ব্যথায় জর্জর ম্যাক্সওয়েল উঠে যেতে চেয়েছিলেন মাঠ থেকে

আফগানিস্তানকে গতকাল হারানোর পথে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলেন ম্যাক্সওয়েলছবি: এএফপি

এমন অবিশ্বাস্য ইনিংস না–ও দেখতে পেতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এমন ঐতিহাসিক মুহূর্ত না–ও আসতে পারত ক্রিকেট দুনিয়ায়।

মঙ্গলবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংস রীতিমতো উদযাপনের বিষয় হয়ে উঠেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। কেউই যেন ম্যাক্সওয়েলের তৈরি করা সেই ‘ঘোর’ থেকে বের হতে পারছেন না। অথচ ম্যাক্সওয়েল নিজেই বলেছেন, এমন ইনিংস হয়তো তিনি না–ও খেলতে পারতেন। পায়ে আর পিঠের মাংসপেশিতে টান লাগার পর তিনি যদি মাঠ থেকে উঠে যেতেন, তাহলে কি এমন ইনিংসের সাক্ষী হতে পারত ক্রিকেট দুনিয়া!

পায়ের ব্যথায় মাঠে বেশ কয়েকবার শুয়ে পড়েন ম্যাক্সওয়েল
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানের ২৯১ রান তাড়া করতে গিয়ে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনো দল জিততে পারে, সেটিই কাল দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সৌজন্যে ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য, অপরাজিত ২০১। মাংসপেশিতে টান লেগে চোটে জর্জর ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং করতে কষ্ট হচ্ছিল বেজায়। কিন্তু তীব্র মানসিক দৃঢ়তা দেখিয়ে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলে দলকে জিতিয়ে ফিরেছেন। তাঁর অপরাজিত ২০১ রান মাত্র ১২৮ বলে। ২১টি বাউন্ডারির পাশাপাশি মেরেছেন ১০টি ছক্কা।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জেতানোর পর
ছবি: এএফপি

জুটি বেঁধেছিলেন তিনি প্যাট কামিন্সের সঙ্গে। ২০২ রানের সেই জুটিতে কামিন্স ৬৮ বল খেলে করেছেন মাত্র ১২ রান। বাকিটা পুরোপুরি ম্যাক্সওয়েলের। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটিং আধিপত্যই কাল দেখেছে ক্রিকেট দুনিয়া।

ম্যাক্সওয়েলের এই ইনিংস আরও মাহাত্ম্য পাচ্ছে অন্য কারণেও। তিনি যে একেবারেই ব্যাটিং করার অবস্থায় ছিলেন না। তিনি দাঁড়াতেই পারছিলেন না ঠিকমতো। ব্যথায় কাতর হয়েও যে এমন ইনিংস খেলা যায়, অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার সেটিই দেখিয়েছেন। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল নাকি একপর্যায়ে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মাঠ থেকেই উঠে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

চোট নিয়েই ম্যাচজয়ী অপরাজিত ২০১ ম্যাক্সওয়েলের
ছবি: এএফপি

পায়ের সঙ্গে শরীরও নাড়াতে পারছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। কামিন্সের সঙ্গে তাঁর ২০২ রানের জুটিতে দুজন রান নেওয়ার জন্য দৌড়েছেন মাত্র ছয়বার। ম্যাক্সওয়েল নিজেও বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি কীভাবে এমন ইনিংস খেললেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে তিনি বলেছেন, ‘ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতই। আমি আমার একটা বুড়ো আঙুল নাড়াতে পারছিলাম না। সেই বুড়ো আঙুলের মাংসপেশির ব্যথা আমার হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় আমার ঊরুর মাংসপেশিতেও ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমি মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। আমার তখন দুই পা আর পিঠের মাংসপেশিতে টানা লেগেছে।’

ব্যথায় এভাবেই শুয়ে পড়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল
ছবি: এএফপি

ঠিক ওই সময়ই ম্যাক্সওয়েল মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন বলে জানিয়েছেন। অ্যাডামস জাম্পাও মাঠে নেমে বাউন্ডারি পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ম্যাক্সওয়েলের বদলে ব্যাটিংয়ে নামার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার তখন শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬০ রান, ‘হ্যাঁ, আমি উঠে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম ওই সময়। ড্রেসিংরুমে ফিরে শুশ্রূষার দরকার হয়ে পড়েছিল।’

ম্যাক্সওয়েলকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা নাকি বলেছিলেন খোদ ফিজিও নিক জোন্সই, ‘নিক জোন্স তখন বলেছে, আমি যদি মাঠ থেকে উঠে যাই, তাহলে আবার মাঠে ফেরা খুব মুশকিল হয়ে যাবে। আমার পক্ষে ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি বেয়ে আর নিচে নামা সম্ভব হবে না। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই, কষ্ট করে হলেও খেলা চালিয়ে যাওয়ার। মানে যতক্ষণ পারা যায় আরকি! কোনোমতে যতক্ষণ হাঁটতে পারছি, ব্যাটিং শেষে অন্য প্রান্তে যেতে পারছি, ততক্ষণ খেলে যেতে চেয়েছিলাম।’