আইপিএল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তারা। মুম্বাই ইন্ডিয়ানস–চেন্নাই সুপার কিংস লড়াইটা তাই কারও চোখে ত্রিকেটের ‘এল ক্লাসিকো’, আবার কারও চোখে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড–লিভারপুল দ্বৈরথের মতো। এমন লড়াই বরাবরই ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা সৃষ্টি করে। তবে এবারের ম্যাচটা হলো বড্ড একপেশে। ঠিক যেন ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনা–রিয়াল মাদ্রিদ সর্বশেষ ‘এল ক্লাসিকো’র প্রতিচ্ছবি।
মুম্বাইয়ের ডেরা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোহিত শর্মার দলকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। মুম্বাইয়ের দেওয়া ১৫৮ রানের লক্ষ্য ১১ বল বাকি রেখেই পেরিয়ে গেছে চেন্নাই। তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে চেন্নাই উঠে এল পয়েন্ট তালিকার চারে। টানা দুই হারে মুম্বাই নেমে গেল আটে। আগামী ৬ মে ফিরতি লেগে চেন্নাইয়ের মাঠ এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। সেটি হবে আইপিএল ইতিহাসের ১০০০তম ম্যাচ।
মুম্বাই–চেন্নাই ম্যাচ দিয়ে অনেকেই নিজেকে চিনিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন বড় তারকা। আজ যেমন বল হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে মারকাটারি ব্যাটিংয়ে যিনি সব আলো কেড়ে নিয়েছেন, সেই অজিঙ্কা রাহানের নাম কয়জন ভেবেছিলেন?
স্ট্রাইক রেট টি–টোয়েন্টির দাবি মেটাতে পারে না বলে ইদানীং কোনো দলেই থিতু হতে পারছিলেন না। ৪ বছরের ব্যবধানে চতুর্থ দল হিসেবে চেন্নাই হয়েছে তাঁর নতুন ঠিকানা। মঈন আলীর অসুস্থতায় দলটির হয়ে আজ অভিষেক হয়েছে তাঁর। প্রথম ম্যাচেই আস্থার প্রতিদান কী দারুণভাবেই না দিলেন রাহানে! টাইমিং, প্লেসমেন্ট আর গ্যাপ খুঁজে বের করার নিখুঁত প্রদর্শনীতে তাঁর ২৭ বলে ৬১ রানের ইনিংসটা অনেক দিন মনে রাখার কথা চেন্নাই সমর্থকদের।
আগের ১১ ম্যাচের ১০টিতেই অধিনায়কেরা টস জিতে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন। ধোনিও হেঁটেছেন সে পথে। ওয়াংখেড়ের ছোট্ট বাউন্ডারি আর রাতের শিশিরভেজা মাঠের সুবিধা সতীর্থ ব্যাটসম্যানের দিতে রোহিতকেই আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ধোনি।
দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বটা রোহিতই নিয়েছিলেন। ঈশান কিষাণকে নিয়ে ৪ ওভারেই তুলে ফেলেছিলেন ৩৮ রান। তবে চতুর্থ ওভারের শেষ বলে রোহিতকে বোল্ড করে মুম্বাইকে প্রথম ধাক্কা দেন প্রথম দুই ম্যাচে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে সুযোগ পাওয়া তুষার দেশপাণ্ডে।
রোহিত ফিরলেও পাওয়ার প্লেতে কিশান বেশ মেরেই খেলছিলেন। কিন্তু সপ্তম ওভারে কিশান জাদেজার প্রথম শিকার হতেই ছোটখাটো মড়ক লাগে মুম্বাইয়ের ইনিংসে। এরপর আর বড় কোনো জুটি গড়তে পারেনি রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
ওয়াংখেড়ের ছোট্ট বাউন্ডারিতে ১৫৮ রানের লক্ষ্য ‘মামুলিই’ হওয়ার কথা। তবে প্রথম ওভারেই ডেভন কনওয়েকে বোল্ড করে মুম্বাই সমর্থকদের মনে ক্ষণিকের বিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিলেন জেসন বেহরেনডর্ফ। রাহানে এসে নিমেষেই সেই সম্ভাবনা শেষ করে দেন। ৩ ছক্কা ও ৭ চারে সাজানো ৬১ রানের উপহার দিয়ে যখন ফিরছিলেন, চেন্নাই ততক্ষণে জয়ের রসদ পেয়ে গেছে।
এরপর শিবম দুবে আউট হলেও অভিজ্ঞ আম্বাতি রাইডুকে নিয়ে বাকিটা পথ সহজেই পাড়ি দেন ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস : ২০ ওভারে ১৫৭/৮
(কিষাণ ৩২, ডেভিড ৩১, তিলক ২২, জাদেজা ৩/২০, স্যান্টনার ২/২৮, দেশপাণ্ডে ২/৩১)
চেন্নাই সুপার কিংস : ১৮.১ ওভারে ১৫৯/৩
(রাহানে ৬১, গায়কোয়াড় ৪০, দুবে ২৮; কার্তিকেয়া ১/২৪, বেহরেনডর্ফ ১/২৪, চাওলা ১/৩৩)
ফল : চেন্নাই সুপার কিংস ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রবীন্দ্র জাদেজা।