলটি সব সময়ই মুখ থুবড়ে পড়ে। সেটা ফুটবল হোক, নেটবল কিংবা রাগবি। দলীয় খেলায় ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলাই তাদের সেরা অর্জন। এখন মিলল প্রথম জয়ও। কিন্তু শেষ নয়। কিংবা এই জয়টা শুধুই একটি জয় নয়। এই জয় উগান্ডার দলীয় খেলার ইতিহাসেও সৌন্দর্যের নোলক।
উগান্ডার জন্য এই জয় যদি হয় একটি অধ্যায়ের শুরু, তবে এনসুবুগার জন্য সেটাই হয়তো শেষ অধ্যায়। আসছে আগস্টেই যে ৪৪ বছরে পা রাখবেন এই বাঁহাতি স্পিনার। বয়সের সঙ্গে আর হয়তো বেশি দিন লড়বেন না। হয়তো বিশ্বকাপে শেষেই তুলে রাখবেন দেশের জার্সি। চোখের দেখায় সেটি হয়তো দেরাজে থাকবে, কিন্তুর মনের চোখে সেটির জায়গা অন্য কোথাও।
হৃদয়ে!